মিডিয়ায় যেভাবে ঢাকডোল পেটায়, তদন্তে তার প্রতিফলন নেই: হাইকোর্ট
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা নিয়ে গণমাধ্যমে যেভাবে ঢাকডোল পেটানো হয়, তদন্তে সেভাবে তার প্রতিফলন ঘটছে না বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। এ জন্য যারা তদন্ত কর্মকর্তা হবেন এ বিষয়ে তাদের প্রশিক্ষণ দিতে পুলিশ বিভাগের প্রধানকে নির্দেশনা দেয়ার কথাও জানান আদালত।
বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন। আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সরোয়ার হোসেন বাপ্পী।
ফটোসাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া দুই মামলায় জামিন শুনানির এক পর্যায়ে আদালত বলেন, ‘দেখা যায় কিছু কিছু বিষয়ে মিডিয়ায় এমন ঢাকডোল পেটাবেন, অথচ মামলার তদন্তে তার প্রতিফলন থাকে না।’
আদালত বলেন, ‘আমরা পুলিশ প্রধানকে (আইজিপি) একটা নির্দেশনা দেব, বিশেষ করে যখন নতুন কোনো বিশেষ আইন আসে, তখন তদন্তকারী কর্মকর্তাদের যেন এই সব বিষয়ে তারা কীভাবে তদন্ত করবেন সে বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।’
এরপর আদালত সাংবাদিক কাজলের দুই মামলায় জামিন মঞ্জুরের আদেশ দেন। এদিকে শুনানিতে সাংবাদিক কাজলের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘তদন্তকারী কর্মকর্তা এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে তদন্ত করছেন কি-না। কেননা আইনটা এত শক্ত যে এর মাধ্যমে আমাকে জেলে রাখা হলো।’
তিনি বলেন, ‘এই আইনের ৪০ ধারায় স্পষ্ট করে তদন্তের সময়সীমার কথা বলা আছে। অথচ ট্রাইব্যুনাল থেকে অনুমতি না নিয়েই সময়ক্ষেপণ করছেন (তদন্তকারী কর্মকর্তা)।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বলা আছে, ৬০ দিনের মধ্যে এ মামলার তদন্ত শেষ করতে হবে। ঊর্ধ্বতন কেউ সময়ের আবেদন করলে আবার ১৫ দিন বাড়িয়ে দেবেন ট্রাইব্যুনাল।
আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সাংবাদিক কাজল দীর্ঘদিন ধরে জেলে রয়েছেন। এর আগে ৫৩ দিন তাকে গুম করে রাখা হয়েছিল। এরপর ৩ মে তাকে এ দুই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। এরপর থেকে তিনি জেলেই আছেন।’
এর আগে শেরেবাংলা নগর থানায় দায়ের হওয়া মামলায়ও তাকে জামিন দেন আদালত। ফলে তার কারামুক্তিতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় দায়ের হওয়া মামলায় গত ২৪ নভেম্বর ফটোসাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলকে জামিন দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ওই দিন হাজারীবাগ ও কামরাঙ্গীরচর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করেন আদালত। কিন্তু আদালতের আদেশ সত্ত্বেও তদন্ত কর্মকর্তা হাজির না হওয়ায় হাইকোর্ট অসন্তোষ প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে ফের তলব করা হয়।
গত ৯ মার্চ রাজধানী ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় কাজলসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে প্রথম মামলাটি করেন মাগুরা-১ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শেখর। এরপর ১০ ও ১১ মার্চ রাজধানী হাজারীবাগ ও কামরাঙ্গীরচর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আরও দুটি মামলা হয়। এর মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ১১ মার্চ একটি মামলা করেন যুব মহিলা লীগের নেত্রী ইয়াসমিন আরা ওরফে বেলী। আরেকটি মামলা করেন সুমাইয়া চৌধুরী বন্যা।
গত ১৮ মার্চ রাতে কাজলকে অপহরণ করা হয়েছে অভিযোগ এনে চকবাজার থানায় মামলা করেন তার ছেলে মনোরম পলক। ঢাকা থেকে নিখোঁজের ৫৩ দিন পর গত ২ মে রাতে যশোরের বেনাপোলের ভারতীয় সীমান্ত সাদিপুর থেকে অনুপ্রবেশের দায়ে ফটোসাংবাদিক ও দৈনিক পক্ষকালের সম্পাদক শফিকুল ইসলাম কাজলকে আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
এফএইচ/এমআরআর/জেআইএম