মেডিকেল দুর্ঘটনা, এইডসের ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে গিয়ে করোনার জন্ম
বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ তাণ্ডব চালানো প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের উৎপত্তির বিষয়টি এখন রহস্যজনক। কেউ বলছেন, এটা ল্যাবে তৈরি হয়েছে। আবার কেউ বলছেন, পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়ার কারণে বরফ গলায় এর নিচ হাজার বছর ধরে থাকা মরা প্রাণীদের দেহের জীবাণু থেকে এ ভাইরাসের জন্ম। কারো কারো মন্তব্য, চীনের উহানের একটি সামুদ্রিক মাছের বাজার থেকে ছড়িয়েছে ভাইরাসটি। যার উৎস হয়তো বাদুড় কিংবা প্যাঙ্গোলিন (বাংলাদেশে যাকে বলে বনরুই)।
এ ভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে নতুন তত্ব নিয়ে হাজির হয়েছেন ফ্রান্সের নোবেল বিজয়ী ভাইরাসবিদ ডক্টর লরেত লুক মন্টেগনিয়ের। তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস মানবসৃষ্ট। সেটি চীনেই তৈরি হয়েছে। চীনের উহানে বায়োলজিক্যাল ল্যাবে এইডস রোগের ভ্যাকসিন তৈরি করতে গিয়ে এ (কোভিড-১৯) ভাইরাসের জন্ম হয়েছে।
ডক্টর লরেত লুক মন্টোগোমারি চিকিৎসা বিজ্ঞানের জগতে অনেক বড় এক নাম। ইনিই সেই ব্যক্তি, ১৯৮৩ সালে যিনি এইডসের জন্য দায়ী এইচআইভি ভাইরাস আবিষ্কার করেছিলেন। এরপর এইডস নিয়ে গবেষণার ফলে ২০০৮ সালে যৌথভাবে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার জিতেছিলেন এ বিজ্ঞানী। একই বছর চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছিলেন হ্যারল্ড জুর হাউসেন ও ফ্রাঁসোয়াজ বারে সিনৌসি।
ফ্রান্সের এক টেলিভিশনে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এটাকে মেডিকেল দুর্ঘটনা বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি জানান, এইডসের প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে গিয়েই গত বছরের শেষ অংশে শুরুতেই চীনের উহানের ন্যাশনাল বায়োসেফটি ল্যাবরেটরিতে এটির উৎপত্তি হয়েছে।
ড. মন্টেগনিয়ের জানান, চীনা গবেষকরা বলেছিলেন, এইডসের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের জন্য তারা করোনাভাইরাস নিয়ে কাজ করছিলেন। তাদের বিশ্বাস ছিল, সার্স-কোভ-২ (কোভিড-১৯) এর জিনোমের মধ্যেই রয়েছে এইচআইভি আরএনএর একটি অংশ, যা থেকে এইডসের ভ্যাকসিন তৈরি করা সম্ভব। চীনের ওই ল্যাবরেটরিটি করোনাভাইরাস গবেষণার জন্যই সবচেয়ে বিখ্যাত।
ড. মন্টেগনিয়ের বলেন, ‘আমার কলিগ, বায়ো ম্যাথমেটিসিয়ান জিন ক্লাউড পেরেজের সঙ্গে মিলে আমি খুব সতর্কতার সঙ্গে এই আরএনএ ভাইরাসের জিনোম নিয়ে পর্যবেক্ষণ এবং গবেষণা করে আসছিলাম।’
ড. মন্টেগনিয়ের-এর সঙ্গে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পাওয়া বাকি দুই বিজ্ঞানীও একই সুরে বলছেন, করোনভাইরাসের জিনোমে এইচআইভি এবং ম্যালেরিয়া জীবাণুর উপাদানের উপস্থিতির কারণেই এ নিয়ে গবেষণা চলছিল উহানের সেই ল্যাবরেটরিতে। কিন্তু সেখান থেকেই দুর্ঘটনা বশতঃ কোভি-১৯ ছড়িয়ে পড়ে মানব সমাজে।
যার ফলে, এখনও পর্যন্ত বিশ্বের ২১০টি দেশ এবং অঞ্চলে প্রায় ২4 লাখ মানুষ আক্রান্ত এবং ১ লাখ ৬৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
ড. মন্টেগনিয়ের বক্তব্যটি এমন সময় দেয়া হয়েছে, যখন করোনাভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে তদন্তে নামছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, আমরা এ ভাইরাসের উৎপত্তির বিষয়ে অনেক কিছু শুনছি। আমরা তদন্ত করব।
এফআর/এমএস