সালমানের দেয়া সেই কাগজ আজও রেখে দিয়েছেন ববিতা

বিনোদন প্রতিবেদক
বিনোদন প্রতিবেদক বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:৩৭ এএম, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১

মৃত্যুর ২৪ বছর পরও শুধু দুর্দান্ত অভিনয় এবং ফ্যাশনের ভিন্নমাত্রা দিয়ে দর্শকের হৃদয়ে অমর হয়ে আছেন সালমান শাহ। দিন দিন যেন তার জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। সেইসঙ্গে যোগ হচ্ছে নতুন প্রজন্মের দর্শকের মনে আফসোস, সালমানের নতুন সিনেমা হলে গিয়ে দেখতে না পারার।

সেই সালমান শাহ অল্প দিনের ক্যারিয়ারে ২৭টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তার মধ্যে ৪টি ছবিতে তিনি পেয়েছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নায়িকা ববিতার সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ। এগুলো হচ্ছে বাদল খন্দকারের ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, দিলীপ সোমের ‘মহামিলন’, শিবলী সাদিকের ‘মায়ের অধিকার’ ও জাকির হোসেন রাজুর ‘জীবন সংসার’। দুটি ছবিতে সালমানের মায়ের ভূমিকায় এবং দুটি ছবিতে সালমানের ভাবির ভূমিকায় অভিনয় করেন ববিতা।

সালমান শাহকে হারানোর ২৪ বছরে সন্তানতূল্য অভিনেতাকে স্মরণ করেন ববিতা। তার স্মৃতির দেয়ালে সাঁটানো ছবিগুলোতে চোখ বুলিয়ে দেখা গেল অন্য এক নায়ক সালমানকে। যেখানে নারী শিল্পীর প্রতি তার সম্মান মুগ্ধ করে যায়।

ববিতা গেল বছর জাগো নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘সালমানকে আমি ভীষণভাবে মিস করি। যখন টিভিতে ওর অভিনীত গান-সিনেমা চলে তখন খুব কষ্ট লাগে। ও আমার এতো কাছের আর এত আপন ছিলো, বলার মতো নয়। ওর সঙ্গে অল্প কাজ হলেও মনে হয় আমি ওকে অনেকদিন ধরে চিনেছিলাম। কী আন্তরিকতা! কী সম্মান।

সালমান আমাকে খুব সুন্দর করে ডাকতো আর এতো সুন্দর ভাষায় কথা বলতো সেগুলো আমাকে খুব মুগ্ধ করতো। যখন আমি ওর মায়ের চরিত্রে অভিনয় করতাম তখন সালমান বলতো ‘ইউ আর সো সুইট মাদার’। একটা ঘটনা বলি। আমি একটা সিনেমার শুটিং করছিলাম পাহাড়ে। শুটিংয়ের সময় আমার সহকারী আমার জন্য নির্ধারিত ছাতা এবং চেয়ার সঙ্গে রাখতো। কিন্তু সেদিন ও ভুল করে চেয়ারটি আনেনি। তখন সালমান তার নিজের চেয়ারটি আমাকে এগিয়ে দেয়। সে বলে, ‘আপু আপনাকে এই চেয়ারটি আমি উপহার দিলাম।’ সেই চেয়ারটি আমি অনেকদিন রেখে দিয়েছি। গিফটটি খুব ছোট। কিন্তু এখানে যে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসাটা মিশে আছে তা অমূল্য।’

‘সালমান আমাকে ফোন ব্যবহার করা শিখিয়েছে। তখন নতুন সিটিসেল নামে বড় বড় সাইজের কিছু ফোন বাজারে আসে। আমি এতো ফাংশন জানতাম না। ও আমাকে একটি কাগজে সব লিখে দিয়েছিলো কীভাবে ফোনটি ব্যবহার করবো। সেই কাগজ আজও রেখে দিয়েছি’- যোগ করেন আবেগপ্রবণ ববিতা।

স্মৃতির দোলনায় দুলে ববিতা শোনালেন সালমানকে নিয়ে আরও এক গল্প। বলেন, ‘আউটডোরের শুটিংয়ের একটি মজার ঘটনা আছে। আসলে আমাদের কাজ কম হয়েছে কিন্তু অনেক অনেক স্মৃতি জমা হয়ে আছে একসঙ্গে। শুরু করলে সব বলতে ইচ্ছে করে। একবার আমরা একসঙ্গে শুটিংয়ে যাবো বলে ঠিক হলো। হঠাৎ করেই সালমানের একটি জরুরি একটি কাজ পড়ে গেলো। ওদিকে সেই সকাল থেকেই শুটিং শুরু হবার কথা। আমি রেডি হচ্ছি বের হবো। এমন সময় সে আমাকে ফোন করলো।

