নিউইয়র্ক টাইমসের বিরুদ্ধে ‘গাজা গণহত্যায় সহযোগিতা’র অভিযোগ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:২৭ এএম, ২১ জুলাই ২০২৫
গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে ইসরায়েল/ ছবি: এএফপি

মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস গাজায় গণহত্যার সহযোগী বলে অভিযোগ তুলেছে গাজায় যুদ্ধবিরোধী লেখকদের সংগঠন রাইটারস এগেইনস্ট দ্য ওয়ার অন গাজা (ডব্লিউএজিওজি)। সংগঠনটির দাবি, পদ্ধতিগতভাবে ইসরায়েলপন্থি ও ফিলিস্তিনবিরোধী অবস্থান ধারণ করে পত্রিকাটি। তাছাড়া এর শীর্ষস্থানীয় বেশ কয়েকজন সাংবাদিক, সম্পাদক ও নির্বাহী সদস্যের প্রভাবশালী ইসরায়েলপন্থি লবিং গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এ বিষয়ে নানা তথ্যপ্রমাণসহ একটি নথিও প্রকাশ করেছে ডব্লিউএজিওজি।

গাজায় যুদ্ধবিরোধী লেখকদের ওই সংগঠন থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নিউইয়র্ক টাইমস গাজায় চালানো গণহত্যার সহযোগী। তারা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করে এবং বৈদেশিক নীতিতে অভিজাতদের মধ্যে ঐকমত্য তৈরি করছে।

নিউইয়র্ক টাইমসসহ আরও বেশকিছু মূলধারার সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এই সংবাদমাধ্যমগুলো গাজায় করা ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধকে পদ্ধাতিগতভাবে ঢাকার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ আনা হয়েছে।

মিডল ইস্ট আইয়ের খবরে বলা হয়েছে, গত বুধবার (১৬ জুলাই) ডব্লিউএজিওজির প্রকাশিত ওই নথিটিতে শুধু আদর্শগত বা বস্তুগত জায়গা থেকে সম্পৃক্ততা নয়, বরং ইসরায়েল সমর্থিত বিভিন্ন লবিং গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।

সেখানে বলা হয়েছে, গণহত্যা, জাতিগত নিধন, অধিকৃত ভূমি, এমনকি ফিলিস্তিন শব্দটি পর্যন্ত না লিখতে সংবাদকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস।

ডব্লিউএজিওজির মুখপাত্র জানান, এ পর্যন্ত তাদের নথিতে দখলদারত্ব ও বৈষম্যমূলক ব্যবস্থার সঙ্গে বস্তুগত সম্পর্কের বিষয়টিই তুলে ধরা হয়েছে। তবে এবার তারা মতাদর্শগত আলোচনাও এতে অন্তর্ভুক্ত করেছে।

সংগঠনটি জানায়, তাদের এই অনুসন্ধান মূলত মন্ডোওয়াইস ও দ্য ইলেকট্রনিক ইন্তিফাদার আর্কাইভ ও ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে সংগৃহীত হয়েছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে গাজায় আগ্রাসন শুরু করে ইসরায়েল। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় এই যুদ্ধে ইসরায়েলের সঙ্গে নিউ ইয়র্ক টাইমসের লবিং নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে ডব্লিউএজিওজি।

সংস্থাটির অভিযোগ, ইসরায়েলে সঙ্গে গভীর সম্পর্কই গাজা যুদ্ধে নিউইয়র্ক টাইমসকে পক্ষপাতমূলক সংবাদ পরিবেশনে প্রভাবিত করেছে। নিউইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিকদের ব্যক্তিগতভাবে বা নিকট আত্মীয়ের মাধ্যমে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি উল্লেখ না করা এই পেশার নৈতিকতার মৌলিক নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

ডব্লিউএজিওজির দাবি, এমন কিছু মানুষকে নিউইয়র্ক টাইমস প্রচারের সুযোগ দিয়েছে, যারা জায়নিস্ট প্রকল্প (ইহুদি প্রকল্পকে) সমর্থন করেন। এর মধ্য দিয়ে তারা আসলে গাজায় পরিচালিত ইসরায়েলি ‘গণহত্যার কল্পনাকেই’ সমর্থন করেছে।

