গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা

পোশাকের বাইরে বিলিয়ন ডলার রপ্তানি সম্ভব এমন পণ্য খুঁজতে হবে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:০৭ পিএম, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫
‘রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা। ছবি: সংগৃহীত

‘দেশের রপ্তানি আয় বাড়াতে বন্দরের সমস্যা সমাধান করতে হবে। শুল্ক বাধা দূর করতে মুক্ত বাণিজ্যে জোর দিতে হবে। পোশাকের বাইরে কোন কোন পণ্যকে বিলিয়ন ডলার রপ্তানির স্তরে নেওয়া সম্ভব তা নির্ধারণ করতে হবে। নির্দিষ্ট পণ্যে ফোকাস দিয়ে রপ্তানি করতে হবে। পাশাপাশি রপ্তানি বাড়াতে কমপ্লায়েন্স শক্তিশালী করা জরুরি।’

বুধবার (১০ ডিসেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন বক্তারা।দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সহায়তায় ‘রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক এ বৈঠকের আয়োজন করে প্রথম আলো।

প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেনের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। এতে আরও অংশ নেন- বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী সদস্য নাহিয়ান রহমান, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাসান আরিফ, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রূপালী চৌধুরী, রেনাটার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ এস কায়সার কবির, দ্য হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন (এইচএসবিসি) বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) সায়েমা হক বিদিশা, চামড়াপণ্য, জুতা উৎপাদন ও রপ্তানিকারক সমিতির (এলএফএমইএবি) সহ-সভাপতি নাসির খান, বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী ও বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সামিম আহমেদ।প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) কোনো জাদুকরী সমাধান নয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বে থেকে আমার কাছে মনে হয়, এফটিএ কোনো জাদুর কাঠি নয়।

তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যখন কোথাও এফটিএ করতে যায়, তখন এটা কেবল বাণিজ্য চুক্তি নয়। এখানে অনেক ভাবতে হবে যে আমাদের বিদেশের বাজারে কি পণ্য দেওয়ার আছে। একটাই পণ্য তৈরি পোশাক। আমাদের যখন ছাড় দিতে হবে তখন ভাবতে হয়। কী ছাড় দেবো এবং এর বিপরীতে আমরা কী পাবো। বাণিজ্য চুক্তি এত সহজ নয়, এটা অনেক জটিল হিসাব। সুতরাং অনেকে এফটিএ মানে ধরে নেন, এফটিএ জাদুর কাঠি? সব সমস্যার একটাই বটিকা, এটা দিয়ে সব সমস্যার সমাধান হবে, এটা ঠিক নয়।

শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, সহজ ব্যবসা ও ব্যবসার পরিচালন ব্যয়- এ দুটি বিষয় বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। ব্যবসায় ভালো করার জন্য এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে নানা সমস্যা উঠে এসেছে। নির্দিষ্ট কিছু নীতিমালার কারণে এসব ক্ষেত্র সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যা চিহ্নিত করা প্রয়োজন। এটি চিহ্নিত হলে আমরা সমাধান করবো।

ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাসান আরিফ বলেন, দেশের বাইরে বিভিন্ন দূতাবাসে আমাদের কমার্শিয়াল উইং আছে। বিদ্যমান ব্যবস্থায় এ কমার্শিয়াল উইংগুলো কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে, তা নিয়ে একজন সাবেক কমার্শিয়াল কাউন্সিলর হিসেবে আমার নিজেরই সন্দেহ আছে। এ কারণে অন্যান্য দেশের মতো করে এসব কমার্শিয়াল উইংসহ ইপিবিকে একটি আলাদা ট্রেড প্রমোশন এজেন্সি করা সময়ের দাবি হয়ে গেছে।

শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ প্রাণ-আরএফএলের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরী বলেন, আমদানি ও আমদানি শুল্কের ওপর দেশ চলবে, দেশ আমদানিনির্ভর হবে— এটি এক ধরনের অর্থনীতি। কিন্তু আমরা যে অর্থনীতির কথা বলছি, সেটি হওয়া উচিত রপ্তানি বহুমুখীকরণের অর্থনীতি। যার চালিকাশক্তি হতে হবে রপ্তানি।

তিনি বলেন, রপ্তানি বাড়াতে নতুন পণ্য নির্ধারণ করে সেই পণ্য নিয়ে কাজ করতে হবে। বন্দরের ড্যামারেজ চার্জ ও ট্রান্সশিপমেন্ট নিয়ে কাজ করতে হবে। রপ্তানি বাড়ানো ছাড়া আমাদের কোনো বিকল্প পথ নেই।

এইচএসবিসি বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব উর রহমান বলেন, ‘পোশাকের বাইরে কোন কোন পণ্যের রপ্তানি বিলিয়ন ডলার নিতে পারি, তা ঠিক করতে হবে। ২০ বছর আগে আমাদের রপ্তানি ৯ বিলিয়ন ডলার ছিল, এখন তা ৫০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। আগেও রপ্তানির ৮০ শতাংশ ছিল পোশাক, এখনো একই চিত্র।’

বার্জার পেইন্টসের এমডি রূপালী চৌধুরী বলেন, রপ্তানির সম্ভাবনা বাড়াতে সার্টিফিকেশন ব্যবস্থা, কমপ্লায়েন্স ও লজিস্টিকস সক্ষমতা উন্নয়ন জরুরি। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করতে হলে উৎপাদন মান, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সার্টিফিকেশন ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা ছাড়া বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, কৃষিপণ্য থেকে শুরু করে শিল্পপণ্য— সব ক্ষেত্রেই প্রত্যয়ন ও পরীক্ষায় নানা অসংগতি রয়েছে। সে জন্য সরকারকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বিশেষ করে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস টেস্টিং ইনস্টিটিউটকে (বিএসটিআই) আরও শক্তিশালী, ক্যাটাগরি নির্দিষ্ট ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করতে হবে।

বাংলাদেশ ওষুধশিল্প সমিতির সহসভাপতি সৈয়দ এস কায়সার কবির বলেন, ‘দেশের উদ্যোক্তাদের ক্রিমিনাল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, সেটি বাদ দিতে হবে। উদ্যোক্তাদের স্বীকৃতি দিতে হবে।’

তিনি বলেন, পণ্য রপ্তানি করে বাড়তি ডলার পেতে হলে ডলারকে বাইরে যেতে দিতে হবে। অর্থাৎ বিদেশে বিনিয়োগ সহজ করতে হবে।’

ইএইচটি/এমএএইচ/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।