বাঁশ-আখ থেকে পরিবেশবান্ধব প্লাস্টিক তৈরি করছে আইআইটি গৌহাটি

আসিফ আজিজ
আসিফ আজিজ আসিফ আজিজ , অতিরিক্ত বার্তা সম্পাদক আসাম (ভারত) থেকে ফিরে
প্রকাশিত: ১২:৩০ পিএম, ২৫ জুলাই ২০২২

সভ্যতার উৎকর্ষতায় প্রতিনিয়ত বিনষ্ট হচ্ছে প্রকৃতি-পরিবেশ। এভাবে চলতে থাকলে এক সময় বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠবে আমাদের এ পৃথিবী। তাই সুস্থভাবে পৃথিবীতে টিকে থাকতে মানুষকে ভাবতে হচ্ছে ভিন্ন পন্থা। বিজ্ঞানী, পরিবেশবিদ ও গবেষকরা সব সার্কেল ঠিক রেখে প্রয়োজনীয় সামগ্রী উৎপাদন করে পরিবেশ-প্রতিবেশকে স্বস্তির জায়গায় রাখতে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। কৃষিজাত বিভিন্ন পণ্য থেকে মাটির সঙ্গে সহজে মিশে যেতে পারে এমন প্লাস্টিক উদ্ভাবন এরই অংশ।

বাঁশ, ভাতের মাড়, আখ প্রভৃতি উপকরণকে অ্যাসিডে রূপান্তর করে তা থেকে প্লাস্টিক তৈরি করছে ভারতের আসাম রাজ্যের রাজধানী গৌহাটির ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির সেন্টার ফর সাসটেইনেবল পলিমারস। র‌্যাংকিংয়ের দিক থেকে ভারতে দ্বিতীয় ও বিশ্বের ৩৭তম এ ইনস্টিটিউট। দক্ষিণ এশিয়ায় এ প্রযুক্তি এটাই প্রথম বলে দাবি করেছেন এই প্রকল্পের কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক বিমল কাটিয়ার।

jagonews24

ভারত সফররত সাংবাদিক প্রতিনিধিদলকে এই প্রকল্প সম্পর্কে তিনি বলেন, বায়ো ডিগ্রেডেবল পলিমারের মাঠ পর্যায়ের উপকরণ বাঁশ। এই বাঁশ থেকে প্ল্যান্টের মাধ্যমে এক ধরনের কেমিক্যাল আসে। বাই-প্রোডাক্ট হিসেবে পাওয়া সেই কেমিক্যাল থেকে আবার একটি কেমিক্যালের সিরিজ পাই। এবং সেগুলো থেকে ফাইনালি পাওয়া যায় ক্যাপরোল্যাকটোন। পরে এই ক্যাপরোল্যাকটোনকে পলিমারাইজড করে আমরা পাচ্ছি এই বায়োডিগ্রেডেবল (পরিবেশের ক্ষতি না করে মাটির সঙ্গে সহজে মিশে যেতে পারে এমন) প্লাস্টিক।

‘তবে শুধু বাঁশ থেকেই যে সব ধরনের বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক তৈরি হচ্ছে তা কিন্তু নয়। অন্য উপকরণ থেকেও তৈরি হতে পারে। যেমন এখানে যে পাতলা প্লাস্টিকটা দেখা যাচ্ছে সেটা স্টার্চ (ভাতের মাড়) থেকে তৈরি। স্টার্চকে ল্যাকটিক অ্যাসিডের মতো কেমিক্যালে রূপান্তরিত করে এটা তৈরি করা হয়েছে।’

পলিমার সিনথেসিস ও পলিমার বিভাগের এই অধ্যাপক বলেন, এই প্লাস্টিকের ব্যবহারিক জীবনকাল শেষে যখন আমরা এটা ফেলে দেবো, তখন ৯০ শতাংশ কার্বন কার্বন ডাই অক্সাইডে ডিগ্রেডেড হবে। মাটিতে মিশে যেতে সময় নেবে সর্বোচ্চ ১৮০ দিন। আমরা সাধারণ যে প্লাস্টিক ব্যবহার করি তা মাটির সঙ্গে মিশে যেতে তিন থেকে চারশ বছর সময় নেয়। কিন্তু বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক যখন মাটিতে ফেলবো তখন এটা মাটির সঙ্গে মিশে উর্বরতা বাড়াবে এবং মাটিকে কার্বন সরবরাহ করবে। এ ধরনের উপকরণের সবচেয়ে বড় সুবিধা এটি।

jagonews24

তিনি আরও বলেন, ভারত এবং দক্ষিণ এশিয়ায় এটা নতুন। আমেরিকা তৈরি করছে এটা আগে থেকেই। বর্তমানে আমাদের প্ল্যাটের উৎপাদন ক্ষমতা একশ কেজি প্রতিদিন।

আমেরিকা এটাকে পরিচিত করাতে এখনো সংগ্রাম করছে বলেও জানান তিনি।

আইআইটি গৌহাটির রিসার্চ স্কলার কণা মন্ডল জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের এই প্রতিষ্ঠানের মূল গবেষণার বিষয়বস্তু হলো বায়োডিগ্রেডেবল পলিমার। এটা ব্যবহার করে যদি সেটা ফেলে দেন তাহলে প্রাকৃতিক নিয়মে মাটির সঙ্গে মিশে যাবে কোনো রকম দূষিত পদার্থ উৎপন্ন না করে। কমার্শিয়াল পলিমার ব্যবহার করে পরিবেশ দূষণের পাশপাশি মানব জাতিরও ক্ষতি হচ্ছে। সে কারণে আমাদের এ প্রতিষ্ঠান চেষ্টা করছে কমার্শিয়াল পলিমারের জায়গায় বায়োডিগ্রেডেবল পলিমার রিপ্লেস করে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার।

তিনি আরও বলেন, অনেক দিনের গবেষণার পর আমাদের এ প্রতিষ্ঠান অনেক ধরনের বায়োডিগ্রেডেবল পলিমার উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে। আমাদের কারখানায় এই পলিমার ব্যবহার করে আমরা বিভিন্ন ধরনের ক্রাফট বানিয়েছি। যেমন কাপ, প্যাকেজিং ফ্লিমস, প্লাস্টি প্লেট, বিভিন্ন ধরনের খেলনা---এগুলো সব আমাদের ল্যাবে বানানো।

jagonews24

কণা বলেন, বাঁশ, ধানের নাড়া বা শুকনো গাছ, আখ প্রভৃতি উপকরণ যাতে সুগার বা কার্বোহাইড্রেড আছে এবং অ্যাসিডে রূপান্তর করা যায় এমন যে কোনো সোর্স থেকে আমাদের প্ল্যান্টের মাধ্যমে পলিমার বা প্লাস্টিক উপকরণ তৈরি করা যাবে।

এর উৎপাদন খরচ ও বর্তমান অবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের ইন্ডাস্ট্রি সেটআপের কাজ চলছে। পাইলটিং শুরু হয়েছে। শিগগির হয়তো বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাবে। শুরুর দিকে উৎপাদন খরচ একটু বেশি হলেও পরে সেটা কমে আসবে।

এই রিসার্চ সেন্টারটি সরকারি অর্থায়নে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠিত।

এএসএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।