বইমেলার প্রথমার্ধ

সন্তুষ্ট প্রকাশকরা, অব্যবস্থাপনায় সমালোচিত বাংলা একাডেমি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৫৯ পিএম, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

লিপ ইয়ারের কারণে এবারের অমর একুশে বইমেলা হবে ২৯ দিন। সে হিসাবে মেলার প্রথমার্ধ শেষ। এবার প্রথম থেকে দর্শনার্থীদের ভিড়ে প্রাণবন্ত মেলা। লেখক-পাঠক-দর্শনার্থীদের মিলনমেলায় উৎসবমুখর পরিবেশে চলছে প্রাণের মেলা। শুরু থেকে বেচাকেনা কম হলেও সময়ের সঙ্গে দর্শনার্থীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বই বিক্রি। এতে খুশি বড় বড় প্রকাশনীগুলো। তবে, প্রাণবন্ত মেলায় প্রথম থেকেই ছিল অব্যবস্থাপনা।

প্রকাশকরা বলছেন, মেলা দর্শনার্থীদের এমন উপচেপড়া ভিড় খুবই ভালো দিক। বেচাকেনাও হচ্ছে বেশ। সবধরনের বইয়ের প্রতি পাঠকের চাহিদা রয়েছে। এ বছর বইয়ের দাম নিয়ে সমালোচনা নেই। করোনা সংকটও কেটে উঠেছে। অন্যদিকে, মেট্রোরেলের প্রভাবে পাঠকের সমাগমকে সবচেয়ে বেশি চমক মনে করছেন তারা। আগে মেলায় উত্তরা-মিরপুর থেকে খুব বেশি পাঠক আসতেন না এখন এসব এলাকার অনেক পাঠকের সমাগম হচ্ছে।

মাওলা ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী আহমেদ মাহমুদুল হক জাগো নিউজকে বলেন, এবারের মেলা আমার কাছে গতবছর থেকে ভালো মনে হচ্ছে। প্রথম থেকেই জমজমাট। মেট্রোরেলের কারণে খুব কম সময়ে অনেক বেশি পাঠক আসছে। আমাদের পুরোনো লেখদের পাশাপাশি নতুন লেখকদের বইও ভালো বিক্রি হচ্ছে। এ বছর আমরা কিছু নতুন অনুবাদের বই করেছি, ভালো বিক্রি হচ্ছে। অনেক বইপ্রেমী ২১ ফেব্রুয়ারি পর থেকে বই কিনবেন। পাঠকের একটা বাছাই থাকে, তারা গবেষণা করে তালিকা করে বই নির্বাচন করেন।

তিনি আরও বলেন, ওয়াশরুম সংকট, সাজসজ্জা, নামাজের জায়গার সংকট— এগুলো নিয়ে প্রতিবছর অভিযোগ থাকে। এসব বিষয়ে মেলা কর্তৃপক্ষের জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। মেলায় মোশতাক তিশার বই নিয়ে বলেন, আমি মনে করি সবার জন্যই বইমেলা। আমি এগুলোকে মেলার অনুষঙ্গ হিসেবে দেখি।

ইউপিএল প্রকাশনী বিক্রয় বিভাগের সদস্য কাউসার আহমেদ বলেন, প্রথম থেকেই ভালো সাড়া পাচ্ছি। মেলায় মানুষের সমাগম বেশি। কিন্তু যারা আসছেন তাদের ৩০ শতাংশও বই কেনেননি। প্রকৃত পাঠক যারা তারাই বই কিনছেন। তবে, শেষার্ধে বেচাকেনা আরও ভালো হবে আশা করছি।

একইভাবে সুর মেলালেন পাঠক সমাবেশ স্টলের ম্যানেজার শামস শুভ। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, গত তিন বছরের চেয়ে মেলা জমজমাট দেখছি। মেলার অর্ধেক দিন তো শেষ মোটামুটি বেচাকেনা হয়েছে। পাঠক সমাবেশের বইয়ের দাম নিয়ে সবার অভিযোগ থাকে। কিন্তু এবার বইয়ের দাম সীমিত। অনেক পাঠকরা ক্যাটালগ সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছে। শেষার্ধে এসে বই কিনবে।

