আদালতে কোরআন চাইলেন কামাল, পুলিশকে সাবেক আইজিপির ধমক

সকাল তখন ঠিক ১০টা। আকাশে জমে থাকা মেঘের আড়াল ভেদ করে সূর্য উঁকি দিচ্ছে ঢাকার আদালতপাড়ায়। ঠিক তখন ঢাকার সিএমএম আদালতের হাজতখানা থেকে কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় একে একে বের হয়ে এলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক শিল্পপ্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন ও সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক। সবার দুই হাতে হাতকড়া লাগিয়ে পিছমোড়া করে বাঁধা। এর মধ্যে কামাল আহমেদ মজুমদার ব্যতীত সব আসামির মাথায় পুলিশের হেলমেট ও বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট দেখা যায়। সবাই মাথা নিচু করে সামনের দিকে এগিয়ে যান।
এরপর আদালতের কাঠগড়ায় রাখা হলে আনিসুল হক, সালমান এফ রহমান, কামাল মজুমদার ও কামরুল ইসলাম তাদের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতে থাকেন। তবে এ সময় নীরব ভূমিকায় দেখা যায় পুলিশের সাবেক দুই প্রধান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন ও শহীদুল হককে।
আদালতে দাঁড়িয়ে কোরআন চান কামাল মজুমদার
আসামিদের কাঠগড়ায় তোলার কিছু সময় পরই ১০টা ৭ মিনিটে এজলাসে আসেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট পার্থ ভদ্র। এ সময় কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বিচারকের উদ্দেশ্যে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কারাগারে ডিজিটাল কোরআন চেয়ে আকুতি প্রকাশ করেন সাবেক শিল্পপ্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার।
তিনি বলেন, আপনার (বিচারক) কাছে আমার আবেদন, আপনার কাছে সুবিচার চাই। একের পর এক মামলা দিয়ে আমাকে অত্যাচার করা হচ্ছে। এখন নাতি-নাতনিদের নিয়ে খেলা করার সময়। কিন্তু জেলখানায় অত্যাচার করা হচ্ছে। এখন আল্লাহকে ডাকা ছাড়া কোনো উপায় নেই। কারা কর্তৃপক্ষ আমাকে ডিজিটাল কোরআন ও ডায়াবেটিস মাপার যন্ত্র দিচ্ছে না। আমাকে ডিজিটাল কোরআন, ডায়াবেটিসের ওষুধ ও ডায়াবেটিস মাপার যন্ত্র দেওয়া হোক।
- আরও পড়ুন
আওয়ামী লীগ আর করবো না, কাঠগড়ায় কাঁদলেন কামাল মজুমদার
কুমিল্লা সিটির সাবেক মেয়র সূচনার ব্যাংক হিসাব জব্দ
মমতাজের ব্যাংক হিসাব জব্দ
এরপর কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, আমার ৭৬ বছর বয়স, আমি ডায়াবেটিসের রোগী। চোখের ৭০ শতাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। আমার পরিবার সম্পর্কে কোনো খোঁজখবর নিতে পারছি না। তাদের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আর আওয়ামী লীগের রাজনীতি করবো না। আমি আওয়ামী লীগের কোনো পদে নেই। প্রাথমিক সদস্যপদ থেকেও পদত্যাগ করলাম।
এরপর কাঠগড়া থেকে নামার সময় কামাল আহমেদ মজুমদার সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, রাজনীতি থেকে একেবারে অব্যাহতি, আওয়ামী লীগের সাধারণ সদস্যপদ থেকেও অব্যাহতি। আমার দলীয় কোনো পদ নেই। ৭৬ বছর বয়সে রাজনীতি করা যায় না। আমরা চাই নতুন নেতৃত্ব আসুক। এরপর তাকেসহ অন্য আসামিদের সিএমএম আদালতের হাজতখানা প্রবেশ করানো হয়।
কাঠগড়ায় পুলিশের সঙ্গে ঝগড়ায় জড়ান সাবেক আইজিপি
এদিন কাফরুল থানার একটি হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানোর ওপর শুনানি শেষে কাঠগড়া থেকে সব আসামিকে একে একে নিচে নামানো হচ্ছিল। তবে বিপত্তি বাধলো পুলিশের সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হককে নামানোর সময়। তখন শহীদুল হক আদালতের পুলিশ পরিদর্শক ফারুককে উদ্দেশ্য করে বলেন, তিনি তার শ্যালকের সঙ্গে দেখা করতে চান। তবে তার এ আবেদনে সাঁয় দেননি পুলিশ পরিদর্শক ফারুক। ফলে ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশকে উদ্দেশ্য করে ধমক দেন সাবেক আইজিপি শহীদুল হক।
এ সময় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা শহীদুল হককে বলেন, যার সঙ্গেই কথা বলেন না কেন, আদালতের অনুমতি নিতে হবে। পরে শহীদুল হক আক্ষেপের সঙ্গে বলেন, ‘পুলিশের জন্য কি না করেছি। পরে শহীদুল হকসহ অন্য আসামিদের আদালতের হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
এ বিষয়ে পুলিশ পরিদর্শক ফারুক জাগো নিউজকে বলেন, সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল তার শ্যালকের সঙ্গে দেখা করতে চান। তবে আমরা সে সুযোগ দেইনি।
সোমবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকেন্দ্রিক কাফরুল থানার এক হত্যা মামলায় শেখ হাসিনার সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদারসহ ছয়জনকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত। গ্রেফতার দেখানো অন্যরা হলেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন ও সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট পার্থ ভদ্র তাদের গ্রেফতার দেখানোর আদেশ দেন। এছাড়া মোহাম্মদপুর থানার আরেক হত্যা মামলায় আনিসুল হককে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
গত ১৩ আগস্ট গোপন তথ্যের ভিত্তিতে নৌপথে পলায়নরত অবস্থায় রাজধানীর সদরঘাট এলাকা থেকে সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া গত ১৮ নভেম্বর রাজধানীর উত্তরা-১২ নম্বর সেক্টর থেকে কামরুল ইসলামকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এদিকে গত ১৯ অক্টোবর রাতে রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে কামাল আহমেদ মজুমদারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত ৩ সেপ্টেম্বর রাতে মামুনকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। এছাড়া গত ৩ সেপ্টেম্বর রাতে শহীদুল হককে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
এমআইএন/এমআরএম/জেআইএম