প্রাণ-এর মাধ্যমে নৌপথে খাদ্যপণ্যের প্রথম চালান গেল ভারতে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:০২ পিএম, ১৬ মার্চ ২০২১
প্রাণ গ্রুপ-এর ৪০ হাজার কার্টন লিচি ড্রিংকস নিয়ে ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে পণ্যবোঝাই জাহাজ

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে খাদ্যপণ্যের প্রথম চালান হিসেবে প্রাণ গ্রুপ-এর ৪০ হাজার কার্টন লিচি ড্রিংকস নিয়ে ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে পণ্যবোঝাই জাহাজ।

মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) দুপুর ১২টার দিকে নরসিংদীর পলাশে অবস্থিত প্রাণ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক থেকে রওয়ানা হয়েছে জাহাজটি। এটি সরাসরি কলকাতা বন্দরের টিটি শেডে গিয়ে পৌঁছাবে। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত থেকে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

পণ্যবোঝাই জাহাজটি নরসিংদীর শীতলক্ষ্যা থেকে যাত্রা শুরু করে দুপুর ১টায়। জাহাজটি নারায়ণগঞ্জ, খুলনার শেখবাড়িয়া হয়ে ভারতে প্রবেশ করবে এবং কলকাতা বন্দরে গিয়ে পৌঁছাবে। ৭১০ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে জাহাজটির গন্তব্যে পৌঁছাতে ৩-৪ দিন সময় লাগবে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সড়কপথের চেয়ে নৌপথে পণ্য পরিবহন খরচ ৩০ শতাংশ কম। সড়কপথে অনেক জায়গায় রাস্তা খারাপ হওয়ায় পণ্য নষ্ট কিংবা পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে। কিন্তু নৌপথ এক্ষেত্রে নিরাপদ। ট্রাকে পণ্য পরিবহনে একাধিকবার লোডিং ও আনলোডিংয়ের প্রয়োজন পড়ে। এতে পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু নৌপথে পণ্য পরিবহনে পণ্যের গুণগতমান ভালো থাকে।

রফতানি সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সড়কপথে পণ্য পাঠানোর জন্য অনেক ট্রাক লাগে যা ব্যবস্থা করতে রফতানিকারকদের বেশ বেগ পেতে হয়। এছাড়া ট্রাকভাড়াও বিভিন্ন সময় ওঠানামা করে। এতে খরচ বেড়ে যায়। কিন্তু নৌপথে একটি বার্জে একসঙ্গে অনেক পণ্য পাঠানো যায়। নদীপথে অবকাঠামোগত কোনো সমস্যা থাকলে তার সমাধান করে এই পথে পণ্য রফতানি করলে নিঃসন্দেহে দেশের রফতানি বাড়বে এবং উভয় দেশ এর মাধ্যমে উপকৃত হবে।jagonews24

প্রাণ গ্রুপ-এর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, প্রতিবেশী দেশ ভারতে প্রাণ গ্রুপ-এর রফতানি কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯৭ সালে। তখন পার্শ্ববর্তী রাজ্য ত্রিপুরায় যায় প্রাণ চানাচুর। সেখান থেকে এখন ভারতের ২৮টি রাজ্যের প্রতিটিতেই প্রাণ পণ্য রফতানি হচ্ছে।

তারা জানান, ১৩০ কোটি মানুষের দেশ ভারতে প্রাণ পণ্যের বিশাল বাজার রয়েছে। প্রতিবেশী দেশ হওয়ায় ভারতের আবহাওয়া, মানুষের খাদ্যাভ্যাসসহ বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশিদের সঙ্গে অনেক মিল এবং সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে দেশটিতে বাংলাদেশের খাদ্যপণ্যের ভালো করার সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ ও ভারতের সেভেন সিস্টারস খ্যাত সাত রাজ্যে বাংলাদেশে উৎপাদিত প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

গত তিন বছরে ভারতে প্রাণ পণ্য রফতানি

সাল

রফতানির পরিমাণ

২০১৮

৭৯ মিলিয়ন

২০১৯

৮৫ মিলিয়ন

২০২০

৬০ মিলিয়ন

এ বিষয়ে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ-এর পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল বলেন, প্রাণ প্রতিনিয়ত প্রতিবেশী দেশটির মানুষের চাহিদা উপযোগী পণ্য সরবরাহের চেষ্টা করে যাচ্ছে এবং দুদেশের মধ্যে থাকা কিছু প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠে রফতানির পরিমাণ বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবছর ভারতে প্রাণ-এর রফতানি গড়ে ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে। এছাড়া বিশ্বে প্রাণ-এর খাদ্যপণ্যের মোট রফতানির প্রায় ৩০ শতাংশ হয় ভারতে। এখন নদীপথ যুক্ত হওয়ায় ভারতে খাদ্যপণ্য রফতানিতে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে চলেছে।

ভারতে প্রাণ বর্তমানে দেড় শতাধিক পণ্য রফতানি করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পণ্য হলো- ফ্রুট ড্রিংকস, চিপস, স্ন্যাকস, বিস্কুট, ক্যান্ডি, সস, কেচাপ, নুডলস্, সস, জেলি ও মশলা। প্রাণ গ্রুপ গ্রুপ-এর পণ্য যায় ভারতের আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর প্রদেশ, বিহার, ত্রিপুরা, গুজরাট, পাঞ্জাব, তামিলনাড়ু ও কেরালা রাজ্যে। ভোমরা, বুড়িমারী, সুতারকান্দি, আখাউড়া ও ডাউকি স্থলবন্দর এবং চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে প্রাণ-এর এসব পণ্য রফতানি হয়।

উল্লেখ্য, করোনার কারণে ২০২০ সালে ভারতে পণ্য রফতানি তুলনামূলক কম হয়েছে। এ কারণে এ অর্থবছরে ভারতে প্রাণ-এর রফতানি কম ছিল। তবে এখন রফতানি কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়েছে।

প্রাণ গ্রুপ-এর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, ভারতে বিভিন্ন দেশের নামি-দামি ব্র্যান্ডের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে দেশটির বিখ্যাত সব চেইনশপ ও অনলাইনে স্থান করে নিচ্ছে প্রাণ-এর পণ্য, যা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। এসব সুপারশপ ও অনলাইন হলো ডি-মার্ট, স্পেন্সর রিটেইল, মোর রিটেইল, মেট্রো ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি, বিগ বাস্কেট অনলাইন, অ্যামাজন ইন্ডিয়া, গ্রোফারস ও উড়ান অনলাইন স্টোর।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে বিশ্বের ১৪৫টি দেশে প্রাণ-এর প্রায় ৫০০ ধরনের পণ্য রফতানি হচ্ছে। রফতানি বাণিজ্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ সরকারের তরফ থেকে পরপর ১৬ বার জাতীয় রফতানি ট্রফি অর্জন করেছে।

আইএইচআর/এমএইচআর/এইচএ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।