সিরীয়দের আকুতি
‘আল্লাহ, মৃত্যু দাও না হয় বাড়ি ফেরাও’
ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তুরস্কের আন্তাকিয়ায় বেঁচে যাওয়া লোকদের আপাতত একটি তাঁবু-কেন্দ্রে আশ্রয় দিয়েছে তুর্কি সামরিক বাহিনী। তবে সেখানেও সিরীয়দের জন্য কষ্টের কারণ হয়ে উঠেছে জাতীয়তা। তাঁবু-কেন্দ্রের নিরাপত্তা চিন্তায় তুর্কি এবং সিরীয় নাগরিকদের আলাদাভাবে রেখেছে কর্তৃপক্ষ।
সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন সিরিয়ার ইদলিব থেকে আসা শরণার্থী হাসান জাদান। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে তিনি জানিয়েছেন, এ নিয়ে ১১বার ঘরছাড়া হলো তার পরিবার।
আট সন্তানের জনক হাসান বলেন, আমরা কেবল একটাই জিনিস চাই, আল্লাহ আমাদের মৃত্যু দিক অথবা সিরিয়ার বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যাক।
আরও পড়ুন>> জার্মানিতে জ্বালিয়ে দেওয়া হলো তুরস্কের ত্রাণ
বার্তা সংস্থা এপির খবর অনুসারে, তুরস্ক-সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানার এক সপ্তাহ পরেও খাদ্য-আশ্রয়ের মতো মৌলিক সাহায্য না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন অনেকে। বিশেষ করে, সিরিয়ার অবস্থা খুবই করুণ।
তুরস্কের আদিয়ামান শহরে একটি তাঁবুকেন্দ্র। ছবি সংগৃহীত
১২ বছরের গৃহযুদ্ধ দেশটিতে ত্রাণ পৌঁছানোর কাজও জটিল করে তুলেছে। সেখানে ঘর হারানো অনেক মানুষ অভিযোগ করেছেন, তারা এখন পর্যন্ত কিছুই পাননি। আর তুরস্কে জনাকীর্ণ তাঁবু-কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে বহু সিরীয় শরণার্থী।
আরও পড়ুন>> ভূমিকম্পের পর তুরস্কে সিরীয়বিরোধী মনোভাব বাড়ছে
উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর একটি জিন্দেরিস শহর। সেখানে নিজের ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির বাইরে বসে ছিলেন আহমেদ ইসমাইল সুলেমান। তিনি পরিবার নিয়ে নড়বড়ে ঘরে ফিরে যেতে ভয় পাচ্ছেন। অথচ সেটি মেরামতের সামর্থ্য নেই। এ কারণে পরিবারের ১৮ সদস্য মিলে ছোট্ট একটি তাঁবুর মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন তারা।
ইসমাইল বলেন, আমরা এখানে বসতে পারি, কিন্তু শুয়ে ঘুমাতে পারি না। আমরা একটা উপযুক্ত তাঁবুর জন্য অপেক্ষা করছি।
গত সোমবার দামেস্ক সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তির ঘোষণা দিয়েছে জাতিসংঘ। চুক্তি অনুসারে, তুরস্ক থেকে উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে আরও দুটি সীমান্ত ক্রসিংয়ের মাধ্যমে জাতিসংঘের সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হবে। তবে এসব এলাকায় ত্রাণ চাহিদা প্রচুর বলে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন>> শেষ হতে চলেছে তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্পের উদ্ধার পর্ব
গত ৬ ফেব্রুয়ারি তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তে আঘাত হানে ৭ দশমিক ৮ ও ৭ দশমিক ৬ মাত্রার ভয়াবহ দুটি ভূমিকম্প। আরও শতাধিক আফটারশক রেকর্ড করা হয় পরের দিনগুলোতে। এতে পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় তুরস্কের দক্ষিণ ও সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল। চলতি শতাব্দীর ভয়াবহতম এ ভূমিকম্পে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৩৭ হাজারের বেশি মানুষ।
তুর্কি কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, দেশটিতে এ পর্যন্ত ৩১ হাজার ৯৭৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। জাতিসংঘ ও সিরীয় সরকারের তথ্য বলছে, সিরিয়ায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫ হাজার ৮০০ জনের বেশি।
কেএএ/