ভারতে তুষারধস, ধাতব কনটেইনার থেকে ৪৬ জনকে জীবিত উদ্ধার
ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যে ভয়াবহ তুষারধসের পর ধাতব কনটেইনারের নিচে চাপা পড়া বহু নির্মাণশ্রমিককে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) উত্তরাখণ্ডের মানা গ্রাম সংলগ্ন একটি নির্মাণশিবিরে তুষারধসের ঘটনা ঘটে। এতে ৫৪ জন শ্রমিক আটকা পড়েন।
ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধাতব কনটেইনারগুলোর ভেতরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন থাকায় শ্রমিকরা প্রায় দুই দিন ধরে জীবিত থাকতে পেরেছেন। প্রায় ৬০ ঘণ্টার চেষ্টায় চালানো উদ্ধার অভিযানে আটকা পড়াদের মধ্যে ৪৬ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এই ঘটনায় আটজন শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন।
উদ্ধারকারী দলের একজন সদস্য দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, শ্রমিকরা যে ধাতব কনটেইনারে অবস্থান করছিলেন, তা তাদের জীবন বাঁচিয়েছে। কনটেইনারগুলোর ভেতরে সামান্য অক্সিজেন ছিল, যা তাদের টিকে থাকতে সহায়তা করেছে।
দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তুষারধসের তীব্রতায় আটটি ধাতব কনটেইনার ও একটি শেড নিচে গড়িয়ে পড়ে।
উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি কঠিন পরিস্থিতিতে উদ্ধার অভিযানে অংশ নেওয়া দলগুলোকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
ভারতীয় সেনাবাহিনী, জাতীয় ও রাজ্য দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী এবং স্থানীয় প্রশাসনের যৌথ প্রচেষ্টায় শ্রমিকদের উদ্ধারের অভিযান চালানো হয়। এতে হেলিকপ্টার ও ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে।
উদ্ধার হওয়া শ্রমিকদের মধ্যে অনেকেই বর্তমানে জোশীমঠ ও ঋষিকেশের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
উত্তর প্রদেশের অভিবাসী শ্রমিক সত্যপ্রকাশ যাদব বলেন, তুষারধস আমাদের কনটেইনারে আছড়ে পড়লে মনে হয়েছিল যেন ভূমিধস হয়েছে। কনটেইনারটি ভেঙে নদীর কাছে গিয়ে পড়ে।
অন্যদিকে উত্তরাখণ্ডের পিথোরাগড়ের শ্রমিক রজনীশ কুমার জানান, তুষারধস যখন আঘাত হানে, তখন আমরা ঘুমাচ্ছিলাম। কনটেইনারটি প্রায় ৫০-৬০ মিটার নিচে নেমে যায়। সেনাবাহিনী দ্রুত এসে আমাদের উদ্ধার করে।
মানা গ্রামের সাবেক গ্রাম পরিষদ সদস্য গৌরব কুনওয়ার জানান, যেখানে তুষারধস হয়েছে, সেখানে কোনো স্থায়ী বসতি নেই। সাধারণত শীতের সময় সীমান্ত সড়ক নির্মাণে কাজ করা শ্রমিকরা সেখানে অবস্থান করেন।
এদিকে, ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড ও জম্মু-কাশ্মীরে মঙ্গলবার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত ও তুষারপাতের সতর্কতা জারি করেছে।
পরিবেশবিদরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে চরম আবহাওয়ার মাত্রা আরও তীব্র ও অনির্দেশ্য হয়ে উঠছে। পাশাপাশি, উত্তরাখণ্ডের পার্বত্য অঞ্চলে ব্যাপক বন উজাড় এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে।
এর আগে, ২০২১ সালে হিমালয়ের একটি হিমবাহের অংশ ভেঙে নদীতে পড়ে ব্যাপক বন্যার সৃষ্টি হয়, যাতে প্রায় ১০০ জন প্রাণ হারান।
সূত্র: বিবিসি
এসএএইচ