প্রতি কেজি কালো সোনা ৪০ হাজার টাকা
মাঠ জুড়ে গোছায় গোছায় সাদা সাদা ফুল। আর ওই সাদা ফুলের মধ্যে লুকিয়ে আছে মূল্যবান ফসল পেয়াঁজের বীজ। যার এক কেজি বীজের দাম ত্রিশ থেকে চল্লিশ হাজার টাকা। বীজের চাহিদা ও জোগান এবং প্রকারভেদে অনেক সময় এর দাম লাখেও পৌঁছে যায়। আর সাদা সাদা ফুলের মধ্যে এই দামি ছোট কালোবর্ণের দানা কেউ বলে কালো সোনা ! এমনটিই জানান পেয়াঁজ বীজ চাষে সংশ্লিষ্ট চাষীরা।
ফরিদপুরের মাটি ও আবহাওয়া পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনের জন্য বেশ উপযোগী। তাই দেশের পেঁয়াজ বীজের সিংহভাগই উৎপাদিত হয় এই অঞ্চলে। সদর উপজেলার অম্বিকাপুর, কানাইপুর, হাটগোবিন্দপুর, ধুলদী, কৈজুরীসহ আটটি উপজেলার বিভিন্ন মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছে সাদা সাদা পেয়াঁজের বীজ ক্ষেত। যা স্বচক্ষে দেখে তার সৌন্দর্য উপভোগ করে চাষি ও এলাকাবাসী। পেয়াঁজের চাষ যেমন ব্যয় বহুল ও কষ্টসাধ্য এবং তেমনই লাভজনক।
অতিমাত্রায় রোদ, বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, কুয়াশা আর ঝড়ো হাওয়া এই ফসলের সবচেয়ে বড় শত্রু। অনেক ঝুঁকি নিয়েও নগরকান্দা, সালথা, ভাঙ্গা, সদরপুর, চরভদ্রাসন, মধুখালি উপজেলার মাঠে মাঠে আবাদ হয়েছে পেয়াঁজের বীজ চাষ। আর মাত্র কয়েক দিন পরেই সাদা ফুলগুলো আস্তে আস্তে কালো রং ধারণ করার পরই সেগুলো গাছ থেকে কাটা হবে। এরপর মাড়ায় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফুল থেকে কালো কালো বীজ সংগ্রহ করে সংরক্ষণ ও বাজারজাত করা হবে।20160308143403.jpg)
অম্বিকাপুর ইউনিয়নের পেয়াঁজ বীজ চাষি বক্তার খান জানান, দীর্ঘদিন যাব এই ফসলের চাষাবাদ করে আসছেন তিনি। গত বছর ১৪ একর জমিতে পেয়াঁজ বীজের চাষ করে ভালই হওয়ায় এ বছর মোট ১৭ একর জমিতে বীজের চাষ করেছেন।
প্রতি একর জমিতে সবকিছু মিলে উৎপাদান খরচ হয়েছে এক লাখ ২০ হাজার টাকা। ফলন ভাল হলে একর প্রতি ২০০ কেজি বীজ পাবেন এবং কোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসল নষ্ট না হলে এ বছরও ভালো লাভ হবে বলেও তিনি মনে করেন।
সারাদেশের চাহিদার প্রায় ৮০ ভাগ পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন হয় ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায়। পেঁয়াজ বীজ নিতে মানিকগঞ্জ, পাবনা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, গাইবান্ধা, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, সিলেট, রংপুরসহ বিভিন্ন জেলার চাষিরা আসেন ফরিদপুরে।20160308143439.jpg)
এদিকে, ব্যয়বহুল এই বীজ চাষে ব্যাংক ঋণসহ সরকারের সাহায্যে সহযোগিতা এবং বিএডিসি কর্তৃপক্ষ যদি আর একটু বেশি দামে চাষিদের কাছ থেকে বীজ কিনে তাদের উপকৃত হওয়া সম্ভব বলে দাবি পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত কৃষকেরা।
সোনালী ব্যাংক লিমিটেড ফরিদপুরের জেনারেল ম্যানেজার্স অফিসের ডিজিএম লহ্মী নারায়ণ ঘোষাল বলেন, ফরিদপুর অঞ্চলে ব্যাপক হারে পেঁয়াজ বীজের আবাদ হয়ে থাকে। আর আমরাই পেঁয়াজ বীজ চাষিদের শতকরা ৪ সুদে ঋণ প্রদান করে থাকি।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ জিএম আব্দুর রউফ জানান, দিন দিন ফরিদপুর অঞ্চলে পেঁয়াজ বীজের আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অঞ্চলের উৎপাদিত বীজ দেশের বিভিন্ন জেলার চাহিদা পূরণ করে থাকে। চলতি বছর ২৫৯৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজের আবাদ হয়েছে। পেঁয়াজ বীজ আবাদে চাষিদের আমরা সব ধরনের সহযোগীতা করে থাকি বলেও জানান তিনি।
এস এম তরুন/এআরএ/এবিএস