ওরা কারও সন্তান নয়!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:৩৫ পিএম, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
সিরিয়ায় ধ্বংসস্তূপের নিচে জন্ম নেওয়া শিশু আয়া। ছবি সংগৃহীত

তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তে গত সপ্তাহের ভয়াবহ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের নিয়ে উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছে। জাতিসংঘ বলছে, সিরিয়ার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ২০ লাখের বেশি শিশু বড় হচ্ছে কেবল যুদ্ধ আর বাস্তুচ্যুত হওয়া দেখে। ভূমিকম্প সেই পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলেছে। ফলে এসব শিশুর ভবিষ্যৎ এখন ঘোর অন্ধকারে। খবর আল-জাজিরার।

জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পের পর সিরীয় শিশুদের অবস্থা খুবই খারাপ। বহু শিশু, নারী ও বৃদ্ধ গুরুতর আতঙ্কে ভোগায় মানসিক আঘাতপ্রাপ্ত লোকের সংখ্যা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আরও পড়ুন>> ১১তম দিনে উদ্ধার ১২ বছরের শিশু

জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় কার্যালয়ের নিউরোলজিস্ট আল-ইয়ামানি সম্প্রতি মাথায় আঘাত পাওয়া তিন মাসের একটি শিশুর চিকিৎসা দিয়েছিলেন। সেই ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা তার পরিবার সম্পর্কে এখন পর্যন্ত কিছুই জানি না। তাকে কেউ নিতেও চায়নি।

jagonews24গত ৯ ফেব্রুয়ারি সিরিয়ার জাবলেহ জেলায় মসজিদের ভেতর শুয়ে রয়েছে একটি শিশু। ছবি সংগৃহীত

অবশ্য এর ব্যতিক্রমও রয়েছে। যেমন- গত ৬ ফেব্রুয়ারি ভূমিকম্পের কয়েক ঘণ্টা পর ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধার করা হয় এক নবজাতককে। উদ্ধারকারীরা যখন তাকে খুঁজে পান, তখনো মায়ের মাতৃনাড়ি তার সঙ্গে জোড়ানো ছিল। অর্থাৎ, ধ্বংসস্তূপের নিচেই জন্ম হয়েছিল শিশুটির। পাশে পড়েছিল মৃত মায়ের দেহ।

আরও পড়ুন>> বেঁচে আছে ধ্বংসস্তূপের নিচে জন্মানো শিশুটি

হাসপাতালে চিকিৎসার পর সুস্থ রয়েছে মেয়েটি। তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘আয়া’, আরবিতে যার অর্থ ‘অলৌকিক’। আয়াকে উদ্ধার ও তার পরবর্তী আবেগপ্রবণ ছবিগুলো ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। এরপর তাকে দত্তক নিতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আবেদন করেন কয়েক হাজার মানুষ।

আয়ার পরিবারের অন্য সদস্যদের খবর জানা যায়নি। তবে তার এক চাচার সন্ধান মিলেছে। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলে তিনিই মেয়েটির দায়িত্ব নিতে চেয়েছেন।

ইউনিসেফের জরুরি যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ জো ইংলিশের মতে, জরুরি পরিস্থিতির পরপরই দত্তক নেওয়া মোটেও উচিত নয়।

আরও পড়ুন>> ‘আল্লাহ, মৃত্যু দাও না হয় বাড়ি ফেরাও’

তিনি সিএনএন’কে বলেন, যতক্ষণ না একটি শিশুর পিতামাতা বা পরিবারের অন্য ঘনিষ্ঠ সদস্যদের অবস্থান যাচাই করা যায়, ততক্ষণ প্রতিটি বিচ্ছিন্ন শিশুর নিকটাত্মীয় জীবিত বলে মনে করা হয়। তখন পরিবারের সঙ্গে শিশুদের পুনর্মিলিত করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করা উচিত।

অবশ্য সবার ভাগ্য আয়ার মতো নয়। ইংলিশের কথায়, যদিও আমাদের এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট সংখ্যা জানা নেই। তবে বিপর্যয় ও ক্রমবর্ধমান মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে এটি স্পষ্ট যে, এই বিধ্বংসী ভূমিকম্পে অনেক শিশু পিতামাতা বা নিকটাত্মীয় হারিয়েছে।

আরও পড়ুন>> ধ্বংসস্তূপের নিচে দিনের পর দিন মানুষ কীভাবে বেঁচে থাকে?

তিনি বলেন, সঙ্গীবিহীন এবং পিতামাতা ও নিকটাত্মীয়দের থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া শিশুদের শনাক্ত করা জরুরি। এতে তারা দ্রুত যথাযথ যত্ন ও সমর্থন পেতে পারে এবং আমরা তাদের পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলিত করার কাজ শুরু করতে পারি৷

ইউনিসেফ কর্মকর্তার মতে, এ ধরনের বিপর্যয়ের পরে বাস্তুচ্যুত, বিশেষ করে সঙ্গীহীন বা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন শিশুরা পাচার বা লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা, শোষণ এবং অপব্যবহারের ঝুঁকিতে থাকে।

কেএএ/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।