৫ আগস্টের পর বাহিনী পুনর্গঠনে মনোনিবেশ করেন সুব্রত বাইন

মিনহাজুল ইসলাম
মিনহাজুল ইসলাম মিনহাজুল ইসলাম , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:৫৩ এএম, ১৪ জুলাই ২০২৫
শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন

 

• ভারত থেকে দেশে ফিরে করেন চাঁদাবাজি
• বাহিনী পুনর্গঠনে নতুন সদস্য সংগ্রহ
• মামলা দায়েরের মাত্র ৪০ দিনে অভিযোগপত্র

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর ভারত থেকে দেশে ফিরে রাজধানীতে পুনরায় আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে বাহিনী পুনর্গঠনের কাজে হাত দেন শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন। এ লক্ষ্যে নতুন সদস্য সংগ্রহ করেন তিনি। বাহিনী শক্তিশালী করার লক্ষ্যে শুরু করেন অস্ত্র সংগ্রহ। ঢাকায় অস্ত্রের দাম বেশি হওয়ায় সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে সংগ্রহের জন্য কুষ্টিয়ায় অবস্থান করেন তিনি। আর এ কাজে তাকে সহযোগিতা করেন আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী মোল্লা মাসুদ।

অস্ত্র মামলায় সুব্রত বাইনসহ চার সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে আদালতে দাখিল করা অভিযোগপত্রে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়। গত ৭ জুলাই রাজধানীর হাতিরঝিল থানার অস্ত্র মামলায় এ অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের পরিদর্শক মো. আমিনুল ইসলাম।

মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিরা হলেন- সুব্রত বাইন ওরফে মো. ফাতেহ আলী (৬১), তার সহযোগী আবু রাসেল মাসুদ ওরফে মোল্লা মাসুদ (৫৩), এম এ এস শরীফ (২৫) ও মো. আরাফাত ইবনে নাসির (৪৩)।

রোববার (১৩ জুলাই) ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াহিদুজ্জামান মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে বদলির আদেশ দেন। মামলার অভিযোগপত্রে আসামিদের বিরুদ্ধে ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনের ১৯ (ক) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।অভিযোগপত্রে মোট ১৩ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, সুব্রত বাইন প্রায় ২০ থেকে ২৫ বছর ধরে ভারতে অবস্থান করছিল। ২০২৪ সালে ছাত্র জনতার আন্দোলনে সরকারের পতন হলে দেশে প্রবেশ করেন। এরপর ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় তার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় এবং সে তার অনুসারীদের দ্বারা বাহিনী পুনর্গঠনের কাজে মনোনিবেশ করেন।

এরই ধারাবাহিকতায় সদস্য ও অস্ত্র সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত হন। ঢাকায় ভালোমানের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যয়বহুল বিধায় সীমান্ত এলাকার কম দামে অস্ত্র সংগ্রহের জন্য কুষ্টিয়ায় অবস্থান নেন। মোল্লা মাসুদও তার সঙ্গে কুষ্টিয়ায় যোগ দেন। সেখানে অবস্থানকালে গত ২৭ মে ভোর ৫টা হতে সকাল ৮ টা পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করে সেনাবাহিনী।


জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, সহযোগী এস এম শরীফের হাতিরঝিলের বাড়িতে নিয়মিত মিটিং করেন তারা। সেখানে তাদের ব্যবহৃত অস্ত্র, গুলি অপরাধ সংগঠনের বিভিন্ন সরঞ্জামাদি রাখা আছে বলে তথ্য পায় পুলিশ।

পরে সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হাতিরঝিল থানার নতুন রাস্তা এলাকা হতে একইদিন বিকেল অনুমান ৩টার দিকে শরীফ ও আসামি মো. আরাফাত ইবনে নাসিরকে আটক করা হয়। অভিযানের সময় তাদের কাছ থেকে পাঁচটি বিদেশি পিস্তল, ১০টি ম্যাগজিন, ৫৩ রাউন্ড গুলি এবং একটি স্যাটেলাইট ফোন উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ২৮ মে অস্ত্র আইনে একটি মামলা করেন হাতিরঝিল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আসাদুজ্জামান।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০০১ সালে সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদসহ ২৩ জন শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম ঘোষণা করে এবং তাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা সন্ত্রাসী বাহিনী সেভেন স্টার গ্রুপ পরিচালনা করতো। সুব্রত বাইন তৎকালীন সময়ে খুন-ডাকাতি সংঘটনের মধ্যদিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করে। পরে ভারত পালিয়ে যায়। ৫ আগস্টের পর দেশে ফিসে পুনরায় খুন, চাঁদাবাজি শুরু করেন।

আদালতের হাতিরঝিল থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখার এএসআই আসমা আক্তার বলেন, মামলার অভিযোগপত্র ম্যাজিস্ট্রেট আদালত গ্রহণ করেছেন। একই সঙ্গে বিচারের জন্য মামলাটি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে বদলির আদেশ দিয়েছেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মো. আমিনুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, গ্রেফতারের সময় আসামিদের কাছ থেকে বেশকিছু আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়। পরে তদন্তের যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।

অভিযোগপত্র সম্পর্কে জানতে চাইলে সুব্রত বাইনের আইনজীবী বাদল মিয়া জানান, তিনি এখনো অভিযোগপত্র হাতে পাননি। এ বিষয়ে পরে মন্তব্য করবেন।

এমআইএন/এমএএইচ/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।