হাইকোর্ট মাজারে ইফতারে হাজারো মানুষের মিলনমেলা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:১৫ এএম, ৩০ মার্চ ২০২৩

সবসময়ই ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও ভক্ত-আশেকানদের ভিড় থাকে হাইকোর্টের হজরত শাহ খাজা শরফুদ্দিন চিশতী (র.) মাজারে। তবে রমজান এলে মাজারে ভিড় বেড়ে যায় বহুগুণ। প্রতিবারের মতো এবারও রোজাদারদের জন্য ইফতারের ব্যবস্থা করেছে মাজার ও মসজিদ কর্তৃপক্ষ। রমজানে মাজারে সম্পন্ন বিনামূল্যে প্রতিদিন এক হাজার থেকে ১২০০ জন রোজাদারকে ইফতার করানো হয়।

যদিও বছরজুড়েই এ মাজারের লঙ্গরখানায় হাজারো গরিব-দুঃখী, পাগল-ফকির ও অসহায় মানুষ খাবার খান। তবে রমজানে ইফতারের সময় হাইকোর্ট মাজারে ধনী-গরিব, পাগল-ফকিরের মিলনমেলায় পরিণত হয়। একই পাত্রে চার থেকে পাঁচজন ইফতার করেন। সবাই ভক্তি আর শ্রদ্ধা সঙ্গে মাজারে ইফতারি করেন। ইফতারের উপকরণের সঙ্গে থাকে মুড়ি, ছোলা, খেজুর, পেঁয়াজু, চপ, আপেল, মাল্টা, রুহ আফজার শরবত। রমজানে এ ইফতারের উদ্যোগ আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি করেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মাজার ও মসজিদের ভেতরের এ আয়োজনের পাশাপাশি মসজিদ–সংলগ্ন কড়ইগাছতলায় চলে আরেক দলের ইফতারি বিতরণ। মূলত মাজারের ভক্তদের দান ও স্বেচ্ছা উদ্যোগে হয় এ আয়োজন। মসজিদের সামনের রাস্তা হয়ে গেট পর্যন্ত প্রায় তিন শতাধিক রিকশাচালক রিকশার ওপরে বসেই ইফতার করেন।

ইফতারের আগমুহূর্তে মাজার ঘুরে দেখা যায়, মাজার ও মসজিদের ভেতরে ইফতার প্রস্তুত করা হচ্ছে। রয়েছে মুড়ি, ছোলা, খেজুর, পেঁয়াজু, চপ, আপেল, মাল্টা, রুহ আফজার শরবত। সঙ্গে খিচুড়িও রয়েছে।

প্রায় দুই শতাধিক প্লাস্টিকের পাত্রে ইফতার প্রস্তুত করা হচ্ছে। স্বেচ্ছাসেবকরা জানান, প্রতিটি পাত্রে চার থেকে পাঁচজন ইফতার করেন। এছাড়া তাদের জন্য পৃথকভাবে শরবত প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে।

মাজার মসজিদের তদারকির দায়িত্বে থাকা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, গত ৭০ থেকে ৮০ বছর ধরে রমজান মাসজুড়ে ইফতার আয়োজন চলে আসছে। মানুষের দান এবং মাজার কমিটির ব্যবস্থাপনায় রমজানে প্রায় প্রতিদিন এক থেকে দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ ইফতার করেন মাজার মসজিদে।

সামাজিক ও আর্থিক অবস্থান, শ্রেণি–পেশার ভেদাভেদ ভুলে এখানে প্রতিদিনই ইফতার করে থাকেন হাজারো মানুষ। মাজার ও মসজিদ কমপ্লেক্সে রমজানের সন্ধ্যায় দেখা গেছে সম্প্রীতির এমনই উদাহরণ।

যুগের পর যুগ ধরে সম্প্রীতির বন্ধনে বাঁধা এমন ইফতারের আয়োজন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মসজিদ শুধু প্রার্থনার জায়গা নয়। মসজিদে ইফতারের এমন উদ্যোগ মূলত ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্যের সেতু এবং সাম্য বজায় রাখার একটা উদাহরণ। এখান থেকে মানুষ ভ্রাতৃত্ব ও সাম্যের ভিত্তিতে গড়া ধর্মীয় মূল্যবোধের শিক্ষা পায়।

তিনি বলেন, এখানে ইফতারের প্রস্তুতি শুরু হয় বেলা ৩টার পর থেকে। আসরের নামাজ শেষে দোয়া হয়; কখনো থাকে সংক্ষিপ্ত জিকিরের আয়োজন। এসব শেষে সবাই ইফতারের জন্য বসে যান সুশৃঙ্খল ও সারিবদ্ধভাবে। প্রতিদিন এক হাজার ২০০ মানুষের ইফতারের আয়োজন থাকে। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন ৪০ জন। তবে শুক্রবার ও বৃহস্পতিবার মানুষের সংখ্যা দেড় হাজার ছাড়িয়ে যায়। দৈনিক খরচ পড়ে গড়ে ২৫ হাজার টাকা। তবে অনেক ভক্তও এখানে বিভিন্ন ইফতারসামগ্রী দিয়ে থাকেন।

বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান আরও বলেন, খাজা শরফুদ্দীন চিশতী জীবদ্দশায় নিয়ম অভুক্তদের খাবার জোগাতেন। আর সেই থেকে চলছে রোজার মাসে ইফতারের আয়োজন। এখানে ইফতার করতে আসাদের মধ্যে নেই কোনো ভেদাভেদ।

এমনকী সুপ্রিম কোর্ট মাজারে আসা নারীদের জন্য রয়েছে আলাদা ইফতারের ব্যবস্থা। এছাড়া ২০ রমজান থেকে এখানে শেষ রোজা পর্যন্ত সেহেরির ব্যবস্থা থাকবে। ভাসমান মানুষ, শারীরিকভাবে অক্ষম আর খেটে খাওয়াদের জন্য এ ব্যবস্থা ভক্তদের। এ ইফতারে কেউ একবার শামিল হলে ফিরে আসেন বারবার।

যদিও যুগ যুগ ধরে এখানে দুপুরে ও সন্ধ্যায় লঙ্গরখানা চলছে। শুধু গরিব নয়, অনেক ধনী মানুষও এখানে ইফতার করে থাকেন। মাঝেমধ্যে ইফতারের সঙ্গে খিচুড়ি অথবা তেহারিও দেওয়া হয়।

তিনি আরও জানান, প্রায় ১৫০