সুলতানার সুরতহাল রিপোর্টে আঘাতের চিহ্ন নেই: অ্যাটর্নি জেনারেল

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১:৫০ পিএম, ২৮ মার্চ ২০২৩

নওগাঁ শহর থেকে আটক করার পর র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) হেফাজতে মারা যাওয়া সুলতানা জেসমিনের (৪৫) সুরতহাল রিপোর্টে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ( এএম) আমিন উদ্দিন।

এ ঘটনায় উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি দিয়ে তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের প্রথম দিনের শুনানি শেষে মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেছেন তিনি।

আরও পড়ুন>> হাইকোর্টে সুরতহাল-ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন তলব

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ডেইলি স্টারের প্রতিবেদন যুক্ত করে এক আইনজীবী জনস্বার্থে মামলা ফাইল করেছেন। তার (রিটকারী আইনজীবী) বক্তব্য ছিল, র‌্যাব ২৪ ঘণ্টা তাকে (সুলতানা জেসমিন) হেফাজতে রেখে দিয়েছে। যেটা আইনবিরোধী এবং তাকে টর্চার করে মেরে ফেলা হয়েছে। আমি আদালতকে দেখালাম ২৪ ঘণ্টার অভিযোগ সম্পূর্ণভাবে অসত্য বক্তব্য। রেকর্ড অনুযায়ী গত ২২ মার্চ ১১টা ৪০ মিনিটে তাকে আটক করা হয়। পত্রিকার রিপোর্ট হয় ওই দিন রাত ১০টায়। আর রাত ১টা ১৫ মিনিটের দিকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। কারণ তাকে আটক করার পর মোবাইলের রেকর্ড অর্থাৎ আরেকজনের নামে আইডি ব্যবহার করে অনৈতিক কাজ করছিলেন। সেই মোবাইল ফোন উদ্ধার করে দোকানে নিয়ে তথ্য-উপাত্ত বের করা হয়। তখন এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি অসুস্থবোধ করেন। এরপর তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়।

আরও পড়ুন>> উচ্চ রক্তচাপে জেসমিনের মৃত্যু: হাইকোর্টে প্রতিবেদন

এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, তার (সুলতানা জেসমিন) সুরতহাল রিপোর্টের কোথাও কোনো আঘাতের চিহ্নের কথা নেই। আমি আদালতকে বলেছি, ময়নাতদন্ত রিপোর্টটা আসার পর দেখার জন্য। আদালত আগামী ৫ এপ্রিল (বুধবার) পরবর্তী শুনানির জন্য দিন রেখেছেন। আদালত বলেছেন, ওই দিন দুপুর ২টার সময় শুনবেন। এর মধ্যে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এনে আমাকে উপস্থাপন করতে নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত।

এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, র‌্যাব যে আটক করতে পারে, সেটা তো আইনে আছে। মূল কথা হচ্ছে, পোস্টমর্টেম রিপোর্ট স্বাভাবিক এলে এক প্রশ্ন, আর অস্বাভাবিক এলে আরেক প্রশ্ন আসবে।

তিনি বলেন, আমি আদালতে বলেছি, এ ধরনের মামলা (রিট) করে কোনো মানুষকে (আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) যেন হয়রানি না করা হয়। যারা কাজ করে আমরা তাদের যদি হয়রানি করি, তারা কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। আর কেউ যদি সত্যিকার অর্থে দোষী (আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা) হয়, তার বিরুদ্ধে সঠিক ব্যবস্থা নেবে। এ জন্য রাষ্ট্র কখনো পিছপা হবে না।

সুলতানা জেসমিনের নামে প্রতারণার অভিযোগ ছিল। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে আটক করা হয়েছিল।

আরও পড়ুন>> র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার নারীর মৃত্যু

জেসমিন নওগাঁ সদর উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে অফিস সহকারী পদে চাকরি করতেন। র‌্যাবের দাবি, প্রতারণার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত ১৯ মার্চ তাকে আটক করা হয়। আটকের পর অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন তিনি।

নিহত সুলতানার স্বজনদের অভিযোগ, র‌্যাব হেফাজতে নির্যাতনের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা করা হয়নি। তবে, বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে গত ২৭ মার্চ তা আদালতের নজরে আনা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিট করা হয়।

ওই রিটের শুনানি নিয়ে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মামলায় র‌্যাবের গ্রেফতারের এখতিয়ার আছে কি না, তা জানতে চেয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে নওগাঁয় র‌্যাবের হাতে আটকের পর থেকে সুলতানা জেসমিনকে সম্মানজনক জায়গায় (থানা অথবা কার্যালয়ে) নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল কি না এবং হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সময়ে র‌্যাবের আচরণ আইনানুগ হয়েছে কি না, তাও জানতে চেয়েছেন আদালত। পাশাপাশি চূড়ান্ত ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর কারণ কী আসে, সেসব তথ্যও আদালতকে জানাতে বলা হয়েছে।

নওগাঁয় র‌্যাব হেফাজতে ওই নারীর মৃত্যুর ঘটনা তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনোজ কুমার ভৌমিক। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এ এম) আমিন উদ্দিন। উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ (এসকে) মোরশেদ। তাদের সহযোগিতা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল কালাম খান দাউদ ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ সাইফুল আলম।

আগামী ৫ এপ্রিলের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে এসব বিষয়ের তথ্য এবং এ সংক্রান্ত আইনি নথি ও সুলতানা জেসমিনের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। তাই ৫ এপ্রিল মামলার পরবর্তী শুনানির দিন নির্ধারণ করেছেন আদালত।

এফএইচ/এমএএইচ/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।