চলন্ত গাড়িতে বিপদজনক ঘুম!
‘মরা না জিন্দা’। শাহবাগ সিগন্যালে থেমে থাকা বাসের চালক উচ্চস্বরে হেলপারকে প্রশ্ন করেন। জিন্সের প্যান্ট আর লাল রংয়ের সেন্ডি গেজি পরিহিত হেলপার দাঁত কেলিয়ে জবাব দেয়, ওস্তাদ হালার বুইড়া যেমতে হুইয়া ঘুমাইতাছে, হালায় পিকআপ ভ্যানের ওপরে থাইক্যা পইড়্যা মরবো। কারওয়ান বাজার থেকে শাহবাগগামী রাস্তায় যত বাস, প্রাইভেটকার, সিএনজিচালিত ট্যাক্সি ও মোটরসাইকেল আরোহী সকলের দৃষ্টি পিকআপ ভ্যানটির ওপর।
কারণ ভ্যানটির ওপর সটান লম্বা হয়ে শুয়ে আছেন মধ্যবয়সী এক বৃদ্ধ। পায়ে প্লাষ্টিকের জুতা, কাছা মারা লুঙ্গি উঠে আছে হাঁটুর ওপর। আকাশি রংয়ের গেঞ্জিটি উঠে আছে বুকের কাছাকাছি পর্যন্ত। তার দিকে সবার দৃষ্টির কারণ পিকআপ ভ্যানটির পেছন দিকটার অধিকাংশ জায়গা জুড়ে দড়ির স্তুুপ। যতটুকু ফাঁকা আছে তাতে দুটি বাঁশ ও কয়েকটি লোহার দণ্ড দেখা গেল। সবার চিন্তা এ জন্য যে চলন্ত গাড়ি থেকে যে কোন সময় বৃদ্ধ পড়ে গিয়ে বড় দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন।
কৌতুহলবশত এ প্রতিবেদক কারওয়ান বাজার থেকে ভ্যানটি অনুসরণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি পর্যন্ত একটিবারের জন্য বৃদ্ধকে নড়াচড়া করতে দেখেননি। দ্রুত গতিতে গাড়ি চললেও সুখের নিদ্রা যাচ্ছিলেন ওই বৃদ্ধ। ভ্যান গাড়িতে পুরান ঢাকার ঠিকানায় পেয়ারা সন্স অ্যান্ড ডেকোরেটর লেখা দেখা যায়।
টিএসসির সামনে পিকআপ ভ্যানের চালক জাগো নিউজকে বলেন, তাদের কর্মচারীরা সারাদিন পরিশ্রম করে এতটাই ক্লান্ত থাকেন যে দূরের কোন অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে দুদিকের লোহার সাথে গামছা ও দড়ি দিয়ে নিজের শরীর বেঁধে ঘুমিয়ে পড়েন। গাড়ি থেকে পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কার কথা স্বীকার না করলেও ড্রাইভার উচু নিচু রাস্তা ও স্পিড ব্রেকার দেখেশুনে চালান বলে মন্তব্য করেন।
এমইউ/এআরএস