বললো, ‘ম্যাম, আপনি একটা কাজ করেন। আমার একটি উপকার করে দেন। আমি যদি ডিরেক্টরকে বলি যে আমার একটা কাজ আছে এবং আমার আসতে দেরি হবে তাহলে তার খারাপ লাগতে পারে। রেগেও যেতে পারে। কারণ অনেক বড় অ্যারেঞ্জমেন্ট হয়েছে, অনেক বড় ইউনিট। তাই ম্যাম, আপনি যদি একটু কায়দা করে এমন করে বলেন যে আপনারও কাজ আছে আমি একটু কাজটি সেরে আসতে পারতাম। ওর কথা শুনে খুব হাসলাম। পরে ডিরেক্টরকে আমি ম্যানেজ করলাম। ওর মধ্যে কিন্তু সততা ছিলো। ও চাইলে কাউকে না জানিয়ে দেরি করে আসতেই পারতো।

আজকাল অনেক নায়করাই সেটা করে থাকেন। সিনিয়ররা সেটা গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে আছে। নায়কের খোঁজ নেই। কারণ সিনিয়রদের সঙ্গে জুনিয়রদের বা তারকা হয়ে যাওয়া নায়কদের আন্তরিকতা নেই। সালমানের সেটা ছিলো। আমার ধারণা ওর সঙ্গে কাজ করে বাজে অভিজ্ঞতা হয়েছে এমন একটি লোক ইন্ডাস্ট্রিতে পাওয়া যাবে না।

ও ঘরের ছেলের মতো ছিলো সবার কাছে। সত্যি কথা বলতো। স্টারডমের বাজে প্রকাশ ছিলো না। সিনিয়রদের অনেক অনেক সম্মান করতো। ও ফোন করে আমার সঙ্গে প্ল্যান করে শুটিং টাইমটা কিছু সময়ের জন্য পিছিয়ে নিয়েছিলো। কিন্তু আমি তার সিনিয়র, সে আমাকে সেটে পাঠিয়ে বসিয়ে রাখেনি।

আসলে আমাদের এমন সম্পর্কই ছিল। এমন আন্ডারস্ট্যান্ডিং ও রিলেশন, সুখ দুঃখের সব ব্যাপার শেয়ার করা এটা কিন্তু আমার সব সহশিল্পীদের সঙ্গে হয়নি। সালমানের সঙ্গে হয়েছে। কারণ ও আমাকে মন থেকে সেই আসনটা দিয়েছিলো। আমি টের পেয়েছি বলে তার সেই সম্মানটা নিতে পেরেছিলাম।’

অভিনেতা সালমান অনেক শক্তিশালী ছিলো। ববিতা সেই প্রসঙ্গে বলেন, ‘সালমান শাহ কিন্তু আসলেই দারুণ একজন শিল্পী ছিলো। ওর সঙ্গে কাজ করতে গেলে খুব সতর্কভাবে শট দিতে হতো। যেমন সিকোয়েন্সে ডায়লগ দেয়া আছে ভাবি দেবরের কনভারসেশন। সেখানে ও এমন এক্সট্রা কিছু মজার ডায়লগ দিতো এবং এমন এক্সপ্রেশন দিতো যা আমার কভার করতে হতো। আমি ভাবতাম ও যখন এই ভঙ্গিটা এভাবে করেছে আমার একটু আলাদা না দিলে জমবে না দৃশ্যটি। তাহলেই বুঝুন কত বড় মাপের একজন শিল্পী সে।

সবাই ওকে রোমান্টিক হিরো বলে। কিন্তু ও সব চরিত্রেই দুর্দান্ত অভিনেতা ছিলো। মনেই হতো না ২৪-২৫ বছরের একটি ছেলে অভিনয় করছে। কী সাংঘাতিক পরিণত! মানুষ হাতে কলমে শিখেও অনেক কিছু করতে পারে না।’

সালমানকে খুব মনে পড়ে জানিয়ে ববিতা জানান, ‘যখন ছেলেটা হারিয়ে গেলো মানতেই পারছিলাম না। অনেকদিন আমি ওকে ভুলতে পারতাম না। খুব কান্না পেতো। এতো অল্প বয়স, কী দারুণ সম্ভাবনা ছিলো তার। প্রায়ই হুট করে মনে পড়ে যায়। তখন শুটিংয়ের মধ্যে ও যেভাবে কথা বলতো, আমাকে ডাকতো, ওর সেই আওয়াজটা কানে লাগে। এখনো মনে হয় ও বেঁচে আছে, ও কথা বলছে, সব কিছু হচ্ছে।

আমি ওর রোমান্টিক নায়িকা ছিলাম না। কিন্তু ওর রোমান্টিকতা দেখেছি অভিনয়ে। রোমান্টিক সালমান শাহকে আজও ভোলা যায় না। একজন সহশিল্পী সালমান শাহকেও কোনোদিন ভুলবো না। দোয়া করি, আল্লাহ যেন তার আত্মাকে শান্তি দেন। তাকে বেহেশত নসিব করেন, আমিন।’

এলএ/এসআর

 

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।