চীনের সঙ্গে সম্পর্কের অভিযোগ, ইন্টেল সিইওর পদত্যাগ চান ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি খাতের অন্যতম প্রধান প্রতিষ্ঠান ইন্টেলের নতুন সিইও লিপ-বু টানকে ‘চীনের সঙ্গে গভীরভাবে সংশ্লিষ্ট’ আখ্যা দিয়ে তার পদত্যাগ দাবি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক বার্তায় তিনি লেখেন, ইন্টেলের সিইও মারাত্মকভাবে স্বার্থসংঘর্ষে জড়িত। তার এখনই পদত্যাগ করা উচিত। এই সমস্যার আর কোনো সমাধান নেই।
ট্রাম্পের এই দাবি এমন এক সময়ে এলো, যখন একদিন আগেই ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়- যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান সিনেটর টম কটন ইন্টেলের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানকে লিপ-বু টানের চীনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে একটি চিঠি পাঠিয়ে ব্যখ্যা চেয়েছেন। সেই সঙ্গে চিঠিতে লিপ-বু’র সাবেক প্রতিষ্ঠান ক্যাডেন্স ডিজাইনের বিরুদ্ধে ওঠা সাম্প্রতিক ফৌজদারি মামলার বিষয়েও ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।
রয়টার্স আরও জানায়, লিপ-বু টান বিভিন্ন চীনা চিপ নির্মাতা ও উচ্চপ্রযুক্তি খাতে অন্তত ২০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছেন, যার মধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সরাসরি চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) সঙ্গে যুক্ত। এসব বিনিয়োগ তিনি ব্যক্তিগতভাবে ও তার প্রতিষ্ঠিত ভেঞ্চার ফান্ডগুলোর মাধ্যমে করেন, যার সময়কাল ২০১২ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিস্তৃত।
চীনা করপোরেট ডেটাবেইস, মার্কিন গোয়েন্দাদের তথ্য ও বিশ্লেষকদের তালিকা যাচাই করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। যদিও এক ঘনিষ্ঠ সূত্র দাবি করে, টান এরই মধ্যে চীনের প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে নিজের বিনিয়োগ প্রত্যাহার করেছেন, তবে এর বিস্তারিত জানাননি। আর রয়টার্সের বিশ্লেষণে দেখা গেছে- বহু ক্ষেত্রে বিনিয়োগ এখনো ‘চলমান’ হিসেবে তালিকাভুক্ত রয়েছে।
লিপ-বু টান ২০০৮ থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ক্যাডেন্স ডিজাইনের সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময় প্রতিষ্ঠানটি এমন এক চীনা সামরিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সফটওয়্যার বিক্রি করে, যা পারমাণবিক বিস্ফোরণের সিমুলেশন গবেষণায় যুক্ত বলে মনে করা হয়। ওই বিক্রির ঘটনায় সম্প্রতি ক্যাডেন্স ১৪ কোটি ডলার জরিমানা দিতে রাজি হয়েছে ও ফৌজদারি দায় স্বীকার করেছে।
এদিকে, নিজের ওয়েবসাইটে দেওয়া বিবৃতিতে লিপ-বু তান বলেন, আমার পুরো ক্যারিয়ারই বিশ্বাসের ওপর গড়ে উঠেছে। আমি যা বলি, তা করি ও সঠিকভাবে করি- এই নীতিতেই আমি ইন্টেল পরিচালনা করছি। আমরা সরকারের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যোগাযোগ রাখছি ও সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি।
ট্রাম্প প্রশাসনের কড়া বার্তা
হোয়াইট হাউজের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দেশের জাতীয় ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। আমাদের দেশের প্রতীকী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো এমন নেতৃত্বের হাতে থাকা উচিত, যাদের ওপর আমেরিকানরা বিশ্বাস করতে পারেন।
ইন্টেল নিজে জানিয়েছে, তারা ট্রাম্প প্রশাসনের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ এজেন্ডা অনুযায়ী বড় বিনিয়োগ করছে ও সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখছে।
সঙ্কটে ইন্টেল
ইন্টেল বর্তমানে একাধিক ব্যবসায়িক চ্যালেঞ্জের মুখে। তাইওয়ানের টিএসএমসি বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষ চিপ নির্মাতা হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চিপ খাতে এনভিডিয়ার মতো প্রতিষ্ঠানের কাছে ইন্টেল বাজার হারাচ্ছে।
গত বছর ইন্টেল তাদের তৎকালীন সিইও প্যাট্রিক পি গেলসিঙ্গারকে বরখাস্ত করে ও লিপ-বু টানকে নতুন প্রধান নির্বাহী হিসেবে নিয়োগ দেয়। গেলসিঙ্গার চার বছর মেয়াদে প্রতিষ্ঠানের চিপ উৎপাদন ও এআই খাত পুনর্গঠনের রোডম্যাপ দিয়েছিলেন, কিন্তু বাস্তবায়নে ব্যর্থ হন বলে অভিযোগ ওঠে।
লিপ-বু টান দায়িত্ব নেওয়ার পর গেলসিঙ্গারের অনেক পরিকল্পনা বাতিল করেন, বিশ্বজুড়ে কারখানা নির্মাণ স্থগিত করেন ও কর্মী ছাঁটাই শুরু করেন। তবে নতুন প্রযুক্তিতে উৎপাদন মান বজায় রাখা নিয়েও চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে বলে রয়টার্স জানায়।
সূত্র: রয়টার্স
এসএএইচ