‘সীমান্তের দুই পারে’ উপন্যাসের পাঠ উন্মোচন

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:২৬ পিএম, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫

শফিক হাসান

মো. রেজাউল করিমের লেখা ‘সীমান্তের দুই পারে’ উপন্যাসের পাঠ উন্মোচন আয়োজন করা হয় ১৭ জানুয়ারি বিকেলে। রাজধানীর হাতিরপুলে অনুপ্রাণন প্রধান কার্যালয়ে। লেখক, প্রকাশক, আলোচক ও সমালোচক মিলিয়ে জমজমাট সময় অতিবাহিত হয়।

স্বাগত বক্তব্যে অনুপ্রাণন প্রকাশনের সহকারী সম্পাদক সদ্য সমুজ্জ্বল বলেন, ‘দেশভাগ, সাম্প্রদায়িকতা, দাঙ্গার বিষয়গুলো উঠে এসেছে সীমান্তের দুই পারে উপন্যাসে। উপন্যাসের নায়ক ফয়েজ হলেও তার পিতাই ভিত গড়ে দিয়েছেন। নায়ক চরিত্রকে উজ্জ্বল করতে গিয়ে লেখক নায়কের বাবার দিকে মনোযোগ দিতে পারেননি বোধহয়।’

তিনি বলেন, ‘লেখক অসাধারণভাবে দেশভাগের ইতিহাস উপস্থাপন করেছেন এটি প্রশংসাযোগ্য। কিন্তু উপন্যাসের মাঝামাঝি অবস্থায় গিয়ে লেখক ইতিহাসচর্চায় বিরতি দিয়ে পারিবারিক গল্পে ঢুকে গেছেন। এতে ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ন হয়েছে বলেই মনে করছি।’

মুখ্য আলোচক মোস্তফা অভি বলেন, ‘উপন্যাসটির নির্মাণশৈলী হওয়া উচিত ছিল প্রথমদিকে ইতিহাস, মাঝখানে পারিবারিক বিষয়, শেষদিকে আবার ইতিহাসে ফেরা। মাঝামাঝি পর্যায়ে গিয়ে তিনি যেভাবে ইতিহাস বাদ দিয়েছেন, তাতে উপন্যাস ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও আলোটা ম্লান হয়েছে।’

মোস্তফা অভি বলেন, ‘রেজাউল করিম একঘেয়ে কাহিনি বর্ণনা করেননি। দেশভাগের বিষয়গুলো পরিপাটিভাবে উঠে এসেছে। ৭০ পৃষ্ঠায় গিয়ে আমরা উপন্যাসের নায়কের নাম পাই—ফয়েজ। সে মেডিকেল কলেজের ছাত্র। দেশভাগ-দাঙ্গা, হিন্দু-মুসলমানের জিঘাংসার কথা বলা হয়। শুধু ইতিহাস নয়, এ উপন্যাসে ভূগোলও আলোচনা হয়েছে। ভূদৃশ্যের বর্ণনা অসাধারণ। পদ্মা নদীর বিস্তার, রাজশাহী থেকে সিলেটযাত্রা—ফয়েজ ও তার চাচার দৃশ্য অবলোকনে উঠে এসেছে ভূদৃশ্য বর্ণনা। মনস্তাত্ত্বিক ভাঙা-গড়ার বিষয়টি লেখকের অন্য বইয়েও ছিল। চেতনাপ্রবাহের কাজটি সুনিপুণভাবে বর্ণনা করেছেন লেখক। সব মিলিয়ে বইটি চমৎকার।’

পাঠ-প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে মনস্তত্ত্ববিদ জিয়ানুর কবির বলেন, ‘ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসকরা চলে যাওয়ার পর দেশ কীভাবে ভাগ হবে—আমরা জানি না। বইয়ে কিছু প্রশ্নের জবাব পেয়েছি, তবে সব নয়। নষ্ট রাজনীতির কথা বলেছেন লেখক। দৃশ্যপটে উঠে এসেছে মানুষের সংস্কৃতি। মানুষ অভিন্ন চেহারার, প্রায় একই বর্ণের—শুধু ধর্ম আলাদা এই বঙ্গে। ধর্ম-বিদ্বেষের কারণেই হাঙ্গামাগুলো হয় অনেক সময়। লেখক চাইলে এসব দিকেও আরেকটু আলোকপাত করতে পারতেন।’