বিভিন্ন বিশ্লেষক ও মানবাধিকার সংস্থার অভিযোগ, গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন ও যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনের সমর্থনে ছাত্র আন্দোলনের সময় মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলো যেভাবে সংবাদ প্রচার করেছে, তা কেবল ভুল তথ্য দেয়নি, বরং সাংবাদিকতার নীতি লঙ্ঘনের পর্যায়ে চলে গেছে।

পশ্চিমা গণমাধ্যমগেুলোর বিরুদ্ধে আরও একটি অভিযোগ হলো, তারা শিরোনামের ক্ষেত্রে মূল তথ্যকে আড়াল করার চেষ্টা করছে। তাছাড়া, ফিলিস্তিনিদের মৃত্যুর বর্ণনায় অনেকটা নিষ্ক্রিয়ভাব দেখা গেছে।

২০২৪ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত ইন্টারসেপ্ট-এর একটি গবেষণায় দেখা গেছে, নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট এবং লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ নিয়ে পক্ষপাতমূলক সংবাদ প্রচার করেছে। ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে অনেক বেশি কভারেজ দিলেও ইসলামবিদ্বেষ নিয়ে একই রকম ভূমিকা তাদের দেখা যায়নি।

এছাড়া ২০২৪ সালের অক্টোবরে বিবিসি ও সিএনএনের কয়েকজন সাংবাদিক আল জাজিরার ‘লিসেনিং পোস্ট’ অনুষ্ঠানে জানান, তাদের নিউজরুমগুলো নিয়মিতভাবে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে ব্যর্থ হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা অভিযোগ করেন, জ্যেষ্ঠ সম্পাদকরা জেনেশুনেই সংবাদ প্রচারের সময় ইসরায়েলের অতিরঞ্জিত পদক্ষেপগুলোকে হালকাভাবে দেখানোর চেষ্টা করেছেন।

ডব্লিউএজিওজির তথ্যমতে, এসব সংবাদমাধ্যমে অনেক কর্মী আছেন, যারা হয় একসময় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে ছিলেন অথবা তাদের সন্তানরা ছিলেন। তারা প্রতিনিয়ত মিথ্যা ও যুদ্ধাপরাধকে বৈধ করতে নানাভাবে চেষ্টা করছেন।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে শান্তির জন্য কাজ করা আমেরিকান ফ্রেন্ডস সার্ভিস কমিটি (এএফএসসি) নিউইয়র্ক টাইমসে একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশ বাতিল করে দেয়। ইসরায়েল যে গাজায় গণহত্যা চালিয়েছে, সংবাদমাধ্যমটি তা স্বীকার করতে অস্বীকৃতি জানানোর পর এই সিদ্ধান্ত নেয় ওই কমিটি।

এএফএসসির জেনারেল সেক্রেটারি জয়েস আজলিউনি বলেন, ফিলিস্তিনি ও তাদের মিত্রদের বহু দশক ধরেই গণমাধ্যমে দমিয়ে রাখা হয়েছে; তাদের চুপ করিয়ে রাখা হয়েছে। কারণ এসব প্রতিষ্ঠানগুলো জবাবদিহিতা নয়, বরং নীরবতাকেই বেছে নিয়েছে। এই বাস্তবতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েই কেবল অধিক ন্যায়ভিত্তিক ও সমতাপূর্ণ বিশ্বের পথে এগিয়ে যাওয়া যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তবে ডব্লিউএজিওজির এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে নিউইয়র্ক টাইমস। ন্যায্য ও নিরপেক্ষ সংবাদ সংগ্রহ ও প্রচারের কারণে সাংবাদিক ও গণমাধ্যম পরিচালকদের আতঙ্কিত করার উদ্দেশ্যেই এই জঘন্য অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পত্রিকাটির এক মুখপাত্র।

তিনি বলেন, নিউইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিকতার নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু নিয়ে সমালোচনা করার বদলে ব্যক্তির ধর্মবিশ্বাস বা কোনো গোষ্ঠী বা দেশের সঙ্গে সম্পৃক্ততার মতো বিষয় নিয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণ ও ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করছে ডব্লিউএজিওজি।

পত্রিকাটির সংবাদ সংগ্রহ ও উপস্থাপনকে অবমাননা বা অযোগ্য প্রমাণ করার জন্যই এসব করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ওই মুখপাত্র।

সূত্র: ইউএনবি

টিটিএন

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।