আদালতে অভিযোগপত্র

কিশোরীর ফাঁদে ফেলে ছিনতাই করেন ছাত্রলীগ নেতা

মিনহাজুল ইসলাম
মিনহাজুল ইসলাম মিনহাজুল ইসলাম , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১:১২ এএম, ১৬ জুন ২০২৫
নড়াইল জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজল আহমেদ শ্রাবণ। ছবি: সংগৃহীত

১০ মাস আগে নিজের অনুগত এক কিশোরীকে দিয়ে এক প্রবাসীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ডেকে আনেন নড়াইল জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজল আহমেদ শ্রাবণ। সঙ্গে ছিলেন চক্রের অন্য সদস্যরা। এরপর সুযোগ বুঝে সেই প্রবাসীকে জিম্মি করে সোনার চেইন ও টাকা ছিনতাই করেন তারা। এসময় ভুক্তভোগী প্রবাসীকে ব্ল্যাকমেইলিং করতে ওই কিশোরীর সঙ্গে ছবি ও ভিডিও করেন শ্রাবণ।

অভিযুক্ত শ্রাবণের বাড়ি নড়াইল পৌরসভার আলাদাতপুরে। তিনি নড়াইল জেলা ছাত্রলীগের বিগত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

বিজ্ঞাপন

শ্রাবণ নড়াইল-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফী বিন মর্তুজার গ্রুপে রাজনীতি করতেন। তিনি গত বছরের জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার ঘটনায় করা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।

প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রবাসীর কাছ থেকে ছিনতাইয়ের ঘটনায় গত বছরের ২১ জুলাই ভুক্তভোগী সৌদি আরব প্রবাসী মো. মশিউল কবীর হৃদয় (২৪) বাদী হয়ে নড়াইল সদর থানায় একটি মামলা করেন। সম্প্রতি এ মামলার তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) শোভন কুমার নাগ। অভিযোগপত্র সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

এ মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন ছাত্রলীগ নেতা সজল আহম্মেদ শ্রাবণ (২৬), নড়াইল পৌরসভার বরাশুলার মো. হৃদয় হোসেন (২৩), দুর্গাপুরের বাসিন্দা মো. শান্ত হোসেন (২৭) ও ভওয়াখালীর উত্তরপাড়ার এক কিশোরী (১৬)। এছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও তিন-চারজনকে আসামি করা হয়।

অভিযোগপত্রে শ্রাবণ, হৃদয় হোসেনসহ তদন্তে পাওয়া দলজিৎপুরের রাকিবুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে। এজাহারভুক্ত আসামি শান্ত হোসেনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এজাহারভুক্ত আসামি এক কিশোরী বয়সে শিশু হওয়ায় তার বিরুদ্ধে আলাদা দোষীপত্র দাখিল করা হয়েছে। শিশু আইনে তার বিচার অনুষ্ঠিত হবে।

অভিযোগপত্রে এজাহারে থাকা ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করেন তদন্ত কর্মকর্তা। মামলাটি বর্তমানে নড়াইল সদর আমলি আদালতের বিচারক মেহেদী হাসানের আদালতে অভিযোগ গঠন শুনানি পর্যায়ে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আসামি ওই কিশোরীর সঙ্গে বাদী মশিউল কবীর হৃদয়ের ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হয়। তাদের মধ্যে প্রায় সময় কথাবার্তা হতো। কথাবার্তার একপর্যায়ে কিশোরী ভুক্তভোগী বাদীকে দেখা করতে বলে। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ১৭ জুলাই বিকেল ৪টার দিকে নড়াইল পৌরসভার দুর্গাপুর রেললাইনের সেতুর পাশে কিশোরীর সঙ্গে দেখা করেন মশিউল। কিশোরী আগে থেকেই জানতো মশিউল একজন সৌদি প্রবাসী। দেখা হওয়ার পর কিশোরী কিছু সময় কথাবার্তা বলে। তারপর পাশে গিয়ে মোবাইল ফোনে কারও সঙ্গে কথা বলে। এর কিছুক্ষণ পর আসামি শ্রাবণ, হৃদয়, শান্তসহ অজ্ঞাতনামা তিন-চারজন চাকু ও লাঠিসোঁটা নিয়ে এসে বাদীকে ঘিরে ধরেন।