পাঠক-শ্রোতার প্রশ্নের জবাব দেন ‘সীমান্তের দুই পারে’ উপন্যাসটির লেখক মো. রেজাউল করিম। উপন্যাস রচনার পূর্বাপর ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘সব লেখকের জন্যই বাস্তবতা লিংক হিসেবে কাজ করে। কোন জায়গা থেকে শুরু করবেন এই স্বাধীনতা লেখকের। কোনো একটা ‘টাচি’ জায়গা থেকে শুরু করেন লেখক, যাতে পাঠক আকৃষ্ট হন। উপন্যাসটি ডকু-ফিকশন বলে কাহিনির উত্থান-পতন হয়েছে। ফয়েজ নাকি ফয়েজের বাবা উপন্যাসের নায়ক—বিষয়টা পাঠকই ঠিক করুক।’

বইটির প্রকাশক ও অনুষ্ঠানের সভাপতি অনুপ্রাণন প্রকাশন স্বত্বাধিকারী আবু এম ইউসুফ বলেন, ‘উপন্যাসটি পাঠকরা পড়ছেন, প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন—প্রকাশক হিসেবে আমার ভালো লাগছে। এসব আলোচনার মধ্য দিয়ে অনেকেই জানবেন বইটির সম্বন্ধে।’

অনুপ্রাণন প্রকাশনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য জানিয়ে প্রকাশক আরও বলেন, ‘অনুপ্রাণন যা-ই করে, আন্তরিকতার সঙ্গেই করে। সততা রক্ষা করে। আমাদের প্রত্যেকটি পাণ্ডুলিপিই কয়েকজন সম্পাদক পড়ে সিদ্ধান্ত নেন। পাণ্ডুলিপি পড়ে সম্পাদনা পর্ষদ নোট দিয়েছে। কয়েকটা ব্যাপার আমি লক্ষ্য করেছি। বাংলা সাহিত্যে ইতিহাসনির্ভর উপন্যাস রচিত হয়েছে কমই। বিশেষ করে বাংলাদেশের সাহিত্যে দেশভাগের ওপরে উপন্যাস বলতে গেলে খুব কম। সীমান্তের দুই পারে প্রকাশিত হলে শূন্যতা কিছুটা হলেও দূর হবে, এমন ভাবনা থেকেই উপন্যাসটি প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছি।’

আবু এম ইউসুফ বলেন, ‘ছাত্রজীবনে বঙ্গবন্ধু কলকাতার বেকার হোস্টেলে থাকতেন। বেকার হোস্টেলের বিশদ বর্ণনা আছে এ উপন্যাসে। দাঙ্গার ঘটনার মধ্যে বাঙালি মুসলমানের চেতনার যে স্ফুরণ হয়—সেখান থেকেই আমরা মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছি। ইতিহাসভিত্তিক উপন্যাসের চরিত্র আর উপন্যাসের চরিত্র সমন্বয় করে উপন্যাস লেখা সহজ নয়। কিছুটা জটিলতা থাকাই স্বাভাবিক। আমি মনে করি, উপন্যাসটি পাঠতালিকায় রাখলে পাঠক ঠকবেন না।’

বইটির ভূমিকা লিখেছেন কলকাতার প্রখ্যাত প্রাবন্ধিক ও ডকুমেন্টরি ফিল্ম নির্মাতা সৌমিত্র দস্তিদার। পাঠ উন্মোচন অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন সাংবাদিক অনি আতিকুর রহমান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন—কথাসাহিত্যিক মোজাম্মেল হক নিয়োগী, হুমায়ুন কবির, শৈলজানন্দ রায়, শাহীনুর আসিফ, আলোকচিত্রী এম হায়দার চৌধুরী, এম এইচ আকাশ, শিক্ষক তানিয়া সুলতানা, ডিএনসিসি কর্মকর্তা মামুন আর রশীদ, সাংবাদিক সাজেদুর আবেদীন শান্ত, শৈল্পিক হুমায়ূন, হালিমা আক্তার, মাহমুদুল সামির, মাসুম হোসেন, শাহীন আলম শেখ প্রমুখ।

এসইউ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।