এশিয়ান পেইন্টসের গুরুত্বপূর্ণ বাজার বাংলাদেশ

ইসমাইল হোসাইন রাসেল
ইসমাইল হোসাইন রাসেল ইসমাইল হোসাইন রাসেল
প্রকাশিত: ১০:১৪ এএম, ২৯ মে ২০২৩

দেশের শীর্ষস্থানীয় পেইন্ট প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান এশিয়ান পেইন্টস বাংলাদেশ। ২০০২ সালে কনফিডেন্স সিমেন্টের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশের গ্রাহকদের জন্য শীর্ষ শ্রেণির রং উৎপাদন করতে যাত্রা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। এখন তারা গ্রাহকের সব ধরনের রঙের চাহিদা মেটাতে মেরিন ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পেইন্ট পণ্যও প্রস্তুত করছে। প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য সর্বাধিক বিভাগের সেরা পণ্য সরবরাহ করা।

এশিয়ান পেইন্টস বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ও সামনের পরিকল্পনা সম্পর্কে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেন এশিয়ান পেইন্টস গ্লোবালের রিজিওনাল হেড সিরিশ রাও। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক ইসমাইল হোসাইন রাসেল।

জাগো নিউজ: এশিয়ান পেইন্টস দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশি গ্রাহকদের সেবা দিয়ে আসছে। বাংলাদেশের বাজার নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?

সিরিশ রাও: এশিয়ান পেইন্টস বাংলাদেশের বাজারে ব্যবসায়িক পরিধির আরও বিস্তৃতি ও কোম্পানির অবস্থান শক্তিশালী করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা বাংলাদেশে আমাদের স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি প্রত্যক্ষ করেছি। মধ্যবিত্ত ভোক্তা শ্রেণির ক্রমবর্ধমান প্রসার ও অর্থনীতির ইতিবাচক চিত্র যা সম্ভব করেছে। দেশের ৬৪টি জেলায় আমরা গ্রাহকদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। তাদের চাহিদা পূরণের মাধ্যমে আমরা বেশ ভালো অবস্থানে আছি।

আরও পড়ুন>> রিটার্ন বাধ্যতামূলক করায় কমেছে ক্রেডিট কার্ড ইস্যু

‘ডেমরা, তুরাগ, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, খুলনা, বগুড়া, বরিশাল ও ময়মনসিংহে অবস্থিত ডিপোগুলোর নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আমরা গ্রাহকদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। মিরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে (বিএসএমএসএন) সম্প্রতি উদ্বোধন করা অত্যাধুনিক প্ল্যান্টটি আমাদের সরবরাহ ও উৎপাদন সক্ষমতা আরও শক্তিশালী করেছে। একই সঙ্গে ১৫০টিরও বেশি পরিবারের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) সহযোগিতার জন্য আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। গ্রাহকদের সুন্দর একটি বাসস্থানের স্বপ্ন পূরণ করতে একাগ্রতা ও অভিনব উদ্ভাবনের মাধ্যমে এই দুই দশকের সফলযাত্রা অব্যাহত রেখে আমরা শীর্ষস্থানীয় পেইন্টিং প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেড়ে উঠতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

জাগো নিউজ: বাংলাদেশে পেইন্টিং এবং গৃহসজ্জা ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান চিত্রটা কেমন?

সিরিশ রাও: সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে পেইন্ট ও গৃহসজ্জা (ডেকোর) ইন্ডাস্ট্রির উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। দ্রুত বিকশিত নির্মাণ (কনস্ট্রাকশন) খাত ও ইন্টেরিয়র ডিজাইনের প্রতি ভোক্তাদের আগ্রহও অনেক বেড়েছে। তাই উৎপাদন ও ব্যবহার দুটোই বেড়েছে পেইন্ট ইন্ডাস্ট্রিতে। এছাড়া, কিছু কিছু রিপোর্টে ডাবল ডিজিট গ্রোথ দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশকে এশিয়ান পেইন্টস গ্লোবালের জন্য প্রবৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার হিসেবেই আমি দেখি। আমরা বাংলাদেশি ভোক্তাদের জন্য মানসম্পন্ন অভিনব পণ্যের উৎপাদন এবং তাদের সুর্নিদিষ্ট সল্যুশন ও অসাধারণ গ্রাহকসেবার মাধ্যমে সন্তুষ্ট করতে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছি।

এশিয়ান পেইন্টসের গুরুত্বপূর্ণ বাজার বাংলাদেশ

জাগো নিউজ: সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন খাতে উদ্ভাবন, গবেষণা এবং উন্নয়নের ওপর বাড়তি নজর দেওয়া হচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে গ্রাহকের চাহিদা মেটাতে এশিয়ান পেইন্টস কীভাবে পদক্ষেপ নিচ্ছে?

