আজকের এই দিনে
বীর উত্তম কাজী নূরুজ্জামানের জন্ম
![বীর উত্তম কাজী নূরুজ্জামানের জন্ম](https://cdn.jagonews24.com/media/imgAllNew/BG/2023March/eidine-20230324080216.jpg)
কাজী নূরুজ্জামান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার। ১৯৭১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ৭নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার মেজর নাজমুল হক ভারতে সড়ক দুর্ঘটনা মারা যাওয়ার পর কর্ণেল নূরুজ্জামানকে এই সেক্টরের অধিনায়ক করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে তার অবদানের জন্য তাকে বীর উত্তম উপাধিতে ভূষিত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের প্রধান কৃতিত্ব গণমানুষের, এই কথা যুক্তিতে তিনি অবশ্য বীর উত্তম উপাধি গ্রহণ করেননি, কখনো তা ব্যবহার করেননি।
১৯২৫ সালের ২৪ মার্চ যশোর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার পিতার নাম খান সাহেব কাজী সদরুলওলা এবং মাতার নাম রতুবুন্নেসা। কাজী নূরুজ্জামান পড়াশোনা শুরু করেন কলকাতায়। সেখানে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে রসায়নে পড়ার সময় তিনি ১৯৪৩ সালে ব্রিটিশ ভারতীয় নৌবাহিনী, রয়্যাল ইন্ডিয়ান নেভিতে যোগ দেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি বার্মার উপকূল ও সুমাত্রায় যুদ্ধ করেন। ১৯৪৬ সালে পণ্ডিত জহরলাল নেহেরু'র আহবানে অনেকে নৌবাহিনী থেকে ভারতীয় সেনবাহিনীতে চলে আসে। কাজী নূরুজ্জামান তাদের মধ্যে অন্যতম।
তিনি রয়্যাল ইন্ডিয়ান আর্মিতে চাকরি স্থানান্তরিত করে রয়্যাল ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমিতে যোগ দেন এবং প্রশিক্ষণের জন্য দেরাদুনে রয়্যাল ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমিতে চলে যান। ১৯৪৭ সালে তিনি এই একাডেমি থেকে কমিশন লাভ করেন। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্টের পর কাজী নূরুজ্জামানের পরিবার পাকিস্তানে আসার সিদ্ধান্ত নিলে নূরুজ্জামান পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে নবীন অফিসার হিসেবে যোগ দেন। ১৯৪৯ সালে ইংল্যান্ডে আর্টিলারি কোর্স সমাপ্ত করে আসার পর তিনি পাকিস্তানের নওশেরায় আর্টিলারি সেন্টার এন্ড স্কুলে প্রশিক্ষক নিয়োজিত হন। পরের বছর হন অফিসার ট্রেনিং স্কুলের ইনস্ট্রাক্টর।
১৯৫৬ সালে মেজর পদে পদোন্নতি পান এবং ১৯৫৮ সালে স্টাফ কলেজ সম্পন্ন করেন। ১৯৫৮ সালে সেনাপ্রধান আইয়ুব খান দেশে সামরিক আইন জারি করলে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাদানুবাদে লিপ্ত হয়ে পড়েন। তখন (১৯৬২ সালে) তাকে প্রেষণে ইস্ট পাকিস্তান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনে (ইপিআইডিসি) পাঠানো হয়। এরই মধ্যে তিনি লেফটেনেন্ট কর্নেল পদে পদোন্নতি পান। ইপিআইডিসি থেকে তিনি স্বল্প সময় পরে তিনি সেনাবাহিনীতে ফিরে আসেন এবং স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় তিনি আবার সেনাবাহিনীতে ফিরে যান এবং যুদ্ধকালীন সময়ের পরপরই পুনরায় সিভিল পেশায ফেরত আসেন।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালো রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালির উপর গণহত্যা শুরু করলে কাজী নূরুজ্জামান ঢাকা ত্যাগ করে স্বপরিবারে ময়মনসিংহ চলে যান। ২৮ মার্চ দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট জয়দেবপুর থেকে টাঙ্গাইল হয়ে ময়মনসিংহে পৌঁছে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক কাজী মুহাম্মদ শফিউল্লাহর সঙ্গে দেখা করেন। ৪ এপ্রিল, ১৯৭১ হবিগঞ্জের তেলিয়াপাড়া চা-বাগানের ম্যানেজারের বাংলোয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর ও তদূর্ধ্ব পদবির কর্মকর্তাদের প্রথম এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সে সভায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
একাত্তরের মে মাসে তাকে সভাপতি করে একটি পর্ষদ গঠন করা হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রথম ব্যাচ ক্যাডেট নির্বাচনের জন্য। এই ক্যাডেটরা কমিশন লাভ করেন সে বছরের ৯ অক্টোবর। সাত নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর নাজমুল হক ২৬ সেপ্টেম্বর ভারতে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলে কাজী নূরুজ্জামান তার স্থলাভিষিক্ত হন।
সাংস্কৃতিক সক্রিয়তাও ছিল তার। ১৯৬২ সাল থেকে তিনি বাংলাদেশের প্রগতিশীল লেখক ও বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। তিনি ড. আহমদ শরীফ প্রতিষ্ঠিত স্বদেশ চিন্তা সঙ্ঘের সঙ্গে ওতপ্রতোভাবে যুক্ত ছিলেন। তিনি ছিলেন লেখক শিবির ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ফ্রন্টের সদস্য। তার প্রকাশিত গ্রন্থাদি- একাত্তরের ঘাতক ও দালালরা কে কোথায় গ্রন্থের অন্যতম সম্পাদক ছিলেন কাজী নূরুজ্জামান। এছাড়াও একাত্তর ও মুক্তিযুদ্ধ: একজন সেক্টর কমান্ডারের স্মৃতিকথা, মুক্তিযুদ্ধ ও রাজনীতি, বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতি, স্বদেশ চিন্তা, কর্নেল কাজী নুরুজ্জামান রচনাসমগ্র। ২০১১ সালের ৬ মে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
কেএসকে/এমএস