মেক্সিকো সীমান্ত থেকে ভেঙে ফেলা হচ্ছে ট্রাম্পের নির্মিত প্রাচীর

অবৈধ অভিবাসীদের প্রবেশ ঠেকাতে মেক্সিকো সীমান্তে শত শত কনটেইনার দিয়ে তৈরি অস্থায়ী দেয়াল সরিয়ে ফেলতে রাজি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের সরকার। এ দেয়াল নির্মাণের বিরুদ্ধে মামলা ও এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলো স্থানীয় সরকার।
ফেডারেল ভূমিতে প্রাচীরটি অবৈধভাবে নির্মাণ করার অভিযোগে মামলা দায়ের করার এক সপ্তাহ পর অ্যারিজোনার স্থানীয় সরকার শিপিং কনটেইনারগুলোর একটি সারি সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়।
বুধবার (২১ ডিসেম্বর) ফেডারেল সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তি হওয়ার পর অ্যারিজোনার রিপাবলিকান গভর্নর ডগ ডুসির নেতৃত্বাধীন প্রশাসন বলেছে, আগে নির্মাণ করা সব শিপিং কনটেইনার ও সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম, যানবাহন ও অন্যান্য জিনিস জানুয়ারির প্রথম দিকে সরিয়ে ফেলা হবে।
জানা যায়, অ্যারিজোনার সঙ্গে মেক্সিকোর ৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ২০১৭ সাল থেকে এ সীমান্ত এলাকার বিশাল অংশে দেওয়ালটি তৈরি করা হয়।
৯০০টিরও বেশি শিপিং কন্টেইনার দিয়ে তৈরি এ দেয়াল নির্মাণে ব্যয় হয়েছে অন্তত আট কোটি মার্কিন ডলার। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণ ও সীমান্ত নিরাপত্তা বৃদ্ধি ছিল সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অন্যতম রাজনৈতিক উদ্দেশ্য।
জানা যায়, অঙ্গরাজ্যটির গভর্নর ডগ ডুসির নির্দেশেই দেয়ালটি নির্মাণ করা হয়। সেসময় তিনি যুক্তি দেখিয়েছিলেন, দেওয়ালটি মেক্সিকোর বিপুলসংখ্যক অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে বাধা দেবে। তবে তার এ যুক্তির বিরোধিতা করে আইনি চ্যালেঞ্জ ছোড়েন অনেকে।
রয়টার্স বলছে, ডগ ডুসি চলতি বছরের আগস্টে একটি নির্বাহী আদেশে সই করেন। যাতে রাষ্ট্রীয় একটি সংস্থাকে তিনি মেক্সিকোর সঙ্গে ৬০০ কিলোমিটার (৩৭০ মাইল) সীমানা বরাবর রাখা শিপিং কনটেইনারগুলোর ফাঁকা বন্ধ করার নির্দেশ দেন।
নির্বাহী ওই আদেশে সই করার সময় ডুসি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের পথ হিসেবে অ্যারিজোনার সীমান্ত এলাকা ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে তার দেয়াল নির্মানের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় মার্কিন বিচার বিভাগ যুক্তি দেয়, ফেডারেল জমিতে অবৈধভাবে দেয়ালটি নির্মা করা হয়েছে।
অবশ্য ডুসি এর আগে বলেছিলেন, অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যকে রক্ষা করা ও এর নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তার অধিকার। এমনকি, তার কার্যালয় থেকে অভিবাসীদের ক্রমবর্ধমান প্রবেশকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘অশুভ’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়।
আরও জানা যায়, গভর্নর ডগ ডুসি এ বছরের শুরুতে করোনাডো ন্যাশনাল ফরেস্টে অস্থায়ী প্রাচীর নির্মাণ শুরু করেছিলেন। কিন্তু সাত কিলোমিটার দীর্ঘ প্রাচীরটি কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থাকা জমিতে ঢুকে পড়ায় মার্কিন সরকার গত সপ্তাহে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।
অবশ্য ওই এলাকায় কাজ করা পরিবেশরক্ষা গোষ্ঠী সেন্টার ফর বায়োলজিক্যাল ডাইভারসিটি এ ধরনের দেয়ালের বিরুদ্ধে আরও দুটি মামলা করেছিল।
সংস্থাটির দাবি, কনটেইনারের প্রাচীরটি অতি গুরুত্বপূর্ণ সংরক্ষিত বনাঞ্চলকে বিভক্ত করে ফেলেছে। এর ফলে ওই বনের প্রাণীদের আবাসস্থল, পানীয় জলের উৎস ও চলাচলের জায়গাগুলো বন্ধ হয়ে গেছে।
সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স
এসএএইচ