কীভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় চমক দেখাচ্ছে ইন্দোর?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:৪১ পিএম, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩
  • বর্জ্য পৃথকীকরণ
  • বর্জ্যকে মিথেন বায়োগ্যাসে রূপান্তর
  • প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে জ্বালানি উৎপাদন
  • শহরকে টেকসই, সবুজ ও পরিবেশ বান্ধব করা

ইন্দোর, ভারতের মধ্যপ্রদেশের একটি শহর। এটি মধ্য ভারতের ব্যবসায়িক ও শিক্ষার অন্যতম কেন্দ্র। ২০১৭ সালের পর থেকেই শহরটি ভারতের পরিচ্ছন্ন শহরের তকমা পেয়ে আসছে। শহরটি যে কেবল অবস্থান ধরে রেখেছে তাই নয়, প্রতি বছর ইন্দোর তার নিজস্ব কর্মক্ষমতা আরও উন্নত করতে এবং অনন্য উদ্যোগের মাধ্যমে শহরটিকে টেকসই, সবুজ ও পরিবেশ বান্ধব করে তোলে।

পুরো শহরকে উন্মুক্ত মলত্যাগ ও আবর্জনা মুক্ত করার পর গত কয়েক বছর ধরে, ইন্দোর মিউনিসিপ্যাল ​​করপোরেশন (আইএমসি) উৎস পর্যায়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ওপর দৃষ্টি দিয়ে শহরকে পরিচ্ছন্ন করে তুলছে। আইএমসি জানিয়েছে, তদের মূল লক্ষ্য হলো রিসাইক্লিং, রিউজিং এবং বর্জ্য দ্রুত ও আরও সংগঠিত উপায়ে নিষ্পত্তি করা।

আরও পড়ুন>যেসব কারণে ভারতের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন শহর ইন্দোর

বর্তমানে ভারতের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন শহরটি গৃহস্থালি ও বাণিজ্যিক পর্যায়ে ছয়-বিনের বর্জ্য পৃথকীকরণ ব্যবস্থা অনুসরণ করছে, যার মধ্যে রয়েছে শুকনো বর্জ্য, ভেজা বর্জ্য, প্লাস্টিক বর্জ্য, ই-বর্জ্য, গার্হস্থ্য স্যানিটারি বর্জ্য ও ঘরোয়া বিপজ্জনক বর্জ্য।

ইন্দোর মিউনিসিপ্যাল ​​করপোরেশন কেন্দ্রের স্বচ্ছ ভারত অভিযানের উপদেষ্টা আসাদ ওয়ার্সি বলেন, গড়ে প্রতিদিন শহরে ৫৩০ টন ভেজা বর্জ্য, ৪৬০ টন শুকনো বর্জ্য, ১৪ টন প্লাস্টিক বর্জ্য, ২ দশমিক ৫ টন ই-বর্জ্য, ১১ টন স্যানিটারি বর্জ্য এবং ৩ দশমিক ৫ টন বিপজ্জনক বর্জ্য উৎপাদন হয়। শহরের বর্জ্য মোকাবিলায় আমরা আলাদা ব্যবস্থা নিয়েছি। শহরটি উৎস পর্যায়ে বর্জ্য উৎপাদন বন্ধ করার কৌশল নিয়েও কাজ করছে এবং চারটি ওয়ার্ডকে এরই মধ্যে শূন্য-বর্জ্য ওয়ার্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে।

ওয়ার্সি বলেন, যখন বর্জ্য পৃথকীকরণ শুরু করা হয় তখন ৮০ শতাংশেরও বেশি বাসিন্দা বর্জ্য আলাদা করতেন না। পরে পরিবেশের জন্য এই প্রক্রিয়া কেন গুরুত্বপূর্ণ তা বাসিন্দাদের বুঝাতে হয়েছে। তারপরও যারা এই প্রক্রিয়া মানতেন না তাদের আমরা জরিমানা করতে শুরু করি। তিনি আরও বলেন, পৌর করপোরেশনের সংগৃহীত বর্জ্য যানবাহনে পরিবহন করা হয় এবং সংগৃহীত বর্জ্যের ১০০ শতাংশই একই দিনে প্রক্রিয়াজাত করা হয়।

আরও পড়ুন>যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্দুক হামলা, নিহত ৪

আইএমসি ভেজা বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের জন্য বেশ কয়েকটি প্ল্যান্টও স্থাপন করেছে। ইন্দোর ভেজা বর্জ্যকে জ্বালানিতে রূপান্তর করার একটি উদ্যোগ নিয়েছে এবং একই সঙ্গে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর শহরটি নির্ভরতা কমিয়েছে। আইএমসির স্থাপিত বর্জ্য-টু-জ্বালানি প্ল্যান্ট ভিজা বর্জ্যকে মিথেন বায়োগ্যাসে রূপান্তরিত করে, যা পরবর্তীতে সিএনজিতে রূপান্তার করা হয়।

তিনি বলেন, আমরা বাগানের বর্জ্য ব্যবস্থাপনারও একটি উদ্যোগ নিয়েছি, যার অধীনে প্রতিদিন প্রায় ৫৯ টন বাগান ও উদ্যানের বর্জ্য প্রক্রিয়া করা হচ্ছে। আইএমসি বর্জ্য থেকে কম্পোস্ট তৈরির জন্য মোবাইল কম্পোস্টিং ইউনিটও ব্যবহার করে। আমরা মানুষকে হোম কম্পোস্টিং অনুশীলন করতে উত্সাহিত করছি। বর্তমানে শহরের ৫০ হাজারের বেশি পরিবার তাদের রান্নাঘরের বর্জ্য বাড়িতে কম্পোস্ট করছে।

আইএমসি প্লাস্টিক আবর্জনা সংগ্রহের একটি অনন্য ব্যবস্থা অনুসরণ করছে। শহরটির সব পরিবারকে আলাদাভাবে প্লাস্টিক বর্জ্য সংরক্ষণের জন্য দুটি বড় ব্যাগ দেওয়া হয়েছে। একটি ব্যাগ ভর্তি হয়ে গেলে, বাসিন্দারা শহরের প্লাস্টিক বর্জ্য পুনর্ব্যবহারের জন্য নিযুক্ত সংস্থাকে একটি মেসেজ পাঠায়। এরপর সংস্থার কর্মীরা প্লাস্টিক কিনতে নির্দিষ্ট বাড়িতে যায়। এতে পরিবারগুলোও লাভবান হয়। পরে প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট পন্থায় প্রক্রিয়া করে জ্বালানি উৎপাদন করা হয়।
প্লাস্টিকের বর্জ্যকে সিমেন্টের ব্রিকস বানানোরও প্ল্যান্ট রয়েছে।

২০১৯ সালে আইএমসি ইন্দোরকে ‘নো ল্যান্ডফিল সিটি’ (বর্জ্য ফেলার জায়গা) করার সিদ্ধান্ত নেয়। এর মাত্র ছয় মাসের মধ্যে ১৫ লাখ টন বর্জ্য অপসারণ করে ১০০ একর জমি পুনরুদ্ধার করা হয়, যার মূল্য ভারতীয় মুদ্রায় ৪০০ কোটি।

সূত্র: এনডিটিভি

এমএসএম

 

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।