নারীর ক্ষমতায়নে স্বীকৃতি পেলেন গভর্নর


প্রকাশিত: ০৯:০১ এএম, ০৭ মার্চ ২০১৫

নারীর ক্ষমতায়নে কাজের স্বীকৃতি পেলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান। যুক্তরাজ্যের ওয়েস্ট মিডল্যান্ডসের মেরিডেন এলাকা থেকে নির্বাচিত ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্য ক্যারোলিন স্পেলম্যান ব্রিটিশ পার্লামেন্টে অনুষ্ঠিত এক বিতর্কে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প শ্রমিকদের মোবাইল ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনার সাফল্যের বিষয়টি উল্লেখ করে এ বিষয়ে উপযুক্ত নীতি-পদক্ষেপ গ্রহণ করায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানের ভূয়সী প্রশংসা করেন বলে জানা গেছে। আগামীকাল ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রাক্কালে ড. আতিউর এ বিরল কৃতিত্ব পেলেন।

আন্তর্জাতিক নারী দিবসের এবারের মূল প্রতিপাদ্য ‘মেক ইট হ্যাপেন’ এর সঙ্গে দিবসটি উদ্যাপনের প্রামাণিক সাক্ষ্য হিসেবে স্পেলম্যান বলেন, ‘যারা নারীর ক্ষমতায়নের পক্ষে কাজ করছেন তাদের কথা এখানে উল্লেখ করা শ্রেয় বলে আমি মনে করি। এ প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানের নাম উল্লেখ করতেই হয়, যিনি বাংলাদেশের পোশাক শিল্প কারখানায় নিয়োজিত নারী শ্রমিকদের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদানে উদ্যোগী ভূমিকা রেখেছেন। এ ধরনের বাস্তবমুখী উদ্যোগ সত্যিই নারীর ক্ষমতায়নে বড় ধরনের পরিবর্তন এনে দেয়।’

উল্লেখ্য যে, তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল শিল্পে কর্মরত নারীদের কষ্টার্জিত টাকা গ্রামে অবস্থিত তাদের আত্মীয়-স্বজনদের কাছে বিশ্বস্ততার সাথে নিমিষেই পৌঁছানোর ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রসারে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে ২৮টি ব্যাংককে এ সেবা চালুর অনুমোদন দিয়েছে।

এরই মধ্যে দুই কোটি ৫২ লাখ মানুষ মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব খুলে এ সৃজনশীল সেবা গ্রহণ করছে। এ খাতে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে, যারা এজেন্ট হিসেবে এ সেবা দিয়ে যাচ্ছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে দৈনিক লেনদেন গড়ে ৮ শতাংশ হারে বাড়ছে। ২০১৪ এর ডিসেম্বরে দৈনিক গড় লেনদেন ছিল ৩৪৯ কোটি টাকা, যা ২০১৫ এর জানুয়ারিতে দাঁড়িয়েছে ৩৭৮ কোটি টাকা। সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় মোবাইল ব্যাংকিং সেবা পৌঁছানোর লক্ষ্যে নীতি-পদক্ষেপ গ্রহণের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি ‘অ্যালায়েন্স ফর ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন (এএফআই)’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে।

এছাড়াও, বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন খাতে নারীর ক্ষমতায়ন উন্নয়নে নানা নীতি-উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে মূলত নারীদের অনুকূলে অর্থায়নই নারীর ক্ষমতায়ন। এজন্যে বাংলাদেশ ব্যাংক নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ সহায়তা দিতে পুনঃঅর্থায়ন তহবিল চালু রেখেছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নারীর ক্ষমতায়নে ‘ইনফো লেডি’ নামে একটি প্রকল্পে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থায়ন সুবিধা দিয়েছে।

নারীদের তথ্যপ্রযুক্তিগত সেবা দিতে ল্যাপটপ বা কম্পিউটার ক্রয়ে স্বল্পসুদে ঋণের ব্যবস্থা করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক একটি বিশেষ ঋণের আওতায় এ পর্যন্ত ১২ লাখ বর্গাচাষীকে অর্থায়ন সুবিধার আওতায় এনেছে যার ৫৫ শতাংশই নারী। নারী উদ্যোক্তাদের সহায়তায় বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি পৃথক ‘নারী উদ্যোক্তা ইউনিট’ চালু করা হয়েছে। পাশাপাশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এ ধরনের ইউনিট গঠনের জন্যে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে বিভিন্ন ক্লাস্টারের হাজার হাজার নারী উদ্যোক্তা এখন ঋণ সুবিধা পাচ্ছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্যান্য ব্যাংকের নারী কর্মীদের নিরাপত্তার জন্যে একটি জেন্ডার নীতি গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই নীতির আলোকে সকল উপযুক্ত নারী কর্মীর জন্যে ছয় মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটির ব্যবস্থা করা হয়েছে। নারী কর্মীদের শিশু সন্তানদের জন্যে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রাঙ্গণে একটি ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে।

অন্য ব্যাংকগুলোকেও গুচ্ছাকারে মিলিত হয়ে ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপনের পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই মধ্যে লন্ডনভিত্তিক ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের সহযোগী অর্থবিষয়ক সাময়িকী ‘দি ব্যাংকার’ তার মার্চ ২০১৫ সংখ্যায় জনমানুষের কলামে ‘মুভারস এন্ড শে’কারস’ শিরোনামে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করেছে। প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয় যে, সামাজিক দায়বোধ প্রণোদিত ও পরিবেশবান্ধব অর্থায়নে অগ্রণী ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ লন্ডনে অনুষ্ঠিত একটি অনুষ্ঠানে ড. আতিউর রহমানকে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের সেরা গভর্নরের পুরস্কার প্রদান করা হয়।

এদিকে বিশ্ব অর্থনীতির সক্ষমতা নিয়ে কাজ করা লন্ডনভিত্তিক আরেকটি সাময়িকী “দি ওয়ার্ল্ডফলিও” মূল কাজের সাথে কোনোরূপ আপোষ না করে সামাজিক দায়বোধ ও পরিবেশবান্ধব অর্থায়ন খাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এর অগ্রণী ভূমিকা রাখার উপর সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে সাময়িকীটি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে গরীবের অর্থনীতিবিদ হিসেবে ইতোমধ্যে অবহিত করেছে।

এসএ/বিএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।