ট্রাইব্যুনালে চিকিৎসকের জবানবন্দি

১১ জন দুই চোখ, ৪৯৩ জন এক চোখের দৃষ্টি চিরতরে হারিয়েছেন

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:৫৬ পিএম, ২৫ আগস্ট ২০২৫
ফাইল ছবি

জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ৪৯৩ জন এক চোখের দৃষ্টি চিরতরে হারিয়েছেন। আহত ১১ জন দুই চোখের দৃষ্টি চিরতরে হারিয়েছেন। আর ২৮ জন গুরুতর দুই চোখের দৃষ্টিস্বল্পতায় ভুগছেন। একই সঙ্গে ৪৭ জন এক চোখে দৃষ্টিস্বল্পতায় ভুগছেন।

সোমবার (২৫ আগস্ট) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেওয়া জবানবন্দিতে এসব কথা বলেন হাসপাতালের রেটিনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাকিয়া সুলতানা নীলা। ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্যানেলে এ সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।

এদিন গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে ২১তম সাক্ষী হিসেবে জাকিয়া সুলতানা ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দেন। অন্য দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।

এদিন সকালে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয় আসামি থেকে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে। এরপর দুপুরে মামলার সাক্ষী হিসেবে ডা. জাকিয়া সুলতানা নীলা তার সাক্ষ্য শেষ করেন।

ডা. জাকিয়া সুলতানা নীলা জবানবন্দিতে বলেন, গত বছর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ১৭ জুলাই থেকে আমাদের হাসপাতালে রোগী আসা শুরু হয়। ওইদিন আমরা পিলেটবিদ্ধ পাঁচজন রোগী পেয়েছিলাম। ১৮ জুলাই ছিল একটি রক্তস্নাত দিন। ওইদিন দুপুরের দিকে আমার কাছে খবর আসে হাসপাতালে অনেক আহত রোগী এসেছে। ওইদিন প্রায় একশ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। এর বাইরে আনুমানিক আরও একশ রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে আমি জরুরি বিভাগে এসে একটি ভয়াবহ চিত্র দেখতে পাই।

তিনি বলেন, যারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন তাদের বয়স ১৪ থেকে ২৫ এর মধ্যে। তাদের কেউ কেউ এক হাত দিয়ে এক চোখ, দুই হাত দিয়ে দুই চোখ ধরেছিল। ওইদিন রাত ৯টায় আমরা ১০টা টেবিলে অপারেশন করতে থাকি। ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই প্রায় একই চিত্র দেখতে পাই। ওইদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১০ পর্যন্ত ১০টা টেবিলে অস্ত্রোপাচার চলতে থাকে।

জবানবন্দিতে ডা. জাকিয়া বলেন, আমাদের হাসপাতালে যারা চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন তাদের অধিকাংশ পিলেট ও বুলেট দ্বারা আহত হন। অধিকাংশ রোগীর কর্নিয়া ছিদ্র হয়ে গেছে, তাদের চোখের ভেতরের সাদা অংশ ছিদ্র হয়ে যায়, অনেকের চোখ ফেটে গিয়েছিল। চোখের রেটিনায় আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। ৪, ৫ ও ৬ আগস্ট আমরা অসংখ্য রোগী গ্রহণ করি এবং তাদের চোখে অপারেশন করা হয়।

ডা. জাকিয়া সুলতানা নীলা বলেন, ওই সময় রোগীরা ভীতসন্ত্রস্ত ছিলেন। নিরাপত্তার কারণে অনেক রোগী তাদের নাম-ঠিকানা গোপন করে ছদ্মনাম দিয়েছেন। মোবাইল নম্বর ভুল দিয়েছেন, তাদের পরিচয় ভুল দিয়েছেন। আন্দোলনে আহত ৮৬৪ জন হাসপাতালটিতে ভর্তি হয়েছিলেন।

এফএইচ/বিএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।