সিরিশ রাও: অভিনব উদ্ভাবনের স্পৃহা, গ্রাহকের প্রতি একাগ্রতা ও পণ্যের মান অন্যদের চেয়ে এশিয়ান পেইন্টসকে স্বতন্ত্র করে তোলে। ‘কালার নেক্সট’র মাধ্যমে, আমরা ধারাবাহিকভাবে সৃজনশীল ও সাংস্কৃতিক আঙিনায় রং পছন্দের বিভিন্ন ‘ট্রেন্ড’ নিয়ে গবেষণা করছি। এশিয়ান পেইন্টস সর্বদা অভিনব উদ্ভাবনের মাধ্যমে গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা এমন একটি ধাপে অগ্রসর হচ্ছি- যেখানে গ্রাহকের চাহিদা সম্পর্কে আমাদের গভীর বোঝাপড়ার সঙ্গে প্রযুক্তির নিরলস অনুসন্ধানের সমন্বয় প্রয়োজন। আমরা পণ্যের মানোউন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি, যাতে পণ্যগুলো পরিবেশবান্ধব হওয়ার পাশাপাশি পণ্যের কার্যকারিতা, স্থায়িত্ব ও নান্দনিকতায় নিশ্চিত হতে পারি।

আরও পড়ুন>> ১০ বছরের মধ্যে ‘ক্যাশলেস সোসাইটি’ গড়ে তোলা সম্ভব

‘উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আমাদের পণ্য ‘আল্টিমা প্রোটেক শাইন’ ১৭০০ প্লাস শেডে দশ বছরের পারফরম্যান্স ও ওয়াটারপ্রুফিং ওয়ারেন্টি থাকে। বাড়ির সুরক্ষায় ওয়াটারপ্রুফিং সল্যুশন দিতে আমরা গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ করি। তেমনই একটি উদাহরণ হতে পারে- ‘স্মার্টকেয়ার ড্যাম্প প্রুফ ফাইবার টেক’ যেটিতে ইউরোপিয়ান ফাইবার টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়েছে। এটি শুধু ‘ড্যাম্প’ সমস্যায় ভোগা ছাদের সুরক্ষাই দিয়ে থাকে না, ‘সারফেস হিট’ কমিয়ে আনে সর্বোচ্চ ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। এছাড়া, আমরা নিরবচ্ছিন্ন গ্রাহক অভিজ্ঞতা দিতে আমাদের ডিজিটাল সেবার সক্ষমতা বাড়িয়েছি, যেমন রয়েছে- ‘সেফ ইজিপেইন্টিং সার্ভিস’, যার মধ্যেমে এশিয়ান পেইন্টসের তত্ত্বাবধানে আমাদের ডিলাররা ঝামেলামুক্ত, স্বচ্ছ ও কাঠামোগত পেইন্টিং সেবা দেয়। অভিনব উদ্ভাবনের অগ্রভাগে থাকার মাধ্যমে আমরা গ্রাহকদের প্রত্যাশা পূরণের পাশাপাশি এই শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

জাগো নিউজ: ‘কালার নেক্সট-২০২৩’ সম্পর্কে জানতে চাই। ‘কালার ট্রেন্ড’ ও ‘কালার অব দ্য ইয়ার’ উদ্যোগ থেকে গ্রাহকরা কী আশা করতে পারে?

সিরিশ রাও: রঙের ‘ট্রেন্ড’ খুঁজে পেতে ‘কালার অব দ্য ইয়ার’ একটি সূক্ষ্ম ও নিখুঁত প্রক্রিয়া, যেটিতে কোনো ধারণা বা মতামতের চেয়ে গবেষণাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই ট্রেন্ডগুলো প্রথামকিভাবে ছোট দেখালেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেশ গতি পায়। আসন্ন ট্রেন্ডগুলোর থিম এবং ধারণা শনাক্ত করতে বিশদ গবেষণা, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও সহযোগিতা নেওয়া হয়। এবছর সবিস্তরে বিশ্লেষণের পর, আমরা চারটি কালার ট্রেন্ড শনাক্ত করেছি, এগুলো হলো- গথেলিসিয়াস- যা প্রাচীন আচ্ছাদিত রঙের তীব্রতা প্রকাশ করে; শ্রুম- যা প্রাকৃতিক উপাদানের সব অপরূপ শক্তি ও দৃঢ়তার কথা মনে করিয়ে দেয়; এজ অব দ্য ফরেস্ট- যা আমাদের স্থায়িত্ব, বিস্ময় ও আশার প্রয়োজনীয়তা প্রতিফলিত করে এবং ‘ম্লিপ সেন্স’ যা স্থির অনুভূতি তৈরি করে।

আরও পড়ুন>> সাশ্রয়ী মূল্যে সেরা ওয়েস্টার্ন পোশাক দেবে ‘ঢেউ’

‘এই ট্রেন্ডের মাধ্যমে আমরা সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিষয়গুলো, যেমন কীভাবে আমরা নিজেকে প্রকাশ করি- তা থেকে শুরু করে আমাদের কল্যাণের জন্য উপলব্ধ তাগিদ এবং অন্যদের ও আমাদের চারপাশের বিশ্বের সঙ্গে গভীর সংযোগ তৈরি করে। ‘সিলভার এসক্যাপেড’ হচ্ছে ‘টাইম ট্রাভেল’ ও ‘টেকনোলজি’র রং। এটিকে ‘চাইল্ড ক্রাফট’র রং হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। বিগত কিছু বছর ধরে এক ধরনের স্থবিরতা ভর করে ছিল আমাদের ওপর, আমরা সে সময়টা পেরিয়েছি প্রত্যাশাকে সঙ্গে নিয়ে। পরবর্তীসময়ে পৃথিবী তার স্বরূপ খুঁজে পেয়েছে এবং আমরা সম্ভাবনার ছন্দে এগিয়ে চলেছি।

জাগো নিউজ: ‘কালার নেক্সট’ ইভেন্ট থেকে কীভাবে বাংলাদেশের স্থপতি ও ইন্টেরিয়র ডিজাইনাররা সমৃদ্ধ হচ্ছেন?

