পশ্চিমবঙ্গে মোদির ৪ সভা, বড় সমাবেশ এড়াতে নয়া ভাবনায় বিজেপি
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে শেষ দুই দফার ভোটগ্রহণ আগামী ২৬ ও ২৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) পশ্চিমবঙ্গে চারটি সমাবেশ করার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মালদহ, বহরমপুর, সিউড়ি এবং দক্ষিণ কলকাতায় সমাবেশগুলো হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু রাজ্যে হু হু করে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির কথা মাথায় রেখে এখন নতুন পরিকল্পনা করছে বিজেপি। বড় সমাবেশ থেকে সরে গিয়ে ছোট ছোট সভার মাধ্যমে মোদির বক্তৃতা সর্বত্র পৌঁছনোর পরিকল্পনা শুরু করেছে দলটি।
রাজ্য বিজেপি জানিয়েছে, ইতোমধ্যেই কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করে মোদির সমাবেশ নিয়ে নতুন সিদ্ধান্তে যাচ্ছেন তারা।
পাশাপাশি মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) থেকেই পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডার প্রচারসূচি কাটছাঁট হতে পারে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী স্মৃতি ইরানি, ঝাড়খণ্ডের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বাবুলাল মারান্ডির ঘোষিত সফরসূচিতেও পরিবর্তন আসতে পারে।
শেষ দুই দফায় পশ্চিমবঙ্গে মোট ৬৯টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়। মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ এবং জঙ্গিপুরে কংগ্রেস ও আরএসপি প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে ভোটগ্রহণ স্থগিত রেখেছে নির্বাচন কমিশন। তবে মোদি শুক্রবারের সফরে সব আসনের জন্যই প্রচার করবেন জানা গেছে। তার সমাবেশে পুরোপুরি করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করতে হবে বলে প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে আগেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। তারপরে আবার নতুন এই পরিকল্পনা শুরু হয়।
শেষ খবরে জানা গেছে, প্রস্তাবিত চার জায়গাতেই মোদি উপস্থিত থাকবেন কিন্তু সমাবেশ হবে সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে। মালদহ জেলার এক বিজেপি নেতা বলেন, নির্বাচন কমিশন এবং প্রধানমন্ত্রীর অফিসের নিয়ম মেনেই সভার আয়োজন করা হচ্ছে। মালদহ বিএড কলেজ মাঠে মোদি সভা করবেন। তবে কর্মী, সমর্থকদের উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হবে। দূরত্ববিধি মেনে থাকবে দর্শকদের আসন। সেখানে সবার জন্য মাস্ক পরাও বাধ্যতামূলক থাকবে।
তিনি আরও বলেন, জেলার অন্যান্য কেন্দ্র থেকে কর্মী, সমর্থকদের আসতে দেয়া হবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তার পরিবর্তে জেলার ১২টি আসন এলাকাতেই জায়ান্ট স্ক্রিনের ব্যবস্থা থাকবে। মালদহ শহরেও একাধিক জায়গায় জায়ান্ট স্ক্রিন লাগিয়ে ছোট ছোট সভা করা হবে।
রাজ্য বিজেপির পক্ষ থেকে এই প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে পুরো পরিকল্পনা জানানো হবে। তবে অন্য একটি সূত্রে জানা গেছে, মালদহের মতো বহরমপুর ও সিউড়ির সভা হবে। মোদি ওই দুই শহরে বক্তব্য রাখলেও সেটা শোনার ব্যবস্থা থাকবে মুর্শিদাবাদের ২২ এবং বীরভূমের ১১ বিধানসভা এলাকাতেও।
কলকাতার ক্ষেত্রে আরও বড় বদল হতে পারে নতুন পরিকল্পনায়। কলকাতায় সপ্তম দফায় ভোট রয়েছে দক্ষিণের কলকাতা বন্দর, ভবানীপুর, রাসবিহারী ও বালিগঞ্জ আসনে। পূর্ব প্রস্তুতি ছিল ভবানীপুরের নর্দার্ন পার্কে হবে মোদির সমাবেশ হবে। কিন্তু এখন যে পরিকল্পনা করা হয়েছে, তাতে মোদির সভার জন্য মূল মঞ্চ হবে শহীদ মিনার ময়দানে। সেখানে তিনি বক্তব্য রাখলেও ভার্চুয়ালি তা শোনার ব্যবস্থা থাকবে দক্ষিণের পাশাপাশি উত্তর কলকাতার সব বিধানসভা এলাকায়। উত্তরের সাত আসন চৌরঙ্গি, এন্টালি, বেলেঘাটা, জোড়াসাঁকো, শ্যামপুকুর, মানিকতলা, ও কাশীপুর-বেলগাছিয়ায় ভোটগ্রহণ হবে অষ্টম দফায়।
এদিকে সোমবার রাতে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে ৮ হাজার ৪২৬ জন নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৩৮ জনের। কলকাতার পরিসংখ্যানও উদ্বেগজনক। গত ২৪ ঘণ্টায় কলকাতায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ২১১ জন।
রাজ্য বিজেপির নেতাদের বক্তব্য, এই পরিস্থিতিতে বড় আকারে মোদির সমাবেশ হলে রাজনৈতিক আক্রমণের মুখে পড়তে হতে পারে ভেবেই এই নতুন ভাবনা। কারণ, করোনা পরিস্থিতি মাথায় রেখে বামেরা আগেই সব বড় সভা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধিও রাজ্যের সব সফর বাতিল করেছেন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও জানিয়েছেন, কলকাতায় আর কোনো বড় সভা বা কর্মসূচি করবেন না। সর্বত্র বক্তৃতাও হবে ছোট। এই পরিস্থিতিতে মোদির সমাবেশ বন্ধ করা নিয়ে গেরুয়া শিবিরের এক রাজ্য নেতার দাবি, ‘কারও আক্রমণের ভয়ে নয়। পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করেই এই সিদ্ধান্ত। এমন পরিকল্পনা করা হয়েছে যাতে সাপও মরবে, লাঠিও ভাঙবে না। মোদির বক্তব্য সবার কাছে পৌঁছে দেয়া গেলেও বড় সমাবেশের উদ্বেগ এড়ানো যাবে।’
এমআরআর/জেআইএম