ঘুস নেওয়ায় সরকারি কর্মকর্তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করলো চীন
ঘুস নেওয়ায় সরকারি কর্মকর্তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করলো চীন। দেশটির আর্থিক খাতে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে এই পদক্ষেপ নিয়েছে চীনা সরকার।
রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম সিসিটিভির বরাতে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে তিয়ানজিনে ওই কর্মকর্তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। বাই তিয়ানহুই নামে ওই ব্যক্তি চীনের রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংস্থার কর্মকর্তা ছিলেন।
এর আগে, চীনের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম পিপলস কোর্ট বাইয়ের আপিল খারিজ করে ফেব্রুয়ারিতে তার বিরুদ্ধে আগের রায় বহাল রাখেন।
সিসিটিভির উদ্ধৃতি অনুযায়ী আদালত আরও জানায়, চায়না হুয়ারং ইন্টারন্যাশনাল হোল্ডিংস (সিএইচআইএইচ) এর সাবেক মহাব্যবস্থাপক বাই তিয়ানহুই ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে বিভিন্ন অধিগ্রহণ এবং অর্থায়নে অনুকূল আচরণের বিনিময়ে ১৫ কোটি ৬০ লাখ ডলারের বেশি ঘুস নিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন>>
চীনে ‘ফুল ফ্রি স্কলারশিপে’ উচ্চশিক্ষা: বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন দিগন্ত
এশিয়ায় আমেরিকার সবচেয়ে পুরোনো মিত্রও কেন চীনের দিকে ঝুঁকছে?
অরুণাচলকে আবারও নিজেদের ভূখণ্ড দাবি করলো চীন
ভারতের বদলে এখন কেন চীনে ছাপানো হয় নেপালের রুপি?
আদালতের পর্যালোচনা প্রতিবেদনে বলা হয়, বাইয়ের অপরাধ ‘চরম গুরুতর’ এবং এর মাধ্যমে রাষ্ট্র ও জনগণের স্বার্থে ‘অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য ক্ষতি’ হয়েছে।
পরিবারের সঙ্গে শেষ দেখা
মঙ্গলবার সকালে পরিবারের ঘনিষ্ঠ সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর বাইয়ের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। মৃত্যুদণ্ড কীভাবে কার্যকর হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি চীনা কর্তৃপক্ষ।
চীন মৃত্যুদণ্ড সংক্রান্ত পরিসংখ্যানকে রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা হিসেবে বিবেচনা করে। তবে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ মানবাধিকার সংগঠনগুলো মনে করে, প্রতি বছর দেশটিতে হাজারের বেশি মানুষকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় এবং সাজা কার্যকর করা হয়।
দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে উচ্চপদস্থদের টার্গেট
চীনের আর্থিক খাতে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান দীর্ঘদিন ধরেই জোরদারভাবে চলছে। এর অংশ হিসেবে উচ্চপর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে চীনের শীর্ষ সিকিউরিটিজ নিয়ন্ত্রক সংস্থার সাবেক প্রধান ই হুইমান ঘুস ও দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তের মুখে পড়েন। এ বছরের মার্চে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ইভারব্রাইট গ্রুপের সাবেক চেয়ারম্যান লি শিয়াওপেং ছয় কোটি ইউয়ান ঘুস নেওয়ার দায়ে ১৫ বছরের কারাদণ্ড পান। আর ২০২৪ সালের নভেম্বরে ব্যাংক অব চায়নার সাবেক চেয়ারম্যান লিউ লিয়াং ১ কোটি ২১ লাখ ইউয়ান ঘুস গ্রহণের অভিযোগে দুই বছরের স্থগিতাদেশসহ মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন।
চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সমর্থকরা এই অভিযানকে দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন। তবে সমালোচকদের অভিযোগ, এই অভিযানের মাধ্যমে জিনপিং তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের অপসারণে অধিক ক্ষমতা পাচ্ছেন, যার ফলে প্রশাসনিক কাঠামোয় ভয় ও অনিশ্চয়তা বাড়ছে।
কেএএ/