ঢাকাসহ ৫ জেলার অবৈধ ইটভাটা ২ সপ্তাহের মধ্যে উচ্ছেদের নির্দেশ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:৫৮ পিএম, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

বায়ুদূষণ রোধে ঢাকাসহ পাঁচ জেলার সব অবৈধ ইটভাটা দুই সপ্তাহের মধ্যে উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এছাড়া ধুলোবালিময় রাস্তায় ভালো করে পানি ছিটাতে বলেছেন আদালত। একই সঙ্গে নির্মাণকাজ চলা বাড়ি বা রাস্তা এবং মাটি-বালু বহনকারী গাড়িগুলো ঢেকে রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের এসব আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।

আদেশে আদালত ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও গাজীপুর জেলায় থাকা অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ করে দুই সপ্তাহের মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে (ডিজি) প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।

আরও পড়ুন: বনভূমি দখল উচ্ছেদ ও অবৈধ ইটভাটা বন্ধের নির্দেশ ডিসিদের

সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি কেএম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে আজ পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আমাতুল করিম। রিট আবেদনের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

মনজিল মোরসেদ বলেন, শুনানিতে আদালত ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের দেওয়া প্রতিবেদনে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। আদালত বলেন, সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্টদের ডাকতে এখন লজ্জা লাগে। ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ছয়-সাতবার দূষণরোধে বিভিন্ন আদেশ দিলেও কোনো কাজ হচ্ছে না।

আরও পড়ুন: ঢাকার আশপাশের অবৈধ ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

তিনি বলেন,২০২১ সালে হাইকোর্টে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে ১০০টির বেশি অবৈধ ইটভাটা থাকার কথা বলা হয়। উচ্ছেদের পর এখনো (২০২৩ সালে) ২০০টির বেশি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে। তাই দুই সিটি করপোরেশন ও পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের আবারও দূষণরোধে আদেশ কার্যকর করে দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে হাইকোর্ট নির্দেশ দেন।

রিটকারী এই আইনজীবী আরও বলেন, আজ সিটি করপোরেশন যে প্রতিবেদন দিয়েছে তা ‘যথেষ্ট নয়’ বলেছেন আদালত। কয়েকটা গাড়ির কালো ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু অবৈধ ইটভাটার উচ্ছেদে ব্যবস্থা নেয়নি। তাই দুই সপ্তাহের মধ্যে ঢাকার আশপাশের পাঁচ জেলায় অবৈধ ইটাভাটা বন্ধ করে পরিবেশ অধিদপ্তরকে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন। সিটি করপোরেশনকে বলেছেন সড়কে পর্যাপ্ত পানি ছিটাতে। ঢাকা শহরের মধ্যে বালু বা মাটি বহনকারী ট্রাকগুলো ঢেকে পরিবহন করা, যেসব জায়গায় নির্মাণকাজ চলছে সেসব জায়গা ঢেকে রাখাসহ আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন: অবৈধ ইটভাটা গুঁড়িয়ে দিলো পরিবেশ অধিদপ্তর

এর আগে বায়ুদূষণ রোধে ৯ দফা নির্দেশনা দিয়ে ২০২০ সালে রায় দিয়েছিলেন উচ্চ আদালত। ৯ দফার মধ্যে ছিল-

১. ঢাকা শহরের মধ্যে বালি বা মাটি বহনকারী ট্রাকগুলোকে ঢেকে পরিবহন করতে হবে।

২. যেসব জায়গায় নির্মাণকাজ চলছে সেসব জায়গা ঠিকাদাররা ঢেকে রাখবে।

৩. এছাড়া ঢাকার সড়কগুলোতে পানি ছিটানোর যে নির্দেশ ছিলো, সে নির্দেশ অনুযায়ী যেসব জায়গায় এখনো পানি ছিটানো হচ্ছে না, সেসব এলাকায় পানি ছিটানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

৪. সড়কের মেগা প্রজেক্টের নির্মাণকাজ এবং কার্পেটিং যেসব কাজ চলছে, যেসব কাজ যেন আইন কানুন এবং চুক্তির টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন মেনে করা হয় সেটা নিশ্চিত করার নির্দেশ।

৫. যেসব গাড়ি কলো ধোঁয়া ছাড়ে সেগুলো জব্দ করতে বলা হয়েছে।

৬. সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ অনুযায়ী রাস্তায় চলাচলকারী গাড়ির ইকোনমিক লাইফ নির্ধারণ করতে হবে এবং যেসব গাড়ি পুরোনো হয়ে গেছে সেগুলো চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের নির্দেশ।

৭. লাইসেন্সবিহীনভাবে চলা ইটভাটাগুলোর মধ্যে যেগুলো এখনো বন্ধ করা হয়নি, সেগুলো বন্ধ করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ।

৮. পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া টায়ার পোড়ানো এবং ব্যাটারি রিসাইকিলিং বন্ধের নির্দেশ।

৯. মার্কেট ও দোকানের বর্জ্য প্যাকেট করে রাখতে এবং তা মার্কেট ও দোকান বন্ধের পরে সিটি করপোরেশনকে অপসারণ করার নির্দেশ।

আরও পড়ুন: সব অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধে ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টের নির্দেশ

এই ৯ দফা বাস্তবায়নের নির্দেশনা চেয়ে গত ৩০ জানুয়ারি হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

এর পরদিন ৩১ জানুয়ারি উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসারে ঢাকার বায়ুদূষণে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। সেই আদেশ অনুযায়ী গত ৫ ফেব্রুয়ারি পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। ওই প্রতিবেদন দেখে বায়ুদূষণ রোধে আদেশ বাস্তবায়নে দুই সপ্তাহ সময় দেন হাইকোর্ট।

‘বছরে ৩১৭ দিন মারাত্মক দূষিত থাকে ঢাকার বায়ু’ শিরোনামে গত ৩০ জানুয়ারি গণমাধ্যমে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এতে বলা হয়, দূষণের মাত্রা বিবেচনায় বছরের বেশিরভাগ সময় ‘অস্বাস্থ্যকর’ থাকে ঢাকার বাতাস। মাঝেমধ্যে এটা ‘বিপজ্জনক’ পর্যায়ে গিয়ে ঠেকে। বিশেষত শীতকালে বায়ুদূষণ পরিস্থিতি থাকে সবচেয়ে খারাপ। ৪৮ দিন ছাড়া বছরের বাকি সময় ঢাকার বাতাস বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্মল বায়ুর মানমাত্রার চেয়ে খারাপ থাকে।

আরও পড়ুন: নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই চলছে ৭০ শতাংশ ইটভাটা

এক গবেষণায় উঠে এসেছে, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে শীতকালে ঢাকার বাতাস ১৬ গুণ বেশি দূষিত থাকছে।

মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) এর করা এক রিটের ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি বায়ুদূষণ রোধে ৯ দফা নির্দেশনাসহ আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।

তখন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষে আইনজীবী আমাতুল করিম, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষে আইনজীবী তৌফিক ইনাম ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফরিদা ইয়াসমিন।

এফএইচ/এমকেআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।