কলেজে আহনাফের শূন্য টেবিলে ফুলের তোড়া, ছবি দেখে বিষণ্ন নেটিজেনরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:৪৩ পিএম, ১৮ আগস্ট ২০২৪

শাফিক উদ্দিন আহমেদ আহনাফ। বয়স মাত্র ১৭ বছর। রাজধানীর বিএএফ শাহীন কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিল আহনাফ। কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরু থেকেই সহপাঠীদের সঙ্গে রাজপথে সরব ছিল সে। একদিন টিয়ারগ্যাস ও রাবার বুলেটে কিছুটা আহতও হয়েছিল।

তবুও ভয় পায়নি আহনাফ। আবারও ছুটে যায় রাজপথে। গত ৪ আগস্ট মিরপুর-১০ এলাকায় আন্দোলনে অংশ নেয় সে। সেদিন পুলিশের গুলিতে নিহত হয় মেধাবী এ শিক্ষার্থী। পরদিন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কলেজে আহনাফের শূন্য টেবিলে ফুলের তোড়া, ছবি দেখে বিষণ্ন নেটিজনরা

শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। দেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর শিক্ষার্থী হত্যায় জড়িতদের বিচারপ্রক্রিয়াও চলমান। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় পুরোদমে চালু হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। রাজপথ ছেড়ে ক্লাসে ফিরেছে সহপাঠীরা। নেই শুধু আহনাফ!

রোববার (১৮ আগস্ট) কলেজের প্রথমবর্ষের পরীক্ষায় তার রোল নম্বর সংবলিত টেবিলটি আজ ফাঁকা। তাকে ভুলে যায়নি বন্ধু-সহপাঠীরা। ফাঁকা সেই টেবিলে শোভা পেয়েছে ফুলের তোড়া। আহনাফের পুরো নাম লেখা প্ল্যাকার্ড রেখে পরীক্ষায় বসেছে শিক্ষার্থীরা। যেন তাদের মধ্যেই আছে প্রিয় আহনাফ!

কলেজে আহনাফের শূন্য টেবিলে ফুলের তোড়া, ছবি দেখে বিষণ্ন নেটিজনরা

আহনাফের বন্ধুরা জানায়, আহনাফ কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরু থেকেই বন্ধুদের কর্মসূচিতে যেতে উদ্বুব্ধ করতো। নিজেদের মেসেঞ্জার গ্রুপে নিয়মিত বিভিন্ন জায়গার আপডেট জানাতো।

যৌক্তিক দাবির পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাইদের সঙ্গে তাদেরও রাস্তায় নামা উচিত বলে অভিমত জানাতো। শহীদ আহনাফকে হারিয়ে তারা শোকাহত হলেও তার সাহস ও সর্বোচ্চ ত্যাগে গর্বিত বলে জানিয়েছে সহপাঠীরা।

আহনাফকে এদিন আরও অনেকভাবে স্মরণ করেছে বিএএফ শাহীন কলেজ কর্তৃপক্ষ। সকালে অ্যাসেম্বলিতে আহনাফের জন্য দোয়া-মোনাজাত করা হয়। কলেজের ভবনে শোক জানিয়ে টাঙানো হয়েছে ব্যানারও।

এদিকে কলেজে আহনাফের টেবিলে ফুলের তোড়া রাখা ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ছবিটি শেয়ার করে অনেকে পোস্ট দিচ্ছেন। সেখানে শুধুই আহনাফের জন্য দুঃখগাঁথা। অনেকে আবার আহনাফের এ ত্যাগের বিনিময়ে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করছেন।

কলেজে আহনাফের শূন্য টেবিলে ফুলের তোড়া, ছবি দেখে বিষণ্ন নেটিজনরা

শরিফুল হাসান নামে একজন লিখেছেন, ফেসবুকে পাওয়া ছবিটা দেখে বুকটা হাহাকার করে উঠলো। এ তরুণদের জন্য হলেও দল-মত নির্বিশেষে সবাই মিলে বাংলাদেশটা ঠিক করতেই হবে। ১৭ বছরের তরুণ আহনাফ ঢাকার বিএএফ শাহীন কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। গত ৪ আগস্ট মিরপুর-১০ নম্বরে গুলিতে তিনি নিহত হন। কলেজের ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষায় আহনাফের সিটে রাখা ফুল। দেশের জন্য রক্ত দেওয়া আহনাফের জন্য ভালোবাসা। এ তরুণদের জন্য হলেও দল-মত নির্বিশেষে সবাই মিলে এ বাংলাদেশটা আমাদের ঠিক করতেই হবে।

আহমেদ সাগর নামে একজন লিখেছেন, আমি কিছু দেখতে পাই না। চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। সেই ঘোলাটে চোখে হাত দিয়ে দেখি তাতে অশ্রু নেই। কেবল রক্ত! ছাপ ছাপ রক্ত! আহনাফের রক্ত!

শেখ খলিল সোহেল নামে আরেকজন ছবিটি শেয়ার দিয়ে লিখেন, ফুল হয়ে ফিরলো আহনাফ। আমাদের শহীদ ভাইদের আত্মা তখনই শান্তি পাবে, যখন যে জন্য তারা রক্ত দিয়েছে সে লক্ষ্য পূরণ হবে। যখন স্বৈরাচার উৎপাদন কারখানা বন্ধ হবে। ভাইদের গণহত্যার বিচার নিশ্চিত হবে। দেশে ন্যায়বিচার ফিরে আসবে। ততদিন পর্যন্ত আমি গণহত্যাকারীদের বিরুদ্ধে কথা বলে যাবো ইনশাআল্লাহ।

জানা গেছে, রাজধানীর মধ্য পাইকপাড়ার বাসায় পরিবারের সঙ্গে থাকতো আহনাফ। তার বাবার নাম নাসির উদ্দিন আহমেদ। মা সাফাত সিদ্দিকী। দুই ভাইয়ের মধ্যে আহনাফ ছিল বড়। ছোট ভাই ইফতেখার উদ্দিন আহমেদ ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে।

.jagonews24

আহনাফের মা সাফাত সিদ্দিকী জানান, পরিস্থিতি ভালো না থাকায় ৪ আগস্ট সকাল থেকে ছেলেকে আন্দোলনে যেতে নিষেধ করছিলেন তিনি। ছেলে কিছুতেই নিষেধ মানতে চাচ্ছিল না। বারবার বলছিল সে যাবেই। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঘর থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল আহনাফ। তখন তার মাও সঙ্গে যেতে চেয়েছিলেন। ছেলে দ্রুত নিচে নেমে যায়। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ফোন দিলে আহনাফ জানায় সে মিরপুর-১০ নম্বরে অবস্থান করছে। ভালো আছে।

তিনি জানান, এরপর ছেলেকে বারবার কল দিলেও আর রিসিভ হয়নি। একসময় ছেলের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ছেলে যেসব জায়গায় খেলে সেসব জায়গায় গিয়ে খোঁজ করা হয়। বন্ধুদের সঙ্গে কথা বললেও কেউ কিছু বলতে পারে না। এরপর অচেনা একটা নম্বর থেকে ফোন আসে। ফোন পেয়ে সাফাত সিদ্দিকীসহ পরিবারের সদস্যরা মিরপুরের ইসলামিয়া হাসপাতালে যান। সেখানে একজন আন্দোলনে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের ছবি দেখান। ছবি দেখে তারা বুঝতে পারেন এ তো তাদের আহনাফ!

এএএইচ/এমআইএইচএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।