হারিয়ে যাওয়া শৈশবের খেলাধুলা

মামুনূর রহমান হৃদয়
মামুনূর রহমান হৃদয় মামুনূর রহমান হৃদয় , ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ০১:০৯ পিএম, ১৩ মে ২০২৩

‘শৈশব’ শব্দটি শুনলেই কেমন যেন একটা রঙিন গল্পের জগৎ সামনে চলে আসে। শৈশব হারিয়ে গেছে। সেই সঙ্গে হারিয়ে গেছে শৈশবের শত শত খেলা। এখন সেসব খেলার কথা মনে হলে খেলার সঙ্গীদের কথা মনে পড়ে। মনে পড় শৈশবের হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি। হাস্যোজ্জ্বল, চিন্তাহীন একটি সময়। কত কী না করেছি সে সময়! কত গল্প, কত দুষ্টুমি আর কত খেলা। খেলার সঙ্গীরা এখন কে কোথায়, তা জানা নেই। কিন্তু খেলার স্মৃতিটুকু রয়ে গেছে।

মার্বেল
শৈশবে মার্বেল খেলেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া সত্যিই কঠিন। এক উদ্দাম নেশা ছিল এই মার্বেল খেলার প্রতি। এই স্মৃতি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। পকেটে মার্বেল নিয়ে ঘুমানোর সেসব দিনের কথা মনে পড়লে নিজের অজান্তে স্মৃতিকাতর হয়ে যাই। স্কুল ছুটি হলে মার্বেল কিনতে যাওয়া, বাবার কাছে মার্বেল কেনার বায়না ধরার দিনগুলো সত্যিই সুন্দর ছিল।

লাটিম
লাটিম আমাদের ঐতিহ্যবাহী একটি খেলা। লাটিম খেলতে পারেন না এমন মানুষ আগে পাওয়া না গেলেও এখন দেখা মেলে। ছেলেবেলার অত্যন্ত জনপ্রিয় খেলাগুলোর মধ্যে এটি একটি। এটি শুধু খেলাই নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ছেলেবেলায় মায়ের লাটিম লুকিয়ে রাখার স্মৃতি। এছাড়াও নতুন কেনা রঙিন লাটিম দিয়ে কাউকে হারিয়ে দেওয়ার সুখস্মৃতি, তা এখনো চোখে লেগে আছে। উল্টো দিকে, একের পর এক লাটিমের হামলায় চোখের সামনে নিজের সুন্দর লাটিম ক্ষত-বিক্ষত হতে দেখার স্মৃতি এখনো নিজেকে পীড়া দেয়।

আরও পড়ুন: নব্বই দশকের জনপ্রিয় যত কার্টুন সিরিজ

কুতকুত
কুতকুত খেলা গ্রামবাংলার মেয়েদের খুবই প্রিয় খেলা। স্কুল থেকে আসতে না আসতে দলবেঁধে মেয়েরা খেলতো এ খেলা। ঘর কেটে মাটির চাড়া দিয়ে লাফানো ছিল এ খেলার প্রধান কাজ। ছেলেরা অনেকেই এই খেলা বুঝতো না বলে এটি মেয়েদের খেলা হিসেবেই পরিচিত ছিল বেশি।

চোর-পুলিশ
চার টুকরো কাগজ। একেকটিতে লেখা চোর, পুলিশ, ডাকাত আর বাবু। সাদা কাগজের সেই টুকরো নিয়েই কেটে যেতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কে চোর হচ্ছে আর কে বা বাবু, সেটা নিয়ে অনেক সময় ঝগড়া তো বাঁধতোই, খেলাও পণ্ড হতো।

কানামাছি
‘কানামাছি ভোঁ ভোঁ, যাকে পাবি তাকে ছোঁ’- স্নিগ্ধ বিকেলে এখনো কানে বাজে এই সুর। ফিরে যাই নির্মল শৈশবের দিনগুলোয়। বিকেলের আলোয় একদল ছেলেমেয়ে একজনের চোখ বেঁধে সুর করে গলা ছেড়ে গাইছে ‘কানামাছি ভোঁ ভোঁ, যাকে পাবি তাকে ছোঁ’। অথবা স্কুলে টিফিনের ফাঁকে একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি। কানামাছি একজনকে ছুঁয়ে দিলো, তো নতুন এক কানামাছির জন্ম হলো। এভাবে একের পর এক কানামাছির পরিবর্তন।

