ইউক্রেনের সংসদীয় কার্যালয়ে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থার তল্লাশি, নিরাপত্তা বাহিনীর বাধা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:০৭ পিএম, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫
ইউক্রেনের সংসদে জাতীয় দুর্নীতি দমন ব্যুরোর ক্ষমতা হ্রাস সংক্রান্ত একটি বিল পাসের পর চলতি বছরের ২২ জুলাই রাজধানী কিয়েভে বিক্ষোভে নামেন অনেকে/ ছবি: এএফপি

ইউক্রেনের সংসদ ভবনের কার্যালয়গুলোতে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থার তল্লাশি চালানোর চেষ্টাকে ঘিরে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) দেশটির দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা জানায়, তল্লাশি অভিযানের সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তদন্তকারীদের কাজে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। একই সময়ে নতুন একটি দুর্নীতি তদন্তে কয়েকজন বর্তমান সংসদ সদস্যের জড়িত থাকার তথ্যও সামনে এসেছে।

তবে পরে ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিভাগ জানায়, শেষ পর্যন্ত দুর্নীতিবিরোধী গোয়েন্দাদের কঠোর নিরাপত্তায় ঘেরা সংসদ চত্বরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিভাগ ফেসবুকে এক পোস্টে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

ইউক্রেন সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক দুর্নীতি কেলেঙ্কারিতে জর্জরিত। এসব কেলেঙ্কারির জেরে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির প্রধান স্টাফকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম আলোচিত একটি ঘটনা হলো ক্ষতিগ্রস্ত জ্বালানি খাতে ১০ কোটি ডলারের ঘুষ কেলেঙ্কারি, যা প্রেসিডেন্টের কথিত এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর নেতৃত্বে সংঘটিত হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

জাতীয় দুর্নীতিবিরোধী ব্যুরো (এনএবিইউ) এক বিবৃতিতে জানায়, এনএবিইউ ও বিশেষায়িত দুর্নীতিবিরোধী প্রসিকিউটর দপ্তর (এসএপিও) একটি গোপন অভিযানের মাধ্যমে একটি সংগঠিত অপরাধচক্র উদ্ঘাটন করেছে, যার মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্যরাও অন্তর্ভুক্ত।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইউক্রেনের সংসদ ভারখোভনা রাডার বিভিন্ন কমিটিতে তদন্ত কার্যক্রম চলাকালে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিভাগের কর্মীরা এনএবিইউ কর্মকর্তাদের কাজে বাধা দিচ্ছেন। তদন্তের বিস্তারিত প্রকাশ না করা হলেও দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা জানিয়েছে, অভিযুক্তরা সংসদে ভোটের বিনিময়ে ঘুষ গ্রহণ করতেন।

এই তদন্তের খবর এমন এক সময়ে প্রকাশ্যে এলো, যখন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্র সফরে ছিলেন। সেখানে তিনি যুদ্ধ অবসানের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন। একই সময়ে রাশিয়া রাজধানী কিয়েভে একযোগে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এসব হামলায় অন্তত একজন নিহত হন ও বহু মানুষ আহত হন।

একদিকে রাশিয়ার ক্রমাগত হামলা, অন্যদিকে দুর্নীতি কেলেঙ্কারির কারণে ইউক্রেনের জনমনে ক্ষোভ বাড়ছে। রাশিয়ার হামলার ফলে বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিচ্ছে ও শীতকালে গরমের ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এই পরিস্থিতি প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এসেছে। ২০২২ সালে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আগ্রাসনের পর থেকে তিনি কোনোরকমে নিজের জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছেন ও বড় কোনো রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েননি।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের ওপর যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে ভূখণ্ড ছাড় ও নির্বাচন আয়োজনের জন্য চাপ দিচ্ছে। একই সময়ে দেশটির পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার সামরিক অভিযান আরও জোরদার হয়েছে।

গত গ্রীষ্মে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ইউক্রেনের দুটি গুরুত্বপূর্ণ দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা- এনএবিইউ ও এসএপিও’র স্বাধীনতা সীমিত করার চেষ্টা করেছিলেন। ২০১৪ সালের প্রো-পশ্চিমা গণঅভ্যুত্থানের পর এই সংস্থাগুলো গঠিত হয়। তবে এই উদ্যোগের বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনা ও বিরল যুদ্ধকালীন সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের চাপের মুখে পড়েন জেলেনস্কি। পরে তিনি সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে ইউক্রেন নিয়মিত দুর্নীতি কেলেঙ্কারির মুখে পড়ছে। দুর্নীতি ও আইনের শাসনের দুর্বলতাই ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ পাওয়ার পথে কিয়েভের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

সূত্র: এএফপি

এসএএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।