আয়কর রিটার্ন কীভাবে ফাইল করবেন?

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:৪০ পিএম, ১৫ মে ২০২৪

মোছা: ছাবিকুন নাহার

ট্যাক্স বা আয়কর রিটার্ন হলো সরকার কর্তৃক নির্ধারিত একটি কাঠামোবদ্ধ ফরম যার মধ্যে করদাতা তার আয়-ব্যয়, সম্পদ ও দায়ের তথ্য লিখে আয়কর অফিসে দাখিল করেন। ব্যক্তি শ্রেণির করদাতা ও কোম্পানি করদাতাদের জন্য পৃথক রিটার্ন রয়েছে।

প্রতিবছর আয়কর রিটার্ন জমা দেন কয়েক লাখ ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান। সাধারণত প্রতি অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাস জরিমানা ছাড়া বার্ষিক আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া যায়। জরিমানা ছাড়া রিটার্ন জমা দেওয়া যায় সরকারের দেওয়া নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। এছাড়া বছরের অন্যান্য সময়ও আপনি আয়কর রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে কিছু জরিমানা গুনতে হতে পারে।

বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী যাদের ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর বা টিআইএন রয়েছে তাদের জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক। তবে রিটার্ন দাখিল করলেই যে আয়কর দিতে হবে তা নয়। কারও আয় যদি করযোগ্য না হয় তাহলে কর দেওয়ার প্রয়োজন নেই, শুধু রিটার্ন জমা দিলেই হবে।

জেনে নিন আয়কর প্রদানের জন্য আয়ের সাত উৎস

১. বেতন ও দেওয়ানি আয়: কোনো নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন বা দেয়ানি আয়।
২. ব্যবসা বা পেশা: ব্যবসা বা পেশা থেকে আয়, যেমন ব্যবসা লাভ বা সেবা চার্জ।
৩. স্বত্বাধিকার: সম্পত্তির বিক্রয় বা বিনিয়োগের জন্য অর্জিত আয়।
৪. রেভেনিউ শেয়ারিং: মূল্যায়ন বা লোন দেওয়া ব্যাংক থেকে অর্থ আয় প্রাপ্তি।
৫. সুচি আয়: আধারভূত সঞ্চয়ের সুচি থেকে প্রাপ্ত লাভ।
৬. বৈদেশিক আয়: বিদেশ থেকে প্রাপ্ত কোনো আয়, যেমন বিদেশ থেকে প্রাপ্ত বেতন বা বৃত্তি।
৭. অন্যান্য আয়: অন্যান্য উৎস যেমন বৃদ্ধি, ভূমিহীন লেনদেন, সম্পত্তির কোম্পানি বা অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে অর্জিত আয়।

আরও পড়ুন

আয়করের আয় প্রাপ্তি হবে এমন আরও কিছু আয়-

• বৈদেশিক সঞ্চয়: বিদেশে একাউন্ট বা নির্বাচিত সঞ্চয়ে অর্থ সঞ্চয় করা।
• বিনিয়োগ: স্টক মার্কেটে নিবেশ করা, বা অন্যান্য বিনিয়োগের মাধ্যমে লাভ প্রাপ্তি।
• সম্পত্তির বিক্রয়: সম্পত্তির বিক্রয় থেকে লাভ, যেমন বা কৃষিজমি বা সম্পত্তির মূল্যায়ন প্রাপ্তি।
• কি-বন্ড: কো-বেনেটিক উৎপাদন থেকে লাভ প্রাপ্তি, বা প্রতিষ্ঠানের আয় ভাগ করা থেকে অর্জিত আয়।
• সম্পত্তির লোন: ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক লোন প্রাপ্তি, যেমন হাউস লোন বা ব্যবসায়িক ঋণ।
• মুদ্রা প্রাপ্তি: বিদেশে মুদ্রা ক্রয় করে বা বিদেশে বিনিয়োগ করে লাভ প্রাপ্তি।
• সম্পত্তির উপভোগ: বাণিজ্যিক সম্পত্তি বা বাণিজ্যিক ভাড়া থেকে আয় প্রাপ্তি।
• অন্যান্য আয়: সম্পত্তির সূচিপত্র, লটারি বা অন্যান্য অপ্রত্যাশিত আয়ের সূত্র।

