কারখানা বন্ধ নিয়ে ‘লুকোচুরি’

একদিনে বিএটিবিসির দাম কমলো ১৩৮২ কোটি টাকা

সাঈদ শিপন
সাঈদ শিপন সাঈদ শিপন , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৫৫ পিএম, ২৭ জুলাই ২০২৫

ঢাকার কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়া ও বিক্রি কমে যাওয়ায় পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেডের (বিএটিবিসি) মুনাফায় ধস নেমেছে। এতে একদিনেই কোম্পানিটির শেয়ার দাম সম্মিলিতভাবে ১ হাজার ৩৮২ কোটি টাকার ওপরে কমে গেছে।

ঢাকার কারখানা বন্ধ হওয়ার কারণে এপ্রিল-জুন প্রান্তিকের ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ার তথ্য রোববার (২৭ জুলাই) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে জানিয়েছে বিএটিবিসি। তবে এর আগে কোম্পানিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকে ঢাকার কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে অভিযোগ উঠেছে কারখানা বন্ধের বিষয়ে বিএটিবিসি তথ্য লুকিয়েছে।

চলতি বছরের ১৪ মে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)-এর পক্ষ থেকে অবিলম্বে মহাখালীর ডিওএইচএস এলাকা থেকে বিএটিবিসি’র তামাক কারখানা অপসারণ করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়। এরপর ১৯ জুন ডিএসইর মাধ্যমে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জানায় ১ জুলাই থেকে ঢাকার মহাখালীর ডিওএইচএস এলাকায় অবস্থিত কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং নতুন ঠিকানা হবে আশুলিয়ার দেওড়া, ধামসোনা, বলিভদ্র বাজার।

তবে রোববার (২৭ জুলাই) ডিএসইর মাধ্যমে চলতি বছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকের যে আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে, সেখানে এই প্রান্তিকে মুনাফা কমার একটি কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ঢাকার কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়া। কোম্পানিটির প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী চলতি বছরের এপ্রিল-জুন সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি মুনাফা হয়েছে ১ টাকা ৮০ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয় ৯ টাকা ৪৮ পয়সা। ১৯৭৭ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর এক প্রান্তিকে এতো কম মুনাফা কোম্পানিটি আগে কখনো করেনি।

দ্বিতীয় প্রান্তিকের মুনাফায় ধস নামায় অর্ধবার্ষিক হিসেবেও কোম্পানিটির মুনাফা বড় অঙ্কে কমেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসের ব্যবসায় শেয়ার প্রতি মুনাফা হয়েছে ৭ টাকা ৬৯ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয় ১৭ টাকা ১৪ পয়সা।

জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকে কারখানা বন্ধ করা হলে এপ্রিল-জুন প্রান্তিকের ব্যবসায় কারখানা বন্ধের প্রভাব কীভাবে পড়লো জাগো নিউজের পক্ষ থেকে এর কারণ জানতে ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকোর দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জুলাই মাসে কারখানা পুরোপুরি বন্ধ করা হলেও ঢাকার কারখানা বন্ধের কার্যক্রম মে মাস থেকেই শুরু হয়।

আরও পড়ুন:
আস্থায় ‘চিড়’, বহুজাতিকের শেয়ারও ছাড়ছে বিদেশিরা 
স্টার্লিংয়ের এফডিআরের টাকা ফেরত দেয়নি ফারইস্ট ফাইন্যান্স 
পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে: ডিবিএ সভাপতি 

মে মাস থেকে কারখানা বন্ধের কার্যক্রম শুরু করলে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য হিসেবে সেই তথ্য কেন বিনিয়োগকারীদের জানানো হয়নি? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি তার উত্তর দেননি। তবে এ সময় তিনি বলেন, আপনি লিখিতভাবে প্রশ্ন পাঠান আমরা অফিসিয়ালি উত্তর দেবো।

এরপর ওই কর্মকর্তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে লিখিতভাবে প্রশ্ন পাঠানো হলে তার কিছুক্ষণ পর একটি বেসরকারি এজেন্সির রেদওয়ান নামের একজন জাগো নিউজের এই প্রতিবেদককে ফোন দিয়ে আবার প্রশ্ন চান। এরপর তাকেও একই প্রশ্ন পাঠানো হয়। প্রশ্ন পেয়ে তিনি বলেন, একটু সময় দেবেন। উত্তর বিএটির কাছ থেকে নেওয়ার চেষ্টা করছি।

তবে এক ঘণ্টার বেশি সময় পার হয়ে গেলেও তার কাছ থেকে প্রশ্নের উত্তর আসেনি। এরপর তাকে আবার ফোন দেওয়া হলে তিনি বলেন, কোম্পানির কাছ থেকে আমরা কোনো উত্তর পায়নি।

এদিকে একাধিক বিনিয়োগকারী অভিযোগ করে বলেন, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর কারখানা এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে বন্ধ করা হয়েছে, এমন কোনো তথ্য বিনিয়োগকারীদের জানানো হয়নি। কোম্পানিটি ডিএসইর মাধ্যমে যে তথ্য প্রকাশ করেছে, সেখানে বলা হয়েছে জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকে ঢাকার কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। সুতরাং এটা স্পষ্ট কারখানা বন্ধের বিষয়ে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য হিসেবে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের সঠিক তথ্য দেয়নি।

কারখানা বন্ধের বিষয়ে যেভাবে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করার কথা ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো সেইভাবে তথ্য দিয়েছে কি না? জাগো নিউজের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন রাখা হয় ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম’র কাছে। এর উত্তরে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, এটা বড় ঘটনা। তারা হয় তো প্রস্তুব ছিল না, আদালতে তারা হেরে যাবে। আদালতের রায় আসার পর ২৫ জুন তারা তথ্য জানিয়েছিল। হয় তো জিনিসগুলো আরও বিস্তারিত আসতে পারতো।

এদিকে মুনাফায় বড় ধরনের ধস নামায় রোববার কোম্পানিটির শেয়ার দামেও বড় পতন হয়েছে। ৩২১ টাকা ৮০ পয়সা থেকে শেয়ারের দাম কমে ২৯৬ টাকা ২০ পয়সায় নেমে গেছে। অর্থাৎ প্রতিটি শেয়ারের দাম কমেছে ২৫ টাকা ৬০ পয়সা বা ৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এর ফলে কোম্পানিটির শেয়ার দাম সম্মিলিতভাবে কমেছে ১ হাজার ৩৮২ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

ডানহিল, লাকি স্ট্রাইক, কেন্ট, পলমল, কুল, বেনসন এবং রথম্যান্স তামাকজাত পণ্যের উৎপাদনকারী এ প্রতিষ্ঠানটি তামাকজাত পণ্য বিক্রির দিকে থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ প্রতিষ্ঠান। বিশ্বজুড়ে দাপটের সঙ্গে ব্যবসা করা কোম্পানিটি বাংলাদেশেও দীর্ঘদিন ধরে দাপটের সঙ্গে ব্যবসা করছে।

১৯৭৭ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৫৪ কোটি। এর মধ্যে ৭২ দশমিক ৯১ শতাংশ শেয়ার উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের কাছে রয়েছে। বাকি শেয়ারের মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১৪ দশমিক ১১ শতাংশ এবং বিদেশিদের কাছে ৪ দশমিক ১৯ শতাংশ শেয়ার আছে।

এমএএস/এমআইএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।