সিরিশ রাও: ‘কালার নেক্সট’ উদ্যোগটি বাংলাদেশের স্থপতি এবং ইন্টেরিয়র ডিজাইনার কমউনিটিকে নানাভাবে অনুপ্রাণিত ও সমৃদ্ধ করছে। এই ইভেন্টের মাধ্যমে আমরা উপমহাদেশের স্থপতি, ইন্টেরিয়র ডিজাইনার, শিল্পী, সমাজবিজ্ঞানী ও সংস্কৃতিমনা ব্যক্তিত্বদের একই আঙিনায় দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছি। বাংলাদেশে ২০২১ সালে ‘কালার নেক্সট’ উদ্যোগটি যাত্রা শুরুর পর থেকে, আমরা বাংলাদেশের আর্কিটেক্ট, ইন্টেরিয়র ডিজাইনার কমিউনিটির (এআইডি) সদস্যদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। যারা আমাদের ‘ট্রেন্ড’ বুঝতে এবং ডিজাইন ও গৃহসজ্জায় (ডেকোর) তা বাস্তবায়িত করতে সাহায্য করেছেন।

এশিয়ান পেইন্টসের গুরুত্বপূর্ণ বাজার বাংলাদেশ

‘এবছর আমাদের সঙ্গে অংশগ্রহণকারী প্রখ্যাত ব্যক্তিত্বরা হচ্ছেন- ‘ফোর ওয়ালস ইনসাইড আউটসাইড’র ওয়াহিদ আসিফ, ‘ইনসিগনিয়া স্টুডিও’র মেহেদি জামান, ‘সিনথেসিস আর্কিটেক্ট’র একেএম তানভীর হাসান নীরু। ‘কালার নেক্সট ২০২৩’ এর ‘ট্রেন্ড’ অ্যান্ড ‘ম্যাটেরিয়াল ইন্টেলিজেন্স’র বিশদ ব্যাখ্যায় অভিজ্ঞ এসব পেশাদার আমাদের আয়োজনে সম্পৃক্ত থাকার পাশাপাশি তারা তাদের বৈশ্বিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে এই সেক্টরে অগ্রণী ভূমিকা রেখে চলেছেন।

একইসঙ্গে আমরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পরিবর্তিত সাংস্কৃতিক ও সামাজিক পরিমণ্ডল শনাক্ত এবং বিশ্লেষণের মাধ্যমে ভবিষ্যতের ট্রেন্ডগুলো অনুমান করতে সাহায্য করি। ট্রেন্ডগুলো বুঝতে ‘ম্যাটেরিয়ালস’, ‘ফরমস’, ‘টেক্সচার’ এবং ‘কালারস’ নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয় এবং ‘কালার নেক্সট’ উদ্যোগটি আর্কিটেক্ট ও ইন্টেরিয়র ডিজাইনার কমিউনিটিকে দ্রুত ও সহজপাঠ্য রেফারেন্স প্রাপ্তির সুযোগ করে দেয়। এতে সৃজনশীল জগতের মানুষেরা গ্রাহকের মানবিক আবেগ, বিবর্তিত চাহিদা ও অগ্রাধিকার সম্পর্কে জানতে পারেন। এই মূল্যবান নথি বাংলাদেশের স্থপতি ও ইন্টেরিয়র ডিজাইনার তাদের ক্লায়েন্টদের চাহিদা অনুযায়ী নকশা তৈরি ও উদ্ভাবনী শিল্পপণ্যের বিকাশে সহায়তা করছে।

আইএইচআর/এএসএ/জেআইএম

এশিয়ান পেইন্টস বাংলাদেশের বাজারে ব্যবসায়িক পরিধির আরও বিস্তৃতি ও কোম্পানির অবস্থান শক্তিশালী করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা বাংলাদেশে আমাদের স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি প্রত্যক্ষ করেছি। মধ্যবিত্ত ভোক্তা শ্রেণির ক্রমবর্ধমান প্রসার ও অর্থনীতির ইতিবাচক চিত্র যা সম্ভব করেছে।

এশিয়ান পেইন্টস সর্বদা অভিনব উদ্ভাবনের মাধ্যমে গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা এমন একটি ধাপে অগ্রসর হচ্ছি- যেখানে গ্রাহকের চাহিদা সম্পর্কে আমাদের গভীর বোঝাপড়ার সঙ্গে প্রযুক্তির নিরলস অনুসন্ধানের সমন্বয় প্রয়োজন রয়েছে। আমরা পণ্যের মানোন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।