করোনা মহামারিতে যেখানে ভুল হয় সরকারের
![করোনা মহামারিতে যেখানে ভুল হয় সরকারের](https://cdn.jagonews24.com/media/imgAllNew/BG/2019November/economist-1-20200926203358.jpg)
কিছুদিনের মধ্যেই করোনাভাইরাসে মোট প্রাণহানির সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়াতে চলেছে। সম্ভবত আরও ১০ লাখ মৃত্যু অগোচরেই থেকে গেছে। নয় মাস আগে মহামারি শুরুর দিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে সাপ্তাহিক আক্রান্তের সংখ্যা বেশ ধীরগতিতেই এগোচ্ছিল। কিন্তু সেপ্টেম্বরে এসে তা সাতদিনে ২০ লাখ করে বাড়ছে। বিশ্বের বেশ কিছু অঞ্চলে এখনও তাণ্ডব চালাচ্ছে করোনা। ভারতে দৈনিক ৯০ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছেন। ইউরোপের অনেক দেশ যারা মহামারি পার করে এসেছে ভেবেছিল, সেখানে শুরু হয়েছে দ্বিতীয় ঢেউয়ের আঘাত। যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃত্যু দুই লাখের মাইলফলক পেরিয়েছে, সাপ্তাহিক সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে দেশটির ২৬টি অঙ্গরাজ্যে।
এমন পরিস্থিতি তিনটা বিষয় মনে রাখা দরকার। পরিসংখ্যানে শুধু খারাপ নয়, ভালো খবরও আসে। ইতোমধ্যেই উন্নত চিকিৎসাপদ্ধতি ও ওষুধ করোনাভাইরাসকে কম প্রাণঘাতী করে তুলেছে। শিগগিরই এ ভাইরাস প্রতিরোধী ভ্যাকসিনও চলে আসবে। আর, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এখন প্রয়োজনীয় সব তথ্য-উপাত্তই রয়েছে কর্তৃপক্ষের হাতে।
বলা হচ্ছে, আগের মতো এখনও করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে বড় রক্ষাকবচ গণহারে নমুনা পরীক্ষা, রোগী শনাক্তকরণ, সামাজিক দূরত্ব ও সরকারের পরিষ্কার নির্দেশনা। এরপরও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইসরায়েল, স্পেনের মতো বেশ কিছু দেশ এ মহামারিকে ঠিকভাবে বুঝতে পারেনি।
এদের একটা সমস্যা হচ্ছে, মানুষের প্রাণ বাঁচাতে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে দেয়া হবে নাকি সব খোলা রেখে স্বাভাবিক নিয়মে চলতে দেবে তা নির্ধারণ করতে না পারা। সুইডেন দ্বিতীয়টি করেছিল। তারা অর্থনৈতিক কার্যক্রম ও নাগরিক স্বাধীনতাকে গুরুত্ব দিয়েছিল। ফলাফল, সেখানে প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে মৃত্যুহার ৫৮ দশমিক ১ শতাংশ, আবার বছরের শুধু দ্বিতীয় প্রান্তিকেই তাদের মোট দেশজ উৎপদন (জিডিপি) কমেছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। দু’দিক থেকেই ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, নরওয়ের চেয়ে খারাপ অবস্থা সুইডেনের।
আর ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে দিয়ে মানুষের প্রাণ বাঁচানোর পথে হেঁটেছিল নিউজিল্যান্ড। সেখানে প্রতি লাখে মৃত্যুহার মাত্র ০.৫ শতাংশ। তবে দ্বিতীয় প্রান্তিকে তাদের জিডিপি কমেছে ১২ দশমিক ২ শতাংশ। এদিক থেকে তাইওয়ান অনেকটাই উন্মুক্ত থাকার পরেও সেখানে প্রতি লাখে মৃত্যুহার ০.৩ শতাংশ আর জিডিপি কমেছে ১ দশমিক ৪ শতাংশ।
বিপরীতে, ইসরায়েলের দেশব্যাপী লকডাউন অনেকটাই ব্যর্থ। জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ানের মতো অঞ্চলগুলো হটস্পট খুঁজে পেতে গণহারে পরীক্ষা চালিয়েছে, আক্রান্তদের কোয়ারেন্টাইনে পাঠিয়ে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এনেছে। তবে পরীক্ষার গতি কম থাকায় তা ব্যর্থ হয়েছে ফ্রান্সে। নিয়ন্ত্রণ-শনাক্তকরণে জনগণের বিশ্বাস না থাকলে, এর দায়িত্ব গোয়েন্দা সংস্থার হাতে দিলে মানুষ ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করবে; যেমনটা হয়েছে ইসরায়েলে।
এক্ষেত্রে সরকারকে অবশ্যই বাণিজ্য বন্ধের পদক্ষেপ এমনভাবে নিতে হবে যা অর্থনৈতিক ও সামাজিক উভয় দিক থেকেই গ্রহণযোগ্য হবে। স্কুল খোলা রাখায় গুরুত্ব দিতে হবে, বারের মতো ভিড়যুক্ত জায়গা নয়। ডেনমার্ক-জার্মানি এ পদ্ধতিই অনুসরণ করছে।
যুক্তরাজ্য বেশ কিছু কার্যকর নির্দেশনা দিলেও সেগুলো অমান্য করেছেন দেশটির সরকারি কর্মকর্তারাই। ফলে জনগণের মধ্যেও এর প্রভাব পড়েছে। স্কুল বা কর্মস্থলগুলোকে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রেখে কাজ চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনার দায়িত্ব তাদের ওপরই ছেড়ে দিয়েছিল ব্রিটিশ কলম্বিয়া। তাদের এ পদ্ধতি সফল হয়েছে।
করোনাভাইরাস মহামারি যখন শুরু হয়, সরকারগুলো অনেকটা হঠাৎ করেই সবকিছুর লাগাম টেনে ধরতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু এখন সেই অজুহাত দেখানোর উপায় নেই। স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে তাড়াহুড়ো করে সুরক্ষা ব্যবস্থায় ভাঙন ধরিয়েছে স্পেন। যুক্তরাজ্যের পরীক্ষায় কাজ হচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) এককালে বিশ্বের অন্যতম বিশ্বাসযোগ্য স্বাস্থ্য সংস্থা থাকলেও এবারের মহামারিতে একের পর এক ভুল করছে। ফলে বৈশ্বিক এ মহামারির সমাপ্তি এখনও বহুদূর। এটি আরও বহুদিন থাকবে, তবে সরকারগুরোকে অবশ্যই তার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে হবে।
সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট
কেএএ/জেআইএম