এ সময় আসামিরা বলেন, ‘তোর কাছে পূর্বে টাকা-পয়সা ধার চাইছিলাম। কিন্তু তুই আমাদের টাকা-পয়সা দিস নাই।’

কিশোরীর ফাঁদে ফেলে ছিনতাই করেন ছাত্রলীগ নেতা

বিজ্ঞাপন

মশিউল আসামিদের টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে এক নম্বর আসামি শ্রাবণসহ অন্য আসামিরা ভুক্তভোগীকে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুসি মেরে জখম করেন। এতে মশিউল মাটিতে পড়ে যান। আসামি হৃদয় হোসেন তার গলা চেপে ধরে হত্যার চেষ্টা করেন। মশিউল হাত ঝামটি দিয়ে তাকে সরিয়ে দেন। এরপর আসামি হৃদয় হোসেন বাদীর জিন্সের প্যান্টের সামনের ডান পকেটে থাকা ২৫ হাজার টাকা এবং মানিব্যাগে থাকা পাঁচ হাজার ২০০ টাকা বের করে নেন।

এ সময় আসামি সজল আহম্মেদ শ্রাবণ ভুক্তভোগী মশিউল কবীর হৃদয়ের গলায় থাকা ৬০ হাজার টাকা মূল্যের একটি সোনার চেইন নিয়ে নেন এবং কিশোরীর সঙ্গে ভুক্তভোগীর কিছু ছবি ও ভিডিও মোবাইল ফোনে ধারণ করেন। তখন মশিউল বাঁচার জন্য চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসেন। আসামিরা তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

এজাহারে বাদী আরও উল্লেখ করেন, কিশোরী ওই আসামি অন্য আসামিদের পরিচিত এবং তারা একটা সংঘবদ্ধ চক্র। আসামিরা মেয়েদের মাধ্যমে মানুষকে প্রেমের ফাঁদে ফেলেন। এরপর ডেকে এনে ভয়ভীতি দেখিয়ে মারধর করে টাকা-পয়সাসহ অন্যান্য জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেন।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী বাদী মশিউল কবীর হৃদয় বলেন, ‘সজল আহমেদ শ্রাবণের নেতৃত্বে তার সহযোগীরা আমাকে জিম্মি করে মারধর করেন এবং ছিনতাই করেন। আমি তাদের সর্বোচ্চ বিচার চাই, যাতে আর এমন কাজ করার সাহস না পায়।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত আসামি ছাত্রলীগ নেতা সজল আহমেদ শ্রাবণ জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ ঘটনাটি মিথ্যা। চার্জশিটে আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সঠিক নয়। এটা সবাই জানে।’

অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘এ মামলা দায়েরের সময় এজাহারে আমার নাম ছিল না। পরে অভিযোগপত্রে আমাকে আসামি করা হয়েছে। মূল ঘটনা হলো, শ্রাবণসহ অন্য আসামিরা ছাত্রলীগের নেতা। তখন স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল। তারা ওই ভুক্তভোগী ছেলেকে ধরে এনে রেললাইন সংলগ্ন আমার বাসার সামনে আনে। পরে ভয়ভীতি দেখিয়ে আমার বাসার মধ্যে ঢুকিয়ে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে অর্থ আদায় করে। আমি তখন বাসায় ঢুকতে বাধা দিলে অন্য আসামিরা দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। আমার কোনো দোষ নেই।’

বিজ্ঞাপন

জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নড়াইল সদর থানার এসআই শোভন কুমার নাগ জাগো নিউজকে বলেন, ‘চার্জশিটে যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে চার্জশিটেই বিস্তারিত বর্ণনা করা আছে।’

এমআইএন/এমএমএআর/এমএফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।