বই আলোচনা

রোদনধ্বনি রক্তধ্বনি: দ্রোহের নীলে ফোটা সত্যি ফুল

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:২১ এএম, ১৬ মার্চ ২০২৫

মাহমুদ নোমান

সুনির্মিত দৃশ্যে সুস্থির বলন। বোধের অরণ্যে যেন হঠাৎ রোদনে—প্রকাশিত করে দিচ্ছে ভাবের তাপিত মাধ্যম গায়েবি ধ্বনিতে। সেখানে বাহিত রক্তে টিউনিংয়ে দ্রোহের কথা বলা যেন দালান জাহানের কবিতা। দ্রোহের ফুল কীভাবে প্রস্ফুটিত হয়ে সৌন্দর্য-চেতনা উদ্দীপিত রাখে বলার পরেও দীর্ঘ সময় এটিই অনুরণিত হয়। দালান জাহানের কবিতায় এমন এক আন্তঃসম্পর্কে বয়ে চলা এক নদী; স্মার্ট শব্দগুচ্ছে ভাষা কিংবা নিরীক্ষার নামে টানাহেঁচড়া নেই অথবা বিষয়-আশয় নিয়ে সরাসরি বক্তব্য ঠেস্ বুনন প্রক্রিয়ার মধ্যেও স্বচ্ছ আলো ছড়িয়ে মূল কথাকে ভাবাবেগে তাড়িত সত্যি আরও উজ্জ্বল দৃষ্টান্তে প্রতিফলিত করতে পারে। কঠিন কথা সহজে বলে আরও সহজতর উপমায় সরলতার সুযোগে কবিতাকে প্রাণবন্তে সৃজন দালান জাহানের কবিতার বই ‘রোদনধ্বনি রক্তধ্বনি’। আশপাশের কথা, চেনাজানা শব্দ দিয়ে সৌন্দর্য সাধনে ভাষার সুষম বণ্টন। দৃশ্য থেকে দৃশ্যের মুহূর্মুহূ টিউনিংয়ে টেনে নিয়ে যায় ক্ষত ও নিজস্বতার মধ্যে অসঙ্গতি দেখাতে—
আয়নার ভেতর ছবি
ছবির ভেতরে সাঁতার কাটছে
একটি আইসক্রিম সভ্যতা।
(মায়াপায়ী, পৃ-৪৮)

খ.
সবুজ দুঃখ মাখা কাপগুলো ভেঙে
পৃথিবী এখন ভরে গেছে শুক্রবারে—
শনিবার নীরব নিশ্চুপ অধ্যয়ন
রবিবার পাগলা ঘুড়ি
সোমবারের প্রতিশ্রুতি নিয়ে বহুদূর
এগিয়ে গেছে ফুটবলজয়ীরা।
(প্রতিশ্রুতি, পৃ-১৮)

গ.
যে শহরে তুমি নেই
সে শহর মরে যাবে শূন্যতায়! শূন্যতায়!
অজানা অসুখে ছিঁড়ে যাবে মানুষের জাল
(যে শহরে তুমি নেই, পৃ-১০)

০২
কবি দলান্ধ নন, ক্ষমতা কিংবা দম্ভের ওপর প্রতিষ্ঠিত কোনো শক্তিও নয়। কবি ন্যায়ের পক্ষে অথবা অন্যায়ের বিপক্ষে। অনেক সময় নিজের বোধ বিশ্বাস থেকে যা তুলে ধরে অনেকের বিপক্ষে চলে যায়, ওইসব রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করেও লেখেন একজন কবি। বরঞ্চ কোনো শক্তির তাবেদারি করলে একজন কবি হয়তো সাময়িক জৌলুসে হাস্যোজ্জ্বল থাকেন কিন্তু নিজের লেখাটাই হয়ে ওঠে না। দিনশেষে একজন কবির নিজের লেখাটাই কথা বলে কবিকে নিয়ে। সে ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা জরুরি অন্তত নিজের লেখার কাছে সৎ থাকাটাই সার্থকতা। দালান জাহানের ‘রোদনধ্বনি রক্তধ্বনি’ কবিতার বইটি অন্যায়ের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে লেখা দ্রোহের নীল পরিশীলিতভাবে উপস্থাপন। ভেতর থেকে দাগিয়ে সমসাময়িক বিষয়-বৈচিত্র্যে জাগিয়ে তুলতে সক্ষম দালান জাহানের কবিতা—

আরও পড়ুন

‘পিও ভালোবাসার নামে যে নিপীড়ন চলে
সেবার নামে যে শোষণ চলে
যে হত্যাকারী আমার জানাযার ইমাম
রাষ্ট্র ভাসায় শোক উৎসবে,
পিও চলো মিছিলে যাই—গ্রেফতার হই মধ্যরাতে;
আবারও মরি বিজয়ের আনন্দে।
(পিও, পৃ-২৮)

খ.
দেখো প্রিয়তমা আমি তোমার মুখে দেখি
হাজার-কোটি মিছিলের মুখ
যে মুখ থেকে নেমে গেছে আত্মার নদী
সে নদীতে স্নান করতেই
তোমার গর্ভে বেড়ে ওঠে আমার ভ্রূণ
এবং আমি জানি তুমি নিশ্চয়ই প্রসব করবে
হাজার-কোটি বিপ্লবী সন্তান।
(রোদনধ্বনি রক্তধ্বনি, পৃ-৩১)

দালান জাহানের কবিতায় রিদ্মিক দোলন চমৎকার একটা দরদী সহমর্মী স্বভাবে সত্যি উন্মোচন করে। দালান জাহান নিজের কবিতায় কর্তৃত্ব বিস্তার করতে পারেন। বুঝতে সক্ষম নিজে কী লিখছেন। যা ইদানীংকালে অনেকের কাছে নেই!

বই: রোদনধ্বনি রক্তধ্বনি
কবি: দালান জাহান
প্রকাশক: চন্দ্রবিন্দু প্রকাশন
প্রচ্ছদ: মঈন ফারুক
মূল্য: ২৫০ টাকা।

এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।