আয়করের আয়ের সূত্র নির্বাচন করার সময়, এগুলোর সঠিক তথ্য প্রদানের জন্য সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।

এবার জেনে নিন আয়কর রিটার্ন কীভাবে ফাইল করবেন

• আয়কর রিটার্ন ফাইল করতে হলে প্রথমে আয়ের তথ্য সংগ্রহ করতে হয়, যেমন আয় প্রমাণপত্র, আয়কর স্লিপ, ব্যাংক বিবরণ, লোন ও বীমা তথ্য ইত্যাদি। এরপর রেজিস্টার করে অনলাইনে বা অফলাইনে আপনার কর রিটার্ন ফাইল করতে হবে। অফলাইনে হলে নিকটস্থ কর অফিসে যেতে হবে এবং অনলাইনে হলে ই-ফাইলিং সেবার মাধ্যমে ফাইল করতে হবে। এই সেবাগুলোর সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

• আয়কর রিটার্ন ফাইল করার সময় ট্যাক্স রিটার্ন ফর্ম ঠিকমত পূরণ করা জরুরি। আয়ের তথ্য, বিনিয়োগ সম্পর্কিত তথ্য, সর্বশেষ আয়কর স্লিপগুলো ইত্যাদি সঠিকভাবে সংগ্রহ করতে হবে। শেষ পর্যন্ত, আপনি সঠিক সময়ে আপনার আয়কর রিটার্ন ফাইল করার দায়িত্ব নিতে সতর্ক থাকুন যাতে কোনো জরিমানা বা অসুবিধা না হয়।

• আপনার ফাইল সঠিকভাবে প্রসেস করা হয়েছে তা নিশ্চিত করতে অনলাইনে অথবা অফলাইনে প্রমাণপত্র পাওয়ার জন্য আপনি আয়কর দফতরে যেতে পারেন। যদি কোনো অনিয়ম থাকে, তবে নিদিষ্ট সময়ে প্রতিক্রিয়া দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি কোনো কার্যক্রম বা পদক্ষেপে সমস্যা অনুভব করেন তবে শিগগির আপনার আয়কর প্রদানের বিষয়ে নিকটস্থ আয়কর পেশা বা ব্যবস্থাপনা অফিসে যোগাযোগ করুন।

কর ব্যবস্থায় বিনিয়োগ ভাতা

কর ব্যবস্থায় বিনিয়োগ ভাতা হলো বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানের লাভের একটি অংশ। এই ভাতা আপনার প্রাপ্ত লাভ বা আয়ের একটি নির্দিষ্ট শতাংশের মধ্যে কর হিসেবে দেওয়া হয়। এই ধরনের ভাতা সাধারণত নিবন্ধিত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান বা সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে প্রদান করা হয়। এটি নিজস্ব প্রাপ্ত আয়ের উপর নির্ভর করে, অর্থাৎ আপনি যদি লাভ করেন তবে আপনার বিনিয়োগ ভাতা হিসেবে কর প্রদান করতে হবে। এই ভাতা আধুনিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানে অধিক প্রায় হতে পারে।

বিনিয়োগ ভাতা প্রদানের নির্দিষ্ট শর্তাবলী-
১. লাভের শর্ত: কিছু ক্ষেত্রে, বিনিয়োগ ভাতা প্রদান করা যেতে পারে মূল প্রাপ্তির নির্দিষ্ট শর্তাবলী অনুসারে, যেমন নির্দিষ্ট পারফর্মেন্সের উপর ভিত্তি করে।

২. মৌখিক অবদান: কিছু প্রতিষ্ঠান আপনার মৌখিক অবদানের উপর ভিত্তি করে বিনিয়োগ ভাতা প্রদান করতে পারে।

৩. বিনিয়োগের ধরণ: কিছু বিনিয়োগে বিনিয়োগ ভাতা প্রদান করা যেতে পারে, যেমন নির্দিষ্ট মানের শেয়ারগুলো কিনতে বা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মূলধন রাখতে।

৪. পরিষেবা কর্মীদের জন্য: কিছু ক্ষেত্রে, বিনিয়োগ ভাতা প্রদান করা হতে পারে আপনার বিনিয়োগের পরিষেবা কর্মীদের জন্য যেমন-ব্যাংকার ইত্যাদি।

লেখক: শিক্ষার্থী, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগ, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালস

আরও পড়ুন

কেএসকে/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।