সেমিনারে বক্তারা

এমন দিন আসবে সবাই ঘরে বসে ব্লাড প্রেসার মাপবে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:৫০ পিএম, ০৮ জানুয়ারি ২০২৩

সময়ের পরিক্রমায় রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেসার মাপতে ডিজিটাল মেশিনের চাহিদা বাড়ছে। চিকিৎসকরা মনে করেন, ভবিষ্যতে এমন দিন আসবে যখন সবাই ঘরে বসে ব্লাড প্রেসার মাপবে। চিকিৎসকদেরও সঠিকভাবে ব্লাড প্রেশার মাপা জানা উচিৎ বলে পরামর্শ দেন তারা।

রোববার (৮ জানুয়ারি) সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ‘হাইপারটেনশন’ মাসিক সেন্ট্রাল সেমিনার অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। বিএসএমএমইউ সেন্ট্রাল সাব-কমিটি এ সেমিনার আয়োজন করে।

সেমিনারে বলা হয়, শুধু বাংলাদেশ নয় সারাবিশ্বের একটি বড় সমস্যা উচ্চ রক্তচাপ। উচ্চ রক্তচাপসহ সব রোগের চিকিৎসা শুরু হয় রোগ নির্ণয়ের প্যারামিটার বা পরিমাপ দিয়ে। এজন্য পরিমাপটা যথাযথ হতে হয়। ব্লাড প্রেসার মাপার পূর্বশর্ত হলো, সঠিক মাপের কাপ ব্যবহার করা। ব্লাড প্রেসার অবশ্যই দু’হাতের বাহুতে মাপতে হবে। যদি দুটি হাতের প্রেসারের তারতম্য থাকে তবে অবশ্যই যেটির প্রেসার বেশি সেটি সঠিক পরিমাপ হিসেবে নিতে হবে।

চিকিৎসার সময় ঠিকমত প্রেসার না মাপতে পারলে বিপর্যয় ঘটতে পারে। প্রেসার মাপার দুই ধরনের বিপি মেশিন রয়েছে। ম্যানুয়াল স্ফিগমোম্যানোমিটার ও ডিজিটাল স্ফিগমোম্যানোমিটার। ম্যানুয়াল স্ফিগমোম্যানোমিটারের আবার দুটি ধরণ আছে। যা কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই এটি ব্যবহার করা যায়। তবে পরিবেশের কথা চিন্তা করে ধীরে ধীরে মার্কারি স্ফিগমোম্যানোমিটার বাদ দেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে যতগুলো প্রেসার মাপার যন্ত্র আসছে সেগুলো চাহিদা মাফিক মানদণ্ডের নয়।

বক্তারা বলেন, রোগীর জন্য নির্ধারিত প্রেসক্রাইভড ওষুধ খেতে হবে। এজন্য সব জায়গায় সরকারি ওষুধ সরবরাহ বাধ্যতামূলক করতে হবে। হাইপারটেনশন প্রতিরোধের জন্য ধূমপান বন্ধ, অ্যালকোহল পান বন্ধ করা ও নিয়মিত শরীরচর্চা করা উচিত। এছাড়া ওজন কমানো, হৃদরোগ প্রতিরোধে খাবার লবণ কম খাওয়া, প্রতিদিন সবজি বা ফল খাওয়া, খাদ্যে স্বাস্থ্যসম্মত তেল ব্যবহার, লাল মাংস কম খাওয়া, সুগার কম খাওয়া, মাছ খাওয়া এবং ওমেগা ও ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার সপ্তাহে দু’বার খাওয়া যেতে পারে।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা সেন্ট্রাল সেমিনারে জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করে থাকি, যা সবার জন্য প্রযোজ্য। আজকের বিষয় হাইপারটেনশন। আমাদের এখানে ৫৭টি বিভাগের সবার হাইপারটেনশন নিয়ে জ্ঞান থাকা লাগে। অপারেশন করার আগে ব্লাড প্রেসার বেশি থাকলে অপারেশন করা যায় না। যে রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন, সে রোগীর কত পর্যন্ত ব্লাড প্রেসার রাখা লাগবে তা অবশ্যই চিকিৎসককে জানতে হবে। প্রেসার একেকজনের একেকরকম হয়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের এক-চতুর্থাংশ মানুষ হাইপারটেনসিভ। হাইপারটেনশন যেন না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। হাইপারটেনশন হলে হার্ট অ্যাটাক হবে, কার্ডিও মাইয়োপ্যাথি হবে, নিউরোলজিক্যাল ডিস অর্ডার হয়ে স্ট্রোক হবে, চোখে রেটিনোপ্যাথি হবে ও নেত্রোপ্যাথি হবে।

ডা. শারফুদ্দিন বলেন, যারা বয়স্ক তাদের অবশ্যই নিয়মিত ব্লাড প্রেসার মাপতে হবে। যাদের বয়স তিন থেকে দশ বছর তাদের ব্লাড প্রেসার মাপতে হবে। যারা মোটা তাদের নিয়মিত প্রেসার চেক আপ করতে হবে। যারা সুগার খান তাদের মাঝে মাঝে প্রেসার চেক আপ করতে হবে।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ইউজিসি অধ্যাপক হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সজলকৃষ্ণ ব্যানার্জী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সেন্ট্রাল সাব-কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. বেলায়েত হোসেন সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সেন্ট্রাল সাব-কমিটির সদস্য সচিব নিউরোলজি বিভাগের সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ সবুজ ও রেসপেরিটোরি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সম্প্রীতি ইসলাম।

সেমিনারে বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, বিভিন্ন স্তরের শিক্ষক, কনসালটেন্ট, চিকিৎসক ও রেসিডেন্টরা উপস্থিত ছিলেন।

এএএম/এমকেআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।