ভ্যাকসিনের ৩ ডোজেই আজীবন ইমিউনিটি, দাবি ভারত বায়োটেকের
অডিও শুনুন
করোনার বিরুদ্ধে থাকবে আজীবন ইমিউনিটি! এমনই সম্ভাবনার কথা শোনাল ভারত বায়োটেক। সংস্থাটির দাবি, তাদের তৈরি কোভ্যাকসিনের একটি বাড়তি ডোজ (তৃতীয় ডোজ) নিলেই লাইফটাইম ইমিউনিটি ধরে রাখা সম্ভব।
সোমবার তামিলনাড়ুর এসআরএম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কোভ্যাকসিনের তৃতীয় বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়েছে সাত জনকে। তারা ৬০ দিন আগে কোভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন। জানা গেছে, এই পর্বে মোট ১৯০ জনের শরীরে প্রবেশ করানো হবে ভ্যাকসিনের তৃতীয় ডোজ। তারপর বিভিন্ন মার্কার দিয়ে মাপা হবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।
বর্তমানে বিশ্বে যত টিকা আছে তার প্রায় সবই দুই ডোজের। প্রথম ডোজ নেওয়ার ২৮ দিন পর কোভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়। কোভিশিল্ডের ক্ষেত্রে ছয় সপ্তাহ পর। এবার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার ৬০ দিন পর তৃতীয় ডোজ দেবে ভারত বায়োটেক। তাদের দাবি, কোভ্যাকসিনের এই তৃতীয় ডোজ লাইফটাইম ইমিউনিটি তৈরি করে দেবে।
যদিও এই দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভাইরোলজিস্টরা। তাদের বক্তব্য, নিষ্ক্রিয় ভাইরাসে তৈরি ভ্যাকসিনে আজীবন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করা খুব কঠিন। ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. সিদ্ধার্থ জোয়ারদার জানিয়েছেন, অ্যান্টিবডির স্থায়িত্ব নির্ভর করে মেমরি বি লিম্ফোসাইটের হাফ লাইফের উপর।
এই হাফ লাইফ আবার নির্ভর করে অ্যান্টিজেনের উদ্দীপ্ত করার ক্ষমতার উপর। পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয় ডেনড্রাইটিক কোষের মাধ্যমে, যা থাকে লিম্ফয়েড টিস্যুর জার্মিনাল সেন্টারের মধ্যে। তার দাবি, নিষ্ক্রিয় ভাইরাসের উদ্দীপ্ত করার ক্ষমতা কম। এমন কোনও ইনঅ্যাক্টিভেটেড ভ্যাকসিন নেই যা জীবনভর সুরক্ষা দিতে পারে। যেমনটা পারে লাইভ অ্যাটিনিউয়েটেড ভাইরাল ভ্যাকসিন (মিজলস, পোলিও)। তবে বুস্টার ডোজ দিয়ে অ্যান্টিবডির স্থায়িত্বকাল বাড়ানো যেতেই পারে।
১৬ জানুয়ারি ভারতে জরুরি ভিত্তিতে ছাড়পত্র দেওয়া হয় দু’টি ভ্যাকসিনকে। অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড ও ভারত বায়োটেক ও আইসিএমআর-এর যৌথ উদ্যোগে তৈরি কোভ্যাকসিনকে। এরপরই ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরু হয়।
প্রথমদিকে কোভিশিল্ডের চাহিদা বেশি হলেও পরে কোভ্যাকসিনের চাহিদাও বাড়তে থাকে। জানা যায়, ৮১ শতাংশ কার্যকারিতা রয়েছে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এই ভ্যাকসিনের। তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল রিপোর্ট এখনও কোনও মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত হয়নি। তারই মধ্যে তৃতীয় ডোজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হলো।
তবে সংস্থাটির দাবি, কোভ্যাকসিন সম্পূর্ণ নিরাপদ। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে। সবদিক বিবেচনা করেই তৃতীয় ডোজ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ট্রায়াল সফল হলে জীবনভর মুক্তি মিলবে করোনা থেকে।
করোনা সংক্রমণে ভারতের বেশিরভাগ রাজ্যের অবস্থাই খারাপ। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে রেকর্ড সংখ্যক মৃত্যু ও সংক্রমণের সাক্ষী হয়েছে ভারত। এই সময়ের মধ্যে দেশটিতে মারা গেছেন ৩ হাজার ২৯৩ জন করোনা রোগী। ভারতে করোনার ইতিহাসে এটিই একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড।
এ নিয়ে দেশটিতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১ হাজার ৮৭ জনে। আর নতুন করে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে রেকর্ড ৩ লাখ ৬০ হাজার ৯৬০ জনের শরীরে। ফলে ভারতে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ৭৯ লাখ ৯৭ হাজার ২৬৭ জন।
বুধবার (২৮ এপ্রিল) সকালে কেন্দ্রীয় সরকার প্রচারিত স্বাস্থ্য বুলেটিনের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে দেশটির গণমাধ্যমগুলো। মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১ হাজার ৮৭।
ভ্যাকসিন নেয়ার পরও ভারতে বহু মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আইসিএমআর জানিয়েছে, প্রতি ১০ হাজার ভ্যাকসিন গ্রহীতার মধ্যে চারজন করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। ভাইরোলজিস্টদের মতে, ভ্যাকসিন নেওয়ার পর মানবদেহে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে না। তাই সংক্রমণ ঘটছে। অ্যান্টিবডির স্থায়িত্ব বাড়াতেই তাই তৃতীয় ডোজ দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তবে জীবনভর সুরক্ষার দাবি নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গেছে।
টিটিএন/জেআইএম