ডায়াবেটিস রোগীদের বছরে একবার চোখের রেটিনা পরীক্ষার আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:৩০ পিএম, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩

‘ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি ধরা পড়লে তা একেবারে সারানো যায় না। তবে নিয়মিত চিকিৎসা, থেরাপি ও পরীক্ষার মাধ্যমে চোখের ক্ষতি এড়ানো যায়। ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি গুরুতর পর্যায়ে গেলে অপারেশন বা লেজার থেরাপি ছাড়া উপায় থাকে না। রেটিনায় রোগ প্রতিরোধ করার জন্য ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকলে বছরে একবার রেটিনা পরীক্ষা করাতে হবে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতেই হবে, একই সঙ্গে বছরে একবার রেটিনা পরীক্ষা করাতে হবে।’

রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগ ও বাংলাদেশ ভিট্রিওরেটিনা সোসাইটির যৌথ উদ্যোগে ‘ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি, অযত্নে বাড়ে চোখের ক্ষতি’ প্রতিপাদ্য নিয়ে বিশ্ব রেটিনা দিবস ২০২৩ পালিত হয়। দিবসটি উপলক্ষে শোভাযাত্রা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগে সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

শোভাযাত্রায় অংশ নিয়ে বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগ ও কমিউনিটি অফথালমোলজি বিভাগে চোখের সব ধরনের রোগের উন্নত চিকিৎসাসেবা রয়েছে। তিনি বলেন, যেকোনো দিবস পালনের উদ্দেশ্য হলো জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে চোখের অনেক ক্ষতি হয়। তাই ডায়াবেটিসের রোগীদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার সঙ্গে সঙ্গে নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষা করা উচিত।

আরও পড়ুন> ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৯০০ ছুঁই ছুঁই

সেমিনারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ডায়াবেটিস রোগীদের বছরে কমপক্ষে একবার চক্ষু চিকিৎসকদের মাধ্যমে চোখের রেটিনা পরীক্ষা করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

সেমিনারে বলা হয়, পৃথিবীতে যেসব কারণে অন্ধত্ব হয়, ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি তার অন্যতম কারণ। ডায়াবেটিসে হার্ট, চোখ এবং কিডনির ওপর প্রভাব পড়ে সবচেয়ে বেশি। ডায়াবেটিসের প্রভাবে অন্ধত্ববরণও করতে পারেন, যাকে বলা হয় ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি। ডায়াবেটিস চোখের সব অংশের তুলনায় রেটিনায় বেশি ক্ষতি করে। যার যত বেশিদিন ধরে ডায়াবেটিস রয়েছে, তার রেটিনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তত বেশি। দীর্ঘদিন ধরে যারা ডায়াবেটিসে ভোগেন, তাদের দৃষ্টিশক্তি ক্রমেই কমতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে তৈরি হয় ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির মতো রোগ।

এতে আরও বলা হয়, কারো ১০ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে ডায়াবেটিস থাকলে এই রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। রোগটি একেবারে শেষ পর্যায়ে ধরা পড়লে বিশেষ কিছু করার থাকে না। ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির লক্ষণের মধ্যে রয়েছে চোখে ঝাপসা দেখা, চোখের সামনে ভাসমান কিছু দেখা, দৃষ্টিসীমানার যেকোনো অংশ কালো দেখা, আস্তে আস্তে (একসঙ্গে অথবা পর্যায়ক্রমে দুই চোখ) দৃষ্টি কমে যাওয়া, ভিট্রিয়াসে রক্তপাতের কারণে হঠাৎ করে এক চোখ দৃষ্টিহীন হতে পারে, রেটিনায় পানি জমে ফোলার কারণে দৃষ্টি ঝাপসা হওয়া, দেখতে অসুবিধা, রং আলাদা করতে অসুবিধা, চোখের চাপ বেড়ে গিয়ে ব্যথা অনুভব, দৃষ্টিহীনতা ইত্যাদি।

আরও পড়ুন> ডেঙ্গু আক্রান্ত স্বামী-স্ত্রী হাসপাতালে, সন্তানরা বাড়িওয়ালার কাছে

প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে বলা হয়, ডায়াবেটিস ধরা পড়ার পর থেকে নিয়মিত প্রতিবছর একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ বা রেটিনা বিশেষজ্ঞ দ্বারা চোখের রেটিনা পরীক্ষা করা, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা, রক্তচাপ থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা, রক্তের চর্বির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, নিয়মিত হাঁটা ও ব্যায়াম, নিয়মিত ওষুধ সেবন, দুশ্চিন্তা ও বিষণ্নতা থেকে দূরে থাকা, ধূমপান ছেড়ে দেওয়া।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক রেটিনা স্পেশালিস্ট ও সার্জন এবং বাংলাদেশ ভিট্রিওরেটিনা সোসাইটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ডা. মো. আফজাল মাহফুজউল্লাহর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আব্দুল ওয়াদুদ, বাংলাদেশ ভিট্রিওরেটিনা সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. আবুল বাশার শেখ, কমিউনিটি অফথালমোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. শওকত কবীর, চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক অধ্যাপক ডা. নুজহাত চৌধুরী, বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ভিট্রিওরেটিনা সোসাইটির সহ-সভাপতি ডা. তারিক রেজা আলী, বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ভিট্রিওরেটিনা সোসাইটির মহাসচিব ডা. শাহানুর হাসান প্রমুখ।

এএএম/এসএনআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।