জিনিয়াস পাবলিকেশনস’র ম্যানেজার আব্দুল বাতেন ভূঁইয়া বলেন, আমরা কিছু অনুবাদ ও মৌলিক বই বের করেছি। বেচাকেনা মোটামুটি, আমরাও সন্তুষ্ট। মেলায় সৃজনশীল বইয়ের প্রতি অধিকাংশ তরুণদের মনযোগ নেই। তারা যে বই ভাইরাল হবে সেগুলোই কিনে। তা টার্গেট করেই মেলায় আসে।

এদিকে এবার মেলায় ওয়াশরুম, ডাস্টবিনের সংকট থেকে শুরু করে নামাজের স্থান সংকট নিয়ে বিস্তর অভিযোগ দর্শনার্থীদের। এছাড়া মেলার স্টল বিন্যাস নিয়ে অভিযোগ করছেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চের পাশে থাকা প্রকাশনীগুলো। এ মঞ্চের পাশে ৬৫টি প্রকাশনীর স্টল। এসব স্টলে পাঠক সমাগম ও বেচাবিক্রি খুবই কম জানিয়েছেন স্টলকর্মীরা।

প্রত্যয় প্রকাশনী প্রকাশক শাহান আরা জাকির জাগো নিউজকে বলেন, এদিকে জনসমাগম খুবই কম। ছুটিরদিনেও মানুষ কম থাকে। পহেলা ফাল্গুনে কিছু বেচাকেনা হয়েছে। আমাদের এ অংশের স্টল বিন্যাস একদম বাজে হয়েছে। স্টলগুলো রাস্তার পেছনের দিকে, রাস্তার সম্মুখে হলে ভালো হতো। মানুষ তো রাস্তা দিয়ে ঢুকেই ভেতরে চলে যায়, এদিকে কেউ আসে না। এর পেছনে একটা গেট আছে। আমরা কর্তৃপক্ষকে আবেদনও দিয়েছে গেট খোলার জন্য, তারা খোলেনি।

এছাড়া গত সপ্তাহের আলোচিত খন্দকার মোশতাকের ‘তিশার ভালোবাসা’ বই ও ডা. সাবরিনার ‘বন্দিনী’ বই নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) মুশতাক আহমেদ ও তিশাকে বইমেলা থেকে কয়েকজন আনসার সদস্যদের নিরাপত্তায় বের হয়ে যায়। এসময় তাদের চারপাশ ঘিরে দর্শনার্থীদের ভুয়া, ভুয়া স্লোগান শোনা যায়।

এ দু’টি বিষয় নিয়ে নানা মহলে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বইয়ের ভেতরের ‘কন্টেন্ট’ নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হচ্ছে। করোনাকালে নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে জড়িত ডা. সাবরিনার বইয়ে বন্দিজীবনের নানা ঘটনা ও সমকামিতা নিয়ে সমালোচনা করছেন পাঠকরা। তিশার ভালোবাসা বইয়ের কয়েক পৃষ্ঠাজুড়ে দম্পতির ছবি ও বই নিয়ে রয়েছে সমালোচনা।

এ বিষয়ে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, সাবরিনার বইটিতে রাষ্ট্রীয় জেলখানার ভেতরের অভ্যন্তরীণ কাহিনী নিয়ে লেখা, এটা আমাদের নজরে এসেছে। এছাড়া তিশার ভালোবাসা বই নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এ বই দুটি নিয়ে তদন্তের জন্য গত রোববার (১০ ফেব্রুয়ারি) টাস্কফোর্স টিম পাঠানো হয়েছে। আগামী রোববার (১৭ ফেব্রুয়ারি) আমাদের একটা মিটিং আছে, সেখানে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, অনেক প্রকাশনী একই আইএসবিএন (ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড বুক নম্বর) নম্বর ব্যবহার করে একাধিক বই এনেছে। আমাদের কপি-রাইট সেগুলো চিহ্নিত করেছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে আমরা শিগগির বসবো। ২০০৬ সালের পর আমরা প্রথম এককভাবে মেলা পরিচালনা করছি। সেজন্য আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কিন্তু আমরা গুছিয়ে উঠেছি।

আরএএস/এমএএইচ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।