দেশে দেশে বড়দিনের উৎসব
২৫ ডিসেম্বর শুভ বড়দিন। খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব । ২৫ ডিসেম্বর তারিখে যিশু খ্রিষ্টের জন্মদিন উপলক্ষে এই উৎসব পালিত হয়। চলুন জেনে আসা যাক পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কীভাবে উদযাপিত হয় বড়দিন উৎসব-
বাংলাদেশ: ১৬ শতকে পর্তুগিজরা বাংলাদেশে খ্রিস্টধর্ম নিয়ে আসেন। এ দেশে প্রথম গির্জাটি তৈরি হয় ১৫৯৯ সালে পুরাতন যশোরের কালীগঞ্জের কাছে সুন্দরবন এলাকায়। ভারতের কলকাতার প্রতিষ্ঠাতা জব চার্নকই প্রথম দিবসটি উদযাপন করেন। এই দিনটিতে খ্রিস্টানরা আনন্দ-ফুর্তি করে এবং একে অন্যকে শুভেচ্ছা কার্ড ও উপহার দেয়। তৈরি হয় মজার মজার খাবার।
যুক্তরাষ্ট্র: প্রতিবছর বড়দিন উপলক্ষে বিশেষ আয়োজন করে যুক্তরাষ্ট্রের সবচে বড় গির্জা সেন্ট প্যাট্রিক ক্যাথড্রিল কর্তৃপক্ষ। বর্ণিল আলোয় সাজিয়ে তোলা হয় গির্জা চত্বর। প্রতিবছর নিউ ইয়র্কবাসীর পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বড়দিন উপলক্ষে এ গির্জায় প্রার্থনা করতে আসেন বহু মানুষ। গির্জার সামনে রকফেলার সেন্টারে আলোকসজ্জায় সাজিয়ে তোলা হয় যুক্তরাষ্ট্রের সবচে বড় ক্রিসমাস ট্রি। মার্কিনীদের পাশাপাশি বড়দিন উপলক্ষে বিশেষ প্রস্তুতি নিয়ে থাকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা। দূর প্রবাসে বন্ধু আর প্রতিবেশীদের সাথে ঘরোয়া আয়োজনের মধ্য দিয়েই বড়দিনের আনুষ্ঠানিকতা পালন করে থাকেন তারা।
রাশিয়া: সব দেশে ২৫ ডিসেম্বর ক্রিসমাস পালন করা হলেও রাশিয়ায় ক্রিসমাস পালিত হয় ৭ জানুয়ারি। এর কারণ হলো রাশিয়ার অর্থোডক্স চার্চ ধর্মীয় অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারণের ক্ষেত্রে পুরনো জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে। কেউ চাইলে ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন পালন করতে পারে। তবে সবাই বড়দিন উদযাপন করে ৭ জানুয়ারিতেই।
বেলজিয়াম: বেলজিয়ামে বড়দিন পালনের রীতিটি আবার ভিন্ন। তারা ডিসেম্বরের ৬ তারিখ সিন্টারক্লজ বা সেইন্ট নিকোলাস নামের একটি অনুষ্ঠান উদযাপন করে। এটি ক্রিসমাস থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি অনুষ্ঠান। এদিন বেলজিয়ামে সান্তা ছোটদের জন্য উপহার নিয়ে আসেন। এছাড়াও বড়দিন উপলক্ষে বাবা মায়েরা বাচ্চাদের দেন নানা ধরনের উপহার। ক্রিসমাস ট্রির নিচে, স্টকিং বা মোজায় তারা এই উপহার দিয়ে থাকেন।
ফ্রান্স: ফ্রান্সে ক্রিসমাসকে বলা হয় নোয়েল। আর ক্রিসমাস ফাদার বা সান্তাক্লজকে বলা হয় পেরি নোয়েল। ফ্রান্সের সবাই ক্রিসমাস ট্রিকে পুরনো ধাঁচের সাজে সাজাতেই বেশি ভালোবাসে। তারা তাদের ট্রির উপরে লাল রঙের রিবন মুড়িয়ে তার সঙ্গে সাদা মোমবাতি দিয়ে ক্রিসমাস ট্রি সাজায়।
পর্তুগাল: পর্তুগালেও ক্রিসমাসের অন্যতম আকর্ষণ হলো ক্রিসমাস ফাদারের আনা উপহার। ক্রিসমাসের আগের দিন সন্ধ্যায় অর্থাৎ ক্রিসমাস ইভ এ ক্রিসমাস ট্রির নিচে বা চিমনির সামনে ঝোলানো মোজার মধ্যে ক্রিসমাস ফাদার উপহার দিয়ে যান। আর ক্রিসমাস ইভ মধ্য রাতে সিদ্ধ আলু আর নোনতা শুকনো কড মাছ দিয়ে ক্রিসমাসের ভোজ সারেন।
নিউজিল্যান্ড: নিউজিল্যান্ডে ক্রিসমাসের দিনটি শুরু হয় ক্রিসমাস ট্রির নিচে রাখা উপহারের প্যাকেট খোলার মধ্য দিয়ে। এরপর ক্রিসমাসের দুপুরের খাবার পরিবারের সবাই একসঙ্গেই খান। টার্কি আর মুরগির মাংস দিয়েই চলে খাওয়ার পর্ব। এরপর শুরু হয় চা পানের আসর। আর রাতে পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে চলে বার-বি-কিউ পার্টি।
ব্রাজিল: ব্রাজিলে সান্তাক্লজকে পাপাই নোয়েল বলে ডাকা হয়। এই দেশে যারা একটু বেশি ধনী, তারা ক্রিসমাসে খাবারের তালিকায় মুরগি, টার্কিসহ নানা সুস্বাদু খাবারের আয়োজন করে। এছাড়া চকোলেট আর কনডেন্সড মিল্কের মিশ্রণে তৈরি মিষ্টিও থাকে।