পিএইচডি ডিগ্রি জালিয়াতি রোধে হাইকোর্টের কমিটি গঠন

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:০৮ পিএম, ১৪ আগস্ট ২০২২

পিএইচডি ও সমমানের ডিগ্রি কীভাবে অনুমোদন হয়, সেগুলো যথাযথ আইন মেনে হয়েছে কি না তা জানতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি কমিটি করেছেন হাইকোর্ট।

ওই কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, শাহ জালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালও রয়েছেন।

এছাড়া কমিটিতে ঢাবির কম্পিউটার বিজ্ঞানের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সাইফুদ্দিন মো. তারেক, ঢাবির আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. নাকিব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ, ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, বুয়েটের কম্পিউটার বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাজনীন ও একই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মোস্তফা আকবরকে রাখা হয়েছে।

আগামী তিন মাসের মধ্যে কমিটিকে নীতিমালা করে প্রতিবেদন আকারে আদালতকে জানাতে বলা হয়েছে।

রোববার (১৪ আগস্ট) হাইকোর্টের বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রিটকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান লিংকন।

এর আগে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ও সমমানের ডিগ্রি কীভাবে অনুমোদন করা হয়, সেগুলো আইন মেনে হয়েছে কি না তা জানতে চেয়েছিলেন হাইকোর্ট। গত জানুয়ারি মাসে জানানো হয়েছিল এ বিষয়ে কমিটি করা হবে। তারই ধারাবাহিকতায় হাইকোর্টকে সাতজনের নামের তালিকা দেওয়া। পরে আদালত কমিটি গঠন করেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মো. মনিরুজ্জামান লিংকন। তার সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. নাজমুল হক লাবলু। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।

এর আগে ২০২১ সালে পিএইচডি জালিয়াতি রোধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছিল।

ওই সময় ইউজিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, দেশে ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজস্ব আইন, বিধিবিধান ও ব্যবস্থাপনায় পিএইচডি সমমানের ডিগ্রি প্রদান করে থাকে। এ ধরনের ডিগ্রি প্রদানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কোনো ভূমিকা পালন করে না, বা পালন করার সুযোগ নেই। অন্যদিকে দেশে ১০৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। তার মধ্যে ৯৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কমিশন থেকে দেশের কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে পিএইচডি বা সমমানের কোনো ডিগ্রির প্রোগ্রাম, কোর্স, সিলেবাস বা শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন দেওয়া হয়নি।

২০২০ সালের ২১ জানুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকে ‘ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি গবেষণার ৯৮% নকল’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ৯৮ শতাংশ হুবহু নকল পিএইচডি থিসিসের মাধ্যমে ২০১৫ সালে ‘ডক্টরেট’ ডিগ্রি নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবুল কালাম লুৎফুল কবীর। ২০১২ সালে রাজধানীর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী-গবেষকের জমা দেওয়া একটি ‘স্টুডেন্ট পেপারস’-এর সঙ্গে লুৎফুল কবীরের নিবন্ধের ৯৮ শতাংশ হুবহু মিল রয়েছে। এটিসহ মোট ১৭টি জার্নাল, আর্টিকেল ও গবেষণাপত্রের সঙ্গে নিবন্ধটির বিভিন্ন অংশের উল্লেখযোগ্য মিল পাওয়া গেছে, যেগুলোর সবই লুৎফুল কবীরের অভিসন্দর্ভের (থিসিসে) আগে প্রকাশিত হয়েছে।’

পরে ওই সংবাদ প্রতিবেদনটি সংযুক্ত করে ২৬ জানুয়ারি হাইকোর্টে রিট করেন আইনজীবী মনিরুজ্জামান লিংকন। রিটে পিএইচডি গবেষণা অভিসন্দর্ভের (থিসিস) অনুমোদনের আগে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র (এনওসি) নেওয়ার বিধান করার নির্দেশনাও চাওয়া হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সচিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান কাজী শহীদুল্লাহকে রিটে বিবাদী করা হয়।

রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন যে, দেশের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি বা সমমানের ডিগ্রি কীভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়, সে বিষয়ে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করতে।

এফএইচ/জেডএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।