বাজেট ২০২৩-২৪
ভ্যাট দায়মুক্তি পেতে যাচ্ছে ই-কমার্স
![ভ্যাট দায়মুক্তি পেতে যাচ্ছে ই-কমার্স](https://cdn.jagonews24.com/media/imgAllNew/BG/2023March/commerce-20230531034504.jpg)
মূল্যস্ফীতি ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিতে ডেলিভারি খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনলাইনে কেনাকাটা ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। বর্তমানে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের বিক্রয়ের ওপর ৫ শতাংশ হারে মূল্য সংযোজন কর (মূসক), ডেলিভারি চার্জের ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট ও বাড়ি ভাড়ার ওপর ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রদান করতে হয়।
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি মার্কেটপ্লেস হয়ে বিক্রয়ের ওপর ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রদান করা অযৌক্তিক। কেননা পণ্যের উৎপাদন বা বিপণন তারা করেন না। শুধু অনলাইন মার্কেটপ্লেসের মাধ্যমে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সংযুক্ত করে থাকে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো।
জানা গেছে, আগামী বাজেটে ই-কমার্স খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো বিক্রয়ের ওপর আরোপিত মূল্য ভ্যাট থেকে দায়মুক্তি পেতে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: কলম-টিস্যু-খেজুর-সিগারেটের খরচ বাড়বে
অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। খাত সংশ্লিষ্টর বলছেন, এই দায়মুক্তির ফলে ই-কমার্সে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে। প্রতিষ্ঠানগুলোতেও ভর্তুকির পরিমাণ কমবে।
সূত্র জানায়, ২০২৩-২৪ বাজেটে ই-কমার্সে ও খুচরা ব্যবসার শ্রেণিবিন্যাস বা স্পেসিফিকেশন অন্তর্ভুক্ত করার একটি বিধান অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর ভ্যাট দেওয়া থেকে মুক্ত থাকবে।
অনলাইন মার্কেটপ্লেস প্রতিষ্ঠান পরিষেবা প্রদানের ওপর শুধু ভ্যাট প্রদান করবে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিজস্ব পণ্য বা সেবা বিক্রি করলে ভ্যাট প্রযোজ্য হবে।
এ বিষয়ে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ই-ক্যাবের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে ই-কমার্স সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই উদ্যোগের ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর খরচের বোঝা অনেকটাই কমবে, এছাড়া ভ্যাট অফিসের হয়রানি থেকে তারা মুক্তি পাবেন।
আরও পড়ুন: বাড়বে সংসার খরচ, আরও চাপে পড়বে স্বল্প আয়ের মানুষ
এখাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, ভ্যাটের পাশাপাশি ডেলিভারি চার্জের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার বা ১৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হলে ক্রেতারা সরাসরি উপকৃত হবে।
খাত সংশ্লিষ্টরা দীর্ঘদিন ধরে রাজস্ব বোর্ডের কাছে অনলাইন মার্কেটপ্লেস ও খুচরা ব্যবসার শ্রেণিবিন্যাসসহ এই জাতীয় বিধান অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছিলেন। অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোর শ্রেণিবিভাগের অভাব ব্যবসার জন্য বাধা সৃষ্টি করছে বলে তারা বলে আসছিলেন।
জানতে চাইলে বিডিজবসডটকমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম মাশরুর জাগো নিউজকে বলেন, প্রচলিত ব্যবসা ও অনলাইন মার্কেটপ্লেসের মধ্যে ভ্যাট বিধানের ক্ষেত্রে কোনো পার্থক্য নেই। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। ই-কমার্স কোম্পানিগুলো তাদের মার্কেটপ্লেসের মাধ্যমে বিক্রেতা ও ক্রেতাদের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করেন। কিন্তু তারা এখন ভ্যাটের দায় নিতে বাধ্য।
তিনি বলেন, সরকার যদি বাজেটে এটা সংশোধন করে তাহলে এই খাত আরও উজ্জীবিত হবে। ডেলিভারি চার্জের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট থাকায় ই-কমার্সে কেনাকাটা ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে। এটা গ্রাহকদের চাপের মধ্যে রাখছে।