আরও পড়ুন: পুরান ঢাকার ৫ ভৌতিক স্থান

ছোঁয়াছুঁয়ি
ছোটবেলায় স্কুলে ও বিকেলে খেলার মাঠে এই খেলা অনেক খেলেছি। টসের মাধ্যমে একজনকে চোর নির্বাচন করা হতো। চোর বাকি সবাইকে দৌড়ে ছোঁয়ার চেষ্টা করতো। যাকে ছুঁতে পারতো, সে-ই চোর হতো।

লুকোচুরি
খেলাটিও অনেক জনপ্রিয় ছিল। লুকোচুরি খেলেননি ছোটবেলায় এমন মানুষ কমই আছেন। এখানেও একজনকে টসের মাধ্যমে চোর নির্বাচন করা হতো। সে চোখ বন্ধ করে ১-৫০ অথবা ১০০ পর্যন্ত গুনতো। ততক্ষণে সবাই লুকিয়ে পড়তো। গণনা শেষ হলে চোর সবাইকে খুঁজে বেড়াতো। যাকে প্রথম দেখতো তার নাম ধরে ১ টিপ, ২ টিপ এভাবে বলতো। যদি কারও নাম বলার আগেই কেউ এসে চোরকে ছুঁয়ে ‘টিলো’ বলতো, সে-ই আবার চোর হতো। অন্যথায় যাকে ‘১ টিপ’ বলা হয়েছে, সে-ই আবার চোর হতো।

বরফ-পানি
খেলাটি অনেকটা ‘ছোঁয়াছুঁয়ি’ খেলার মতোই। তবে চোর এখানে যাকে ধরতো; সে স্থির হয়ে থাকতো। যতক্ষণ না অন্য কেউ এসে তাকে ছুঁয়ে মুক্ত করতো। যদি চোর সবাইকে ছুঁয়ে বরফ করে দিতো। তাহলে প্রথমে যাকে ছুঁয়েছে সে চোর হতো।

আরও পড়ুন: কেবলই স্মৃতিময় অতীত!

কুমির-ডাঙা
এখানে একজনকে কুমির বানানো হতো। খেলার সঙ্গী হিসেব করে কতগুলো ঘর নির্বাচন করা হতো। যতক্ষণ সেই ঘরে মানুষ থাকবে তার কিছু হবে না। তবে বাকি জায়গাজুড়েই কুমিরের রাজত্ব। তবে এক ঘরে কারও বেশিক্ষণ থাকার নিয়ম ছিল না। তাই মানুষকে ডাঙা ছেড়ে পানিতে নামতেই হতো। এর মধ্যে কুমির কাউকে ধরতে পারলে সে-ও কুমির হয়ে যেতো।

সাত চারা
ইটের ওপর ৭টি চারা রেখে দূর থেকে বল নিক্ষেপ করা হতো। বল নিক্ষেপ করে সাত চারা ফেলার পর নিক্ষেপকারীরা সবাই পালিয়ে যেতো। এদিকে বল হাতে শত্রুরা খুঁজতো নিক্ষেপকারীদের। যদি নিক্ষেপকারীদের কেউ অগোচরে আবার সাতটি চারা বসিয়ে দিতো। তাহলে নিক্ষেপকারীরা বিজয়ী হতো। যদি শত্রুরা এর আগেই নিক্ষেপকারীদের গায়ে বল ছুঁড়ে মারতো। তাহলে শত্রুরা বিজয়ী হতো।

বউচি
এ খেলায় বউ তার দলের নির্দিষ্ট ঘর থেকে দূরে আরেকটি ঘরে অবস্থান করতো। প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড়দের কাজ ছিল বউ যাতে দৌড়ে তার দলের ঘরে পৌঁছতে না পারে। বউয়ের দলের একজন করে সদস্য দম নিয়ে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের ছুঁয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতো। ছুঁয়ে দিলে সে বাদ। তাই ছোঁয়া বাঁচাতে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়রাও এদিক-সেদিক দৌড়ায়। এই ফাঁকে বউ চেষ্টা করে দৌড়ে তার দলের জায়গায় চলে আসতে। বউ প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়ের কোনো রকম ছোঁয়া ছাড়া নির্দিষ্ট স্থানে চলে এলে বউয়ের দল জয়ী। যদি আসার সময় প্রতিপক্ষের কোনো খেলোয়াড় ছুঁয়ে দেয়, তবে প্রতিপক্ষ জয়ী।

এসইউ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।