পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মারা গেছেন

পশ্চিমবঙ্গ প্রতিনিধি পশ্চিমবঙ্গ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১১:২৯ এএম, ০৮ আগস্ট ২০২৪
ছবি: সংগৃহীত

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মারা গেছেন। তিনি ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট শাসনের দ্বিতীয় এবং শেষ মুখ্যমন্ত্রী। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। ২০০০ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত টানা ১১ বছর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।

স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) সকালে বুদ্ধদেবের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন তার সন্তান সুচেতন ভট্টাচার্য। তিনি জানান, সকালে নাস্তা করার পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তার বাবা। সকাল ৮টা ২০ মিনিটে পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতেই তার মৃত্যু হয়। খবর পেয়েই সেখানে যান সুচেতন।

একটি সূত্র জানিয়েছে, বুধবার রাতে বুদ্ধদেবের শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। তখনই ঠিক করা হয়েছিল যে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে উডল্যান্ডসের চিকিৎসকরা এসে তাকে পরীক্ষা করবেন। প্রয়োজনে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হবে। হাসপাতালে যাওয়ার বিষয়ে তার বেশ অনীহা ছিল। তাই চিকিসকদের পরামর্শের কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন বুদ্ধদেব। সকালে উঠে নাস্তার পর চা খেয়েছিলেন। তারপরেই অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে নেবুলাইজার দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। সে সময়ই তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। দ্রুত চিকিৎসকদের খবর দেওয়া হয়। তারা এসে বুদ্ধদেবকে মৃত ঘোষণা করেন।

বুদ্ধদেব তার পূর্বসূরি জ্যোতি বসুর মতোই মরণোত্তর দেহদান করে গেছেন। সেই প্রক্রিয়া কোথায় এবং কী ভাবে সম্পন্ন হবে তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু করেছেন সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব। বুদ্ধদেবকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর বিষয়টি নিয়েও তারা আলোচনায় বসবেন। বুদ্ধদেব পলিটব্যুরোর সদস্য ছিলেন। ফলে দিল্লির নেতাদেরও তার শেষযাত্রায় একটা ভূমিকা থাকবে। আপাতত পাম অ্যাভিনিউয়ের দুই কামরার ফ্ল্যাটেই তার মরদেহ রাখা হচ্ছে।

গত বছরের ৯ আগস্ট হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন বুদ্ধদেব। সে বছরের ২৯ জুলাই আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ভর্তি করানো হয়েছিল দক্ষিণ কলকাতার আলিপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। বেশ কয়েকদিন তাকে ভেন্টিলেশন (ইনভেনসিভ) সাপোর্টে রাখেন চিকিৎসকরা। তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তার ফুসফুস এবং শ্বাসনালিতে মারাত্মক রকমের সংক্রমণ ধরা পড়ে। হাসপাতালে প্রথম কয়েকদিন মূলত আচ্ছন্ন অবস্থাতেই ছিলেন বুদ্ধদেব। তবে ক্রমশ তিনি চিকিৎসায় সাড়া দেন। ১২ দিনের মাথায় ছেড়ে দেওয়া হয় তাকে। বাড়িতে ফিরিয়েও অবশ্য কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেই রাখা হয়েছিল তাকে।

দীর্ঘদিন ধরেই গুরুতর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় (সিওপিডি) ভুগছিলেন বুদ্ধদেব। অসুস্থতার কারণে শেষ কয়েক বছর কার্যত গৃহবন্দিই ছিলেন তিনি। আগেও বেশ কয়েকবার তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন বুদ্ধদেব। সেই সময়েও কয়েকদিন ভেন্টিলেশনে রাখতে হয় তাকে। সেখান থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি।

২০২১ সালের মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে কোভিডে আক্রান্ত হন বুদ্ধদেব। অবস্থার অবনতি হওয়ায় ১৮ মে ভর্তি করানো হয় হাসপাতালে। একই সময়ে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন তার স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্যও। একই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাকেও। দু’জনেই কোভিড নেগেটিভ হয়ে ফেরেন কিছু দিনের মধ্যে।

২০২২ সালের ২৫ জানুয়ারি বুদ্ধদেব সংবাদের শিরোনামে আসেন পদ্মভূষণ প্রত্যাখ্যান করে। কেন্দ্রীয় সরকার তার নাম মনোনীত করলেও, তিনি এই সম্মান নিতে অস্বীকৃতি জানান।

ডিডি/টিটিএন

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।