বিপুল সংখ্যক ক্রেতা ঢাকার বাইরে থাকে। এক হাজার টাকার পণ্যের জন্য ১৫০-২০০ টাকা অতিরিক্ত চার্জ ব্যয় করাটা কষ্টকর। অনলাইন কেনাকাটাকে জনপ্রিয় করতে ও ডিজিটালাইজেশনে সহায়তা করতে এই ভ্যাট প্রত্যাহার বা কমিয়ে ৫ শতাংশ করা উচিত।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের প্রতিটি ডিজিটাল বিক্রয়ের ওপর ভ্যাট দিতে হয়। যদিও তারা পণ্য ও সেবা বিক্রি করছে না। রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা এসব প্রতিষ্ঠানকে কখনো কখনো তাদের আগের দুই-তিন বছরের প্রতিটি বিক্রয়ের ৬ দশমিক ৩ ভ্যাট চালান দেখাতে চেয়ে ভোগান্তিতে ফেলেন। এই বিধান ডিজিটাল ব্যবসায় বাধা সৃষ্টি করে। ডিজিটাল মার্কেটপ্লেসগুলোতে বিক্রি কমায় ও বিনিয়োগকে সংকুচিত করে।
জানতে চাইলে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান পিকাবুর কো ফাউন্ডার ও সিইও মরিন তালুকদার জাগো নিউজকে বলেন, ম্যানুফ্যাকচারার কাছে চলে গেলে কয়েকটি জিনিস দেখতে হবে। তারা আমাদের ভ্যাট চালানসহ ইনভয়েসিং করছে কি না সেটা আমাদের দেখতে হবে। এটা আমাদের জন্য একটা অ্যাডভান্টেজ। এর ফলে লোকাল মার্কেটের সঙ্গে আমাদের প্রাইসিংটা অনেকেটা সমান হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, এই ভ্যাটটা আমরা এতদিন কাস্টমারের ওপর চার্জ করতাম না। আমরাই সাবসিডি করতাম। এটা মার্জিনটাকে ন্যারো করে দিতো। ডেলিভারিতে ও ডিস্ট্রিবিউশনের ওপর যে ভ্যাট আছে এটা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জের। এই খাতকে বড় হতে দিতে হবে, আমাদের আরেকটু সাপোর্ট লাগবে।
অন্যদিকে পর্যটন শিল্পের বিকাশে এক যুগ ধরে হোটেল, মোটেল নির্মাণে ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় উপকরণ আমদানিতে থাকা বড় ধরনের শুল্ক ছাড় সুবিধা তুলে নিতে যাচ্ছে সরকার। আগামী বাজেটে এই সুবিধা তুলে দিয়ে আগের হারে শুল্ক আরোপ করা হতে পারে।
রাজস্ব বোর্ডের জারিকৃত এসআরওর মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত বিলাসবহুল ও মানসম্পন্ন আবাসিক হোটেল নির্মাণের ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: বরাদ্দ কমছে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচিতে
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা প্রায় ১০ বছর এই সুবিধা পেয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন এইচএস কোডের অধীনে বিভিন্ন আমদানি উপকরণের ওপর আগের মতো ১১০ শতাংশ পর্যন্ত আমদানি শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছে এনবিআর।
এর আগে আবাসিক হোটেল নির্মাণে ব্যবহৃত আমদানি করা সুনির্দিষ্ট পণ্যে শুল্ক রেয়াতি সুবিধা দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। পণ্যগুলোর মধ্যে ছিল হোটেলের ভেতরে সাজসজ্জা বা ইনটেরিয়র ডেকোরেশন সরঞ্জামাদি। রান্না-বান্না সামগ্রী, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র, লাইটিং, ইলেকট্রনিক্সসহ অন্তত ৪০টি পণ্য।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজস্ব বোর্ডের এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই সুবিধা বলবৎ ছিল। এখাত যথেষ্ট বিকশিত হয়েছে। সরকারি নীতি-সহায়তা ছাড়াই এখাতের উদ্যোক্তারা এগিয়ে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন খাতে রেয়াতি সুবিধা ছাড় উঠিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপ রয়েছে। এছাড়া বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়ানো ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। কোনো খাতে দীর্ঘদিন ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
যদিও শুল্ক সুবিধা উঠিয়ে নেওয়ার ফলে খুব বেশি রাজস্ব আদায়ের সুযোগ নেই বলে মনে করেন বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন।
জাগো নিউজকে তিনি বলেন, অনেক খাতেই কর সুবিধা বন্ধ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। মানসম্মত হোটেল বিলাসিতার মধ্যেই পড়ে। তবে এতে খুব বেশি রাজস্ব আদায় হবে বলে মনে হয় না।
এসএম/এমএসএম