পাকিস্তানজুড়ে আন্দোলনের ডাক ইমরান খানের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:০১ পিএম, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান/ ফাইল ছবি: এএফপি

নতুন একটি দুর্নীতি মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ডাদেশ পাওয়ার পর দেশব্যাপী আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান। একই সঙ্গে তিনি এই রায়ের বিরুদ্ধে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে আপিল করার ঘোষণা দিয়েছেন।

শনিবার (২০ ডিসেম্বর) কারাগার থেকে তার আইনজীবীর সঙ্গে কথোপকথনের ভিত্তিতে প্রকাশিত এক বার্তায় ইমরান খান বলেন, তিনি খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রী সোহাইল আফ্রিদিকে রাজপথে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। তার ভাষায়, পুরো জাতিকে নিজেদের অধিকার আদায়ে দাঁড়াতে হবে।

কারাগারে থাকায় ইমরান খানের নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের সুযোগ নেই। আইনজীবীর মাধ্যমে দেওয়া বার্তায় তিনি বলেন, এই মামলার রায় তাকে অবাক করেনি। তবে তিনি তার আইনি দলকে রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

ইমরান খানের দাবি, গত তিন বছরে যেসব ভিত্তিহীন রায় ও সাজা দেওয়া হয়েছে, তোশাখানা- ২ মামলার রায়ও তার ব্যতিক্রম নয়। কোনো প্রমাণ ছাড়াই, আইনগত শর্ত পূরণ না করেই তড়িঘড়ি এই রায় দেওয়া হয়েছে। এমনকি, আমার আইনজীবীদের কথাও শোনা হয়নি।

তিনি আরও বলেন, সংবিধানের পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও আইনের শাসন নিশ্চিত করতে ইনসাফ লইয়ার্স ফোরাম ও আইনজীবী সমাজের সামনে আসা অনিবার্য। তার মতে, ন্যায়বিচার ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়।

এক বিবৃতিতে পিটিআই এই সাজাকে ‘স্পষ্টতই অসাংবিধানিক, অবৈধ, বিদ্বেষপূর্ণ এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জঘন্য উদাহরণ’ বলে আখ্যা দিয়েছে। দলটির নেতাদের অভিযোগ, ইমরান খানের কারাবাস দীর্ঘায়িত করতেই এই রায় দেওয়া হয়েছে, যাতে আতঙ্কিত শাসকগোষ্ঠী সাময়িক স্বস্তি পায়।

পিটিআই আরও দাবি করেছে, পাকিস্তানে আইনের শাসন ধ্বংস করা হয়েছে এবং একটি ‘অনুগত’ বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

পিটিআই মহাসচিব সালমান আকরাম রাজা, জ্যেষ্ঠ নেতা আসাদ কায়সারের সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আদালতে প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার সালমান সাফদারের সঙ্গে বৈঠকে ইমরান খান জাতির উদ্দেশে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন যে তিনি দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে আছি, কোনো অবস্থাতেই কারও কাছে ক্ষমা চাইবেন না।

সালমান রাজা অভিযোগ করেন, মামলাটি কেবল প্রতিশ্রুতিপত্রের ওপর দাঁড়িয়ে আছে, কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ নেই। তার ভাষায়, এই মামলায় একমাত্র সাক্ষী সেই ব্যক্তি, যাকে পিটিআই প্রতিষ্ঠাতা নিজেই সামনে এনেছিলেন।

তিনি মামলাটিকে ‘হাস্যকর’ ও দুর্বলতম সাক্ষ্যের ওপর দাঁড়ানো বলে উল্লেখ করেন। তার অভিযোগ, কেবল চাপ দেওয়া হয়েছিল- এমন একটি বক্তব্যকেই প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।

আসাদ কায়সার বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রতিরোধ ছাড়া আর কোনো পথ নেই। তবে এই প্রতিরোধ হবে শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক এবং সংবিধানভিত্তিক। তিনি জানান, পিটিআই তাদের প্রতিষ্ঠাতার জন্য ন্যায়বিচার চায় এবং তা আদায় না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাবে।

পিটিআইয়ের কেন্দ্রীয় তথ্য সম্পাদক শেখ ওয়াকাস আকরাম বলেন, ইমরান খানের পরিবারকেও কারাগারে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। তার অভিযোগ, একটি ‘ক্যাঙ্গারু কোর্টে’ এই রায় ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, একই অভিযোগে এটি দ্বিতীয় সাজা, যা সংবিধান, ফৌজদারি আইন ও আন্তর্জাতিক আইনের ‘ডাবল জিওপার্ডি’ বা ‘একই অপরাধে দুইবার বিচার নয়’ নীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

এদিকে, ইমরান খানের বোন আলিমা খান গণমাধ্যমে এই রায়ের কড়া সমালোচনা করে বলেন, তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে দেওয়া সিদ্ধান্তগুলো একটি ‘পূর্বলিখিত চিত্রনাট্য’ অনুযায়ী দেওয়া হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, এসব মামলার নেপথ্যে থাকা ব্যক্তিরা ‘বুদ্ধিমান নন’ ও তিনি তাদের চিত্রনাট্য বুঝতে ব্যর্থ।

আলিমা খান বলেন, রাতের বেলাতেও মনে হচ্ছিল, কুয়াশার সুযোগ নিয়ে দ্রুত রায় ঘোষণা করতে চায় তারা। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ১০ বছর বা ১৪ বছর সাজা দিলেই বা কী আসে যায়? আগেই তো ১৪ বছর দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, জনগণের ধৈর্য শেষ হয়ে গেছে এবং প্রতি ছয় মাসে নতুন করে রায় দেওয়ার পরিকল্পনা জনগণ আর মেনে নেবে না। পাশাপাশি তিনি বুশরা বিবির বিরুদ্ধে আচরণের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন এবং তাকে ‘অবৈধ নিঃসঙ্গ বন্দিত্বে’ রাখার অভিযোগ করেন।

এদিকে, পিটিআই নেতা ওমর আয়ুবও রায়ের নিন্দা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার স্ত্রীকে দেওয়া সাজা একটি ‘ক্যাঙ্গারু কোর্টের’ রায়। তার মন্তব্য, পাকিস্তানে আইনের কোনো শাসন নেই।

সূত্র: ডন

এসএএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।