পশ্চিম থেকে কী এসেছে, ‘নারী-অধিকার’ নাকি ‘অধিকার-হরণ’

অধরা মাধুরী পরমা অধরা মাধুরী পরমা , সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ০৯:৪১ পিএম, ২৬ আগস্ট ২০২৫
লক্ষ্মীবাঈ, রাজিয়া সুলতান, বাংলার রানি ভবানী। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকার মেট্রোরেলে স্যানিটারি ন্যাপকিনের বিজ্ঞাপন নিয়ে সম্প্রতি আলোচনা-সমালোচনা ও ট্রল হতে দেখা যাচ্ছে ফেসবুকে। একজনকে লিখতে দেখা গেছে, ‘আজ দেখলাম পুরুষ কামরায় (মেট্রোরেলে) কিন্তু সেনোরা প্যান্টির বিজ্ঞাপন। সাথে আমার ফুপা ছিল। উনি কী ভাববেন? আমরা কি এসব নরমালাইজ করছি পশ্চিমা ইন্ধনে?’

শুধু এই বিষয় কেন! সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘নারী-অধিকার’ নিয়ে যত পোস্ট, সেসবের মন্তব্যে গিয়ে দেখা যায় কেউ না কেউ একে ‘পশ্চিমা সংস্কৃতি’ বলে অ্যাখ্যা দিচ্ছেন। মজার কথা হলো — ‘নারী-অধিকার’ এই ভূখণ্ডে প্রবেশের জন্য যদি পশ্চিমা ইন্ধনের অপেক্ষা করতো, তাহলে আমরা অন্তত সাত শ বছর পিছিয়ে যেতাম।

যুক্তরাষ্ট্রে আজ (২৬ আগস্ট) ন্যাশনাল উইমেন্স ইক্যুয়ালিটি ডে, অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নারী সমঅধিকার দিবস। ১৯২০ সালের এই দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নারীরা প্রথম ভোটাধিকার পান। ঘটনাটি নিঃসন্দেহে বিশ্বের সব নারীর জন্য একটি বড় অর্জন। বিশ্বের বিভিন্ন সংস্কৃতিতে নারী এখনও ভিন্ন ভিন্ন ইস্যু নিয়ে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। তাই বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে কোনো বিষয়ে নারীর জয় মানে, সব নারীর জয়।

তাকানো যাক এই উপমহাদেশের দিকে। ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম নারী শাসক ছিলেন রাজিয়া সুলতান, যিনি ১২৩৬ সালে দিল্লির সিংহাসনে বসেছিলেন। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের নারীরা ভোটাধিকার পাওয়ারও প্রায় সাত শ বছর আগে।

১৭৪৮ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর নাটোরের জমিদারির দায়িত্ব নিয়েছিলেন রানি ভবানী। ‘অর্ধবঙ্গেশ্বরী’ নামে পরিচিত এই শাসককে প্রজারা মহারানি বলে ডাকতেন।

ব্রিটিশ শাসনামলে নিজ ভূমির জন্য লড়াই করা জনপ্রিয় এক নারী ছিলেন ঝাঁসীর রানি লক্ষ্মীবাই। ১৮৫৭ সালের ভারতীয় বিদ্রোহ ও গোয়ালিয়র দখলের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তার নাম।

শুধু শাসক কেন, সাধারণ মানুষের জীবনযাপন, পেশা ও সংস্কৃতির দিকে তাকালে নারীর অংশগ্রহণ ও গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়। সনাতন ধর্মের মহাশক্তিধর দেবী-অবতার থেকে শুরু করে বিভিন্ন আদিবাসী গোষ্ঠীতে মাতৃতান্ত্রিক পরিবার ও সংস্কৃতির উদাহরণ দেখা যায়।

আবার বাউল গান কিংবা লালনগীতিতে নারীকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে প্রজ্ঞার আলো হিসেবে। ফলে নারী-অধিকার বা নারী-পুরুষের সমঅধিকার আমাদের জন্য ‘আমদানিকৃত’ মূল্যবোধ নয়, বরং এটি আমাদের সংস্কৃতির শিকড়ে থাকা সত্য।

ইতিহাসে যাই থাকুক। বাস্তবে নারী-অধিকার বরং এক উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি। কারণ :

# নারী শ্রমশক্তি বাড়লেও পুরুষের সমান মজুরি এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।
# উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে ধর্ষণ।
# নারীর নিরাপত্তা, বিশেষ করে জনপরিসরে হয়রানি বা সহিংসতার ঘটনা ঘটছে প্রতিদিন।
# ডিজিটাল অগ্রগতির যুগে অনলাইনে হয়রানি, সাইবার বুলিং নারীর স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
# বাল্যবিবাহ এখনো বিলুপ্ত হয়নি।

এই বাস্তবতা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ঐতিহাসিক গৌরব থাকলেও সমতার চর্চা এখনো অসম্পূর্ণ। তাই এখন প্রশ্নটি থেকেই যায় যে, নারী-অধিকার কি সত্যিই পশ্চিমাদের কাছ থেকে ধার করেছে এই ভূখণ্ডের মানুষ? নাকি অধিকার হরণ করা?

এএমপি/আরএমডি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।