ধনীদের ভাণ্ডার ভরা রেখে দরিদ্র দেশে ৫ শতাংশ টিকা পাঠানোর প্রস্তাব
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের ধনী দেশগুলোকে নিজেদের মজুত ঠিক রেখে দরিদ্র দেশগুলোতে ৪ থেকে ৫ শতাংশ করোনা ভ্যাকসিন পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমান্যুয়েল ম্যাক্রোঁ। সম্প্রতি প্রভাবশালী ব্রিটিশ দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ প্রস্তাব তুলেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট।
এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশ্বজুড়ে চলছে করোনাভাইরাসের তাণ্ডব। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে এপর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১১ কোটির বেশি মানুষ, মারা গেছেন অন্তত ২৪ লাখ। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে ভাইরাসটি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা মহামারি প্রতিরোধে সবচেয়ে বড় অস্ত্র হতে পারে একটি কার্যকর ভ্যাকসিন। ইতোমধ্যে এধরনের কয়েকটি ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হওয়ায় সেই আশার আলো আরও উজ্জ্বল হয়েছে। তবে চিন্তা দেখা দিয়েছে ভ্যাকসিনের পর্যাপ্ততা নিয়ে।
গত বুধবার জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস অভিযোগ করেছেন, বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন বিতরণে চরম অন্যায় ও অনিয়ম হচ্ছে।
তার দাবি, ধনী ও ক্ষমতাধর মাত্র ১০টি দেশের হাতেই রয়েছে বিশ্বের ৭৫ শতাংশ করোনা ভ্যাকসিন। বিপরীতে, ১৩০টি দেশ এক ডোজও ভ্যাকসিন পায়নি।
যুক্তরাজ্য-কানাডার মতো কিছু উচ্চআয়ের দেশ তাদের গোটা জনগোষ্ঠীকে একবারের বেশি ভ্যাকসিন দেওয়ার মতো ডোজ অর্ডার দিয়েছে। ধনী দেশগুলোর বিরুদ্ধে দরিদ্র দেশের জন্য নির্ধারিত দামে ভ্যাকসিন কিনে সেগুলো মজুত করে রাখারও অভিযোগ উঠেছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বজুড়ে ভ্যাকসিন আরও ন্যায়সঙ্গতভাবে বিতরণ করা না হলে করোনভাইরাস কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে না।
ঠিক এ অবস্থাতেই দরিদ্র দেশগুলোকে নিজেদের মজুত থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ শতাংশ ভ্যাকসিন পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট।
তার কথায়, আমরা তাৎক্ষণিকভাবে শত কোটি ডোজ বা কোটি কোটি ইউরোর কথা বলছি না। এটা আমাদের কাছে থাকা ভ্যাকসিনের ৪ থেকে ৫ শতাংশ দ্রুততম সময়ে বিতরণের বিষয়।
ম্যাক্রোঁ বলেন, এতে আমাদের ভ্যাকসিন কর্মসূচি বদলাবে না, তবে প্রতিটি দেশকেই কিছু সংখ্যক ডোজ তাদের (দরিদ্র দেশ) দেওয়ার জন্য সরিয়ে রাখা উচিত। আর তা করতে হবে খুব দ্রুত, যেন মানুষজন দেখতে পায় সেটা ঘটছে।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট বলেছেন, জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মেরকেল ইউরোপীয় ভ্যাকসিন ভাগাভাগির একটি উদ্যোগে সমর্থন জানিয়েছেন। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রও এগিয়ে আসবে বলে আশাপ্রকাশ করেন তিনি।
ম্যাক্রোঁর মতে, এধরনের প্রকল্প না থাকায় চীন এবং রাশিয়া সেই শূন্যস্থান পূরণ করে প্রভাব বিস্তারের পথ তৈরি করে নিচ্ছে।
সূত্র: বিবিসি
কেএএ/এমএস