বিসিএসে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্নপূরণ ঔষ্ণিকের

মমিন উদ্দিন
মমিন উদ্দিন মমিন উদ্দিন , লেখক
প্রকাশিত: ০১:৩৭ পিএম, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩

অর্ভ নগভিত শুভ ঔষ্ণিক ৪৩তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তার বাবা আবু বকর সিদ্দিক, মা পারমিতা ইসলাম। তিনি ১৯৯৭ সালের ০৩ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলার গাজিরচর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষাজীবনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগ থেকে সম্মান ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে তিনি বিসিএস জয়, ক্যারিয়ার পরামর্শ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মমিন উদ্দিন—

জাগো নিউজ: ক্যাডার পাওয়ার অনুভূতি কেমন?
অর্ভ নগভিত শুভ ঔষ্ণিক: বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার যে অভূতপূর্ব এক অনুভূতি, সেটি শব্দের বেড়াজালে বন্দি করা সত্যিই কঠিন ব্যাপার। শুধু বিসিএস বলে নয়, প্রত্যেক মানুষই যখন তার স্বপ্ন পূরণের চূড়ান্ত প্রান্তে এসে দাঁড়ায়—এক এলোমেলো শুভ্র সুখ যেন তার মন-প্রাণকে আচ্ছন্ন করে দেয়। আমার ক্ষেত্রেও অনেকটা সেরকম হয়েছে। ফলাফল জানার পর কিছু সময় স্তম্ভিত হয়ে ছিলাম। আমি দুঃখী নাকি সুখী তা যেন বুঝে উঠতে পারছিলাম না। ধীরে ধীরে আত্মীয়-স্বজন, প্রিয়জন, শিক্ষক, ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধবীর অভিনন্দন এবং খুশি দেখে বুঝতে পারলাম, আমিও সুখী। কারণ আমি যে তাদের মধ্যেই বাঁচি।

আরও পড়ুন: বিসিএসে প্রথম পছন্দের ক্যাডারই পেয়েছেন মনির 

জাগো নিউজ: পড়াশোনায় কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল কি?
অর্ভ নগভিত শুভ ঔষ্ণিক: না। আমরা পাঁচ সদস্যের মধ্যবিত্ত স্বচ্ছল পরিবার। বাবা-মা, তিন ভাই-বোন হলেও কোনোদিন পড়াশোনায় প্রতিবন্ধকতা আসেনি। এসে থাকলেও বাবা-মা কোনোদিন এর সিকি পরিমাণও বুঝতে দেননি।

জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?
অর্ভ নগভিত শুভ ঔষ্ণিক: এই স্বপ্ন দেখার শুরুটা ঠিক কখন থেকে আরম্ভ হয়েছে তা বলা মুশকিল। তবে আমার স্বপ্নের শুরু হয়েছিল বাবা-মাকে কেন্দ্র করেই। বিশেষ করে আমার বাবা খুব চাইতেন যেন তার সন্তানদের কেউ পেশাজীবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়। পড়াশোনায় ফাঁকিবাজি আর সিনিয়র-জুনিয়র, বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে আড্ডা, নাচ-গান আর অনুষ্ঠান উপভোগ করতে করতে চোখের পলকে যেন বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ হয়ে গেল। রেজাল্ট কোনোরকম ফার্স্ট ক্লাস নিয়েই বিদায় হতে হলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে না পারলেও আমার হাতে বিসিএসে শিক্ষক হওয়ার সুযোগ তখনও ছিল। বাবা-মায়েরও যেন একই স্বপ্ন। কখন যে তাদের স্বপ্নই আমার হয়ে গেল, তার কি আর দিনক্ষণ বলা যায়?

জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই—
অর্ভ নগভিত শুভ ঔষ্ণিক: ধরুন, আপনার বর্তমান অবস্থান থেকে পাঁচ হাজার কিলোমিটার দূরে একটি অমূল্য সম্পদ আছে। যার মালিক হওয়ার একমাত্র শর্ত হলো, এই সম্পূর্ণ পথ আপনাকে হেঁটে যেতে হবে। হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে কাঙ্ক্ষিত সম্পদ হাতে পেয়ে তাকে যতটা সুন্দর দেখায়, সেই পাড়ি দেওয়া পথ হাঁটার বর্ণনা ততটাই বিরক্তিকর শোনায়। অর্থাৎ বিসিএস যাত্রার সম্পূর্ণ বর্ণনায় কোনো আনন্দ নেই, সুখ নেই। আছে শুধু পরিশ্রম, ক্লান্তি আর অবসাদ। তা-ও এর চুম্বক-অংশ পাঠকদের বলতে চাই।

আরও পড়ুন: হতাশ হয়েছি বহুবার কিন্তু হাল ছাড়িনি: আনিসুর রহমান 

বিসিএস যাত্রার পড়াশোনা শুরু হয়েছিল আমার বিভাগেরই এক ব্যাচ সিনিয়র পাভেল ভাই এবং গ্রামের ছোটবেলার বন্ধু শান্তর (জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়) মাধ্যমে। আমি তখনও পড়াশোনা শুরু করিনি, কেবল অনার্স শেষ হলো। পাভেল ভাই এবং আমি, ঢাকায় একই এলাকায় থাকার সুবাদে প্রতিদিন দেখা হয়, আড্ডা হয়। এদিকে বাড়ি এলে বন্ধু শান্তর সঙ্গে পড়াশোনা করার বিভিন্ন রোডম্যাপ, পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়। পড়াশোনা শুরু করতে এই দুজনের অনুপ্রেরণা এবং সহযোগিতা মারাত্মক কাজে আসে। এছাড়া সর্বদাই তাদের সঙ্গে সব বিষয়ে আলোচনা করে পড়াশোনার ব্যাপারে একটি কৌশলগত এবং কার্যকর পদ্ধতি বের করে সামনে আগানোর চেষ্টা করেছি বলে এই কঠিন রাস্তা যেন আরও সহজতর হয়ে ওঠে। তাছাড়া বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় সবচেয়ে বেশি সাহায্য পাওয়া প্ল্যাটফর্ম লাইভএমসিকিউয়ের কথা না উল্লেখ করলেই নয়। এই প্ল্যাটফর্ম আমার পড়াশোনায় প্রতিনিয়ত শান দিয়ে ধারালো করেছে, আমাকে মজবুত করেছে, তাদের নানাবিধ কৌশলের মধ্য দিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে শিখিয়েছে।

জাগো নিউজ: কারো কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন কি?
অর্ভ নগভিত শুভ ঔষ্ণিক: সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা পেয়েছি এমন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব হলেন আমার বাবা, মা এবং একজন প্রিয় মানুষ। মাঝে মাঝেই আমি হার মানলেও তাদের চোখে কোনোদিন আস্থা আর বিশ্বাসের বিন্দুপরিমাণ কমতি দেখিনি। আমার প্রতি তাদের অগাধ ধৈর্য, আস্থা আর বিশ্বাস আমাকে প্রতিনিয়ত অনুপ্রাণিত করেছে। এ যেন প্রচণ্ড ঝড়-তুফানে চারপাশ উড়ে যাওয়া, ভেঙে চুরমার হয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে অটল-দৃঢ়দেহী ছয়টি চোখ আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কত বিশ্বাস সে চোখে! আমি কাঁপছি, নড়ছি কিন্তু আমার সামনে দাঁড়ানো তিনটি শরীর এক চুল-পরিমাণ কাঁপছে না।

জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
অর্ভ নগভিত শুভ ঔষ্ণিক: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে এই মুহূর্তে ভাবছি না। তবে যদি সব ঠিক থাকে এবং অদূর ভবিষ্যতে যখন কর্মক্ষেত্রে পদার্পণ করবো; তখন মনেপ্রাণে চেষ্টা করবো যেন আমার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগ ও স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকার মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখতে পারি। সম্মানিত গুরুজন আমাকে যেরকম শিক্ষা দিয়েছেন; সেরকম আদর্শ নিয়েই যেন ভবিষ্যৎ পথচলায় এগিয়ে যেতে পারি। ভালোবাসার বিনিময়ের মধ্য দিয়ে সবার মাঝে সুখে-দুঃখে বেঁচে থাকতে চাই, এই তো।

এসইউ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।