টিভি ক্লাসে ‘অমনোযোগী’ হচ্ছে খুদে শিক্ষার্থীরা
সংসদ টেলিভিশনে সম্প্রচারিত শ্রেণি ক্লাস থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ক্রটিপূর্ণ, জটিল, পুনঃপ্রচারে ভরপুর এবং বাস্তবভিত্তিক না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা এসব ক্লাস থেকে অমনোযোগী হয়ে পড়ছে। তবে দুর্যোগকালীন সময়ে নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে এসব সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে বলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) থেকে জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমধান করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছে ডিপিই।
জানা গেছে, করোনাভাইরাসের প্রকোপ এড়াতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। পরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য সংসদ টেলিভিশনে শ্রেণি ক্লাস সম্প্রচারের উদ্যোগ নেয় ডিপিই। তার আলোকে ‘ঘরে বসে শিখি’ শিরোনামে এ কার্যক্রম গত ৭ এপ্রিল দুপুর ২টা থেকে শুরু হয়। প্রতি সপ্তাহে ক্লাস সম্প্রচারের নতুন রুটিন প্রকাশ করছে ডিপিই।
দেখা গেছে, শুরুতে দুপুর ২টা থেকে প্রাথমিকের ক্লাস প্রচার শুরু হলেও পরে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১১টা পর্যন্ত প্রাথমিকের ক্লাস প্রচার শুরু হয়। এতে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্রিয়াকলাপ ভিত্তিক আনন্দনদায়ক শিখন, বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ের ক্লাস সম্প্রচারিত হচ্ছে। প্রতিটি ক্লাসের সময় ২০ মিনিট।
একাধিক অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, প্রাথমিকের সম্প্রচারিত ক্লাসে নানা ধরনের ক্রটিপূর্ণ ও ভুল তথ্য দেয়া হচ্ছে। এমনকি সহজ যোগ-বিযোগের সমাধান করতে শিক্ষকরা ভুল করছেন। প্রাক-প্রাথমিক, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির ছোট বাচ্চাদের ইংরেজি ক্লাসগুলোতে শিক্ষকরা বাংলাতে না বুঝিয়ে ইংরেজিতে ক্লাস নিচ্ছে। এ কারণে কোমলমতি শিশুরা এসব ক্লাস বুঝতে পারছে না।
অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীরা জানান, টিভির অনেক ক্লাসের সঙ্গে বইয়ের অধ্যায়ের মিল নেই। প্রতিদিন একাধিক ক্লাস পুনঃপ্রচার করা হচ্ছে বলে একই বিষয়ে বাচ্চারা বারবার পড়তে চায় না। শিক্ষকরা দরদ দিয়ে ক্লাস করান না। শিক্ষকদের দৃষ্টি শিক্ষার্থীদের দিকে না থাকায় এসব ক্লাস বাস্তবভিত্তিক হয়ে না বলে শিক্ষার্থীরা ক্লাস থেকে মনোযোগ হারিয়ে ফেলছে। লোক দেখানো ক্লাসের আয়োজন করা হচ্ছে বলেও অভিভাবকরা অভিযোগ করেন।
এদিকে টেলিভিশন ক্লাসগুলোতে বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষাবিদ সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, এতে প্রায় ৬০ শতাংশের মতো শিক্ষার্থী এই টিভি ও অনলাইন পড়াশোনার কার্যক্রম থেকে অনেক ক্ষেত্রে বঞ্চিত হচ্ছে। কেননা গ্রাম অঞ্চলের অনেক শিক্ষার্থী আছে, যাদের অনেকের টেলিভিশন নেই। এদের অনলাইন কার্যক্রমে অংশ নেয়ার মতো সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে অভিভাবকরা দায়িত্ব নিতে পারেন। স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে পারেন।
তবে শিক্ষাবিদ ও শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণয়ন কমিটির সদস্য একরামুল কবীর বলেন, টিভি ও অনলাইনে যেসব কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে সেটাকে বলা যেতে পারে মন্দের ভালো। কিন্তু শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর মধ্যে আই কন্টাক্ট না হলে অনেক ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা সমাধান হয় না। শিক্ষার্থীরা মনোযোগী থাকে না, কিন্তু এরপরও বলতে হবে বিষয়টি মন্দের ভালো। শিক্ষার্থীরা যেখানে একেবারেই পড়াশোনা করত না, সেখানে যদি শিক্ষকরা টেলিভিশনের মাধ্যমে পাঠদান করান সেটি শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো। এক্ষত্রে অভিভাবক ও শিক্ষককদের তদারকি করতে হবে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিপিই’র মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমানের জরুরি অবস্থায় যাতাযাত ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় শিক্ষকদের স্টুডিওতে এনে ক্লাস রেকডিং করানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে। কাছাকাছি যাদের পাওয়া যাচ্ছে তাদের এনে ক্লাস রেকডিং করানো হচ্ছে। রমজানের কারণে পুনঃপ্রচার ক্লাস বেশি করানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, আগে ছোটদের ক্লাসে শিক্ষকদের বেশি ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করতে দেখা গেছে, বর্তমানে তা পরিবর্তন করা হয়েছে। পাশাপাশি ক্রমান্বয়ে সব সমস্যাগুলো সমাধান করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিদ্যালয় খোলা থাকলেও টিভি ক্লাস সম্প্রচার করা হবে। এ কারণে তা বাস্তবভিত্তিক করে তোলা হবে। বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে কিছু ভুলক্রটি ভুলে এসব ক্লাসের প্রতি মনোযোগী হতে অভিভাবক-শিক্ষার্থীদের অনুরোধ জানান মহাপরিচালক।
এমএইচএম/এমএফ/এমএস