বিটিএমএর মতবিনিময়

কম দামে সুতা রপ্তানি করে ভারত আগ্রাসন চালাচ্ছে: রাজীব হায়দার

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:৩১ পিএম, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
সুতা উৎপাদন খাতের সমস্যা সমাধানে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন বিটিএমএর সাবেক পরিচালক রাজীব হায়দার/ছবি: জাগো নিউজ

বাংলাদেশে কম দামে সুতা রপ্তানির মাধ্যমে ভারত আগ্রাসন চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সাবেক পরিচালক রাজীব হায়দার।

রোববার (২৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর গুলশান ক্লাবে বিটিএমএ আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। সুতা উৎপাদন খাতে দীর্ঘদিন যাবত বিদ্যমান বহুবিধ সমস্যা ও তা থেকে উত্তরণে সরকারের করণীয় সম্পর্কে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য এ সভা হয়।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল, সাবেক সভাপতি এ মতিন চৌধুরী ও মোহাম্মদ আলী খোকনসহ অনেকে।

সুতা বাণিজ্যে পরাধীনতা চলছে উল্লেখ করে রাজীব হায়দার বলেন, ‘ওনারা বিক্রি করছেন ২ ডলার ৫০ সেন্টে (প্রতি কেজি)। ওনাদের প্রণোদনা রয়েছে। মূল্য কম হওয়ায় ওনাদের কাছ থেকে নিতে বলছেন। আর আমাদের মিলগুলো বন্ধ হতে হতে ধ্বংসের পথে চলে যাচ্ছে। এখন ধ্বংসটাই বাকি। এই যে ৫০ সেন্ট কমে উনি সুতাটা বিক্রি করলেন, লাভবান হলেন কে? আমার সুতা তো বিক্রি হলো না। উনি ৫০ সেন্ট কম দামে সুতা বিক্রি করে দিলেন। এটাকে অর্থনৈতিক আগ্রাসন না বলে আর কীভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়? এই আগ্রাসন যদি চলতে থাকে তাহলে অর্থনীতির চাকা বন্ধ হতে কিন্তু আর বেশি দেরি নেই। যে খাত (পোশাক) ৮৫ শতাংশ অবদান রাখে, তাতে এ আগ্রাসন আমি আমার শক্তি দিয়ে রুখতে পারবো না। রুখতে হলে আমার দরকার নীতি সহায়তা।’

সুতার ক্ষেত্রে ভারতীয় নির্ভরতা বাড়ছে উল্লেখ করে বিটিএমএর সাবেক পরিচালক জানান, ভারত থেকে গত অর্থবছরে প্রায় দুই বিলিয়ন ডলারের সুতা আমদানি হয়েছে। প্রতিদিন অন্তত এক হাজার ৬০০ টন সুতা এসেছে। গত এপ্রিল থেকে অক্টোবর- এই সাত মাসে ৯৫০ মিলিয়ন ডলারের সুতা আমদানি হয়েছে। আমদানিতে ১৩২ থেকে ১৩৭ শতাংশের যে প্রবৃদ্ধি ঘটেছে, তা শুধু দেশীয় উৎপাদকদের বুকে ছুরি নয়, তাদের শেষ করে দিচ্ছে।

রাজীব হায়দারের আশঙ্কা, এই আগ্রাসন মাত্র শুরু। এর পরিণতি যে কত ভয়াবহ হবে তা আজ থেকে তিন মাস পর যখন পরিসংখ্যান নেওয়া হবে তখন কতজন সুতার মিল চালাচ্ছেন, কতজন বন্ধ করে দিয়েছেন, সেটি সম্পূর্ণভাবে পরিষ্কার হয়ে যাবে।

তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, ‘কলকারখানা বন্ধ হলে বিদ্যুৎ-গ্যাস সমস্যার সমাধান অটোমেটিক্যালি হয়ে যাবে। তখন তো বিদ্যুৎ-গ্যাসের চাহিদা থাকবে না। সেদিনই বোধ হয় আসছে। কারণ মিলগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।’

দেশের বস্ত্র খাত আইসিইউতে আছে বলে অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেন বিটিএমএর সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন। তিনি বলেন, এ খাতকে আর অক্সিজেন দিয়ে বাঁচানোর সময় নেই। এটি অনেকটা আইসিইউতে চলে গেছে। একে বাঁচাতে হলে সরকারকে বিশাল বড় পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলারের খাতটিতে আইসিইউ থেকে বের করার জন্য সরকারকে অচিরেই পদক্ষেপ নিতে হবে।

বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল জানান, নানা সংকটে দেশের ৫০টি বস্ত্রকল বা টেক্সটাইল মিল বন্ধ হয়ে গেছে। নিজের একটি কটন মিল বন্ধ হয়ে গেছে উল্লেখ করে রাসেল উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে তিনি টেক্সটাইল শিল্পের মালিকহীন সভাপতি হয়ে যেতে পারেন। এ খাতকে বাঁচাতে আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সরকারের সিদ্ধান্ত চান তিনি।

ইএইচটি/একিউএফ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।