পোল্ট্রির কেজি ১৮০ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:০৬ পিএম, ১৯ মে ২০২০

# ১০ দিনে খুচরায় কেজিতে দাম বেড়েছে ৬০ টাকা
# ফার্মে পাঁচ দিনে কেজিতে বেড়েছে ৫০ টাকা
# করোনার কারণে বাচ্চা উৎপাদন করেনি অনেক ফার্ম
# ঈদের আগে আরও বাড়ার আশঙ্কা

মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর হাজীপাড়া বৌ-বাজারে মুরগি কিনতে এসেছিলেন মধ্যবয়সী ফাতেমা বেগম। কিন্তু মুরগির দাম শুনে না কিনেই মলিন মুখে ফিরে যান হাজীপাড়ার এই বাসিন্দা। ঈদ সামনে রেখে দফায় দফায় দাম বাড়ায় পোল্ট্রি মুরগির দাম শুনে ফাতেমার মতো এখন নিম্ন আয়ের প্রত্যেক মানুষকেই এমন হতাশ হতে হচ্ছে।

গত ১০ দিনের ব্যবধানে রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে পোল্ট্রি মুরগির দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে কেজি ১৮০ টাকা ছুঁয়েছে। খুচরার পাশাপাশি ফার্মেও পোল্ট্রি মুরগির দাম বেড়েছে। কয়েক দফা দাম বেড়ে এখন ফার্মে দ্বিগুণের বেশি দামে পেল্ট্রি মুরগি বিক্রি হচ্ছে।

পোল্ট্রি মুরগির দাম শুনে হতাশা নিয়ে ফিরে যাওয়া ফাতেমা বলেন, অনেক দিন মাংস খাওয়া হয়নি। তাই একটা মুরগি কিনতে এসেছিলাম। কিন্তু ১৮০ টাকা কেজি চাচ্ছে। এত দাম দিয়ে মুরগি কেনা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। তাছাড়া কয়দিন পরেই ঈদ। কষ্ট হলেও ঈদের দিন তো একটু মাংস খেতে হবে। তাই আজ না কিনে ফিরে যাচ্ছি। ঈদের আগের দিন একটা মুরগি কিনব।

এদিকে খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দেশ করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হলে পোল্ট্রি মুরগির চাহিদা ব্যাপক হারে কমে যায়। ফলে দামও কমে। করোনার আগে ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পোল্ট্রি করোনার শুরুতে ১১০ টাকায় নেমে আসে। তবে রোজার শুরুতে কিছুটা দাম বাড়ে। এতে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হতে থাকে পোল্ট্রি মুরগি।

বেশ কিছুদিন এই দাম স্থির থাকার পর চলতি মাসের ৮ তারিখে এক লাফে পোল্ট্রির দাম কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে ১৬০ টাকা হয় যায়। এরপর ১২ মে কিছুটা দাম কমে ১৪০ টাকায় নামে। তবে ১৫ মে আবার দাম বেড়ে কেজি ১৭০ টাকায় পৌঁছে যায়। এখন তা আরও বেড়ে ১৮০ টাকা ছুঁয়েছে।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারিতে পোল্ট্রি মুরগির দাম যে হারে বাড়ছে তাতে ঈদের আগে হয়তো কেজি ২০০ টাকা হয়ে যাবে। কারণ এখন গরু ও খাসির মাংসের অনেক দাম। ফলে স্বল্প আয়ের মানুষের পক্ষে গরু ও খাসির মাংস কিনে খাওয়া সম্ভব না। ফলে ঈদের দুই-তিনদিন আগে পোল্ট্রি মুরগির চাহিদা আরও বেড়ে যাবে।

হঠাৎ পোল্ট্রি মুরগির অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কারণ হিসেবে উৎপাদকরা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের শুরুতে ব্রয়লার মুরগির চাহিদা ব্যাপক হারে কমে যায়। এতে ফার্ম মালিকরা লোকসানে কম দামে মুরগি বিক্রি করেন। যে কারণে তারা নতুন বাচ্চা উৎপাদনে যাননি। আগের যে বাচ্চা ছিল এখন সেই বাচ্চা বড় করে বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে ব্রয়লার মুরগির সরবরাহ কমেছে।

‘এছাড়া লকডাউন কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। এতে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া অনেকে ঢাকায় ফিরে এসেছেন। সেই সঙ্গে মানুষের বাইরে বের হওয়ার হার বেড়েছে এবং বাজারে কেনাকাটার পরিমাণ বেড়েছ। এতে পোল্ট্রি মুরগির চাহিদাও বেড়েছে। মূলত এ কারণেই এখন পোল্ট্রি মুরগি দাম বেড়েছে।’

মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পোল্ট্রি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, যা দুদিন আগে ছিল ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। দাম বাড়ার এই চিত্র উঠে এসেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিবেদনেও।

টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, সপ্তাহের ব্যবধানে পোল্ট্রি মুরগির দাম ৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ বেড়ে কেজি ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা হয়েছে। যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা।

যাত্রাবাড়ীর ব্যবসায়ী ঝন্টু বলেন, এখন প্রায় প্রতিদিনই পোল্ট্রি মুরগির দাম বাড়ছে। কিছুদিন আগে ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি করা পোল্ট্রি মুরগি এখন ১৭০ টাকা হয়েছে। যে হারে দাম বাড়ছে তাতে ঈদের আগে হয়তো ২০০ টাকা কেজি হয়ে যাবে।

এই ব্যবসায়ী বলেন, ঈদের দিন সবাই মাংস-ভাত খেতে চায়। ফলে ঈদের আগে মাংসের চাহিদা বেশ বেড়ে যায়। কিন্তু এখন গরুর মাংসের কেজি ৬০০ টাকা এবং খাসির মাংসের কেজি ৯০০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে এই দুর্দিনে এত দাম দিয়ে মাংস খাওয়া সম্ভব না। সুতরাং তারা পোল্ট্রি মুরগিই কিনবেন। ফলে সামনে পোল্ট্রির চাহিদা আর বেড়ে যাবে এবং দামও বাড়বে।

রামপুরায় পোল্ট্রি মুরগি ১৮০ টাকা কেজি বিক্রি করা রহিম বলেন, কম দামে বয়লার খাওয়ার দিন শেষ। এখন দিন যত যাচ্ছে, পাইকারিতে দাম তত বাড়ছে। ঈদের আগে পর্যন্ত এভাবে দাম বাড়তেই থাকবে। হয়তো ঈদের পর চাহিদা কমলে দাম কিছুটা কমতে পারে। ঈদের আগে দাম কমার সম্ভাবনা খুবই কম।

তিনি বলেন, কিছুদিন আগেও পাইকাররা জোর করে ব্রয়লার মুরগি ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতেন। কিন্তু এখন ফার্ম থেকে মুরগি কম আসছে। এ কারণে পাইকারি ব্যবসায়ীদের দেমাগ বেড়ে গেছে। দরদাম করতে গেলে কেউ কেউ বলে বসেন- যান আপনার কাছে মুরগি বিক্রি করব না, অন্য লাইন খোঁজেন।

ব্রয়লার মুরগির এমন দাম বাড়ার বিষয়ে বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মনজুর মোরশেদ খান জাগো নিউজকে বলেন, করোনার কারণে ব্রয়লার মুরগির দাম ব্যাপক হারে কমে যায়। ফার্ম থেকে লোকসানে মুরগি বিক্রি করতে হয়েছে। ফার্মে ব্রয়লার মুরগির কেজি ৬০ টাকাতেও বিক্রি করতে হয়েছে। এখন ফার্মে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা। আর বাচ্চা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা পিস, যা এক সময় ১০ টাকা নেমেছিল।

এর আগে গত ১৬ মে পোল্ট্রি ব্যবসায়ীদের এই নেতা জাগো নিউজকে জানিয়েছিলেন, ফার্মে ব্রয়লার মুরগির কেজি ৯০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছিল। তা গতকাল থেকে ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। অর্থৎ তিন দিনের ব্যবধানে ফার্মে পোল্ট্রি মুরগির দাম কেজিতে বেড়ছে ২০ টাকা। আর ১৪-১৯ মে এই পাঁচ দিনের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ৫০ টাকা।

ঈদের আগে ব্রয়লার মুরগির দাম আরও বাড়বে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তা তো বাড়বেই। এখন প্রতিদিনই কেজিতে ৫-১০ টাকা করে বাড়ছে। করোনার কারণে অনেক ফার্ম বন্ধ হয়ে গেছে। লোকসানের কারণে ফার্ম মালিকরা নতুন করে বাচ্চা তোলেনি।

এমএএস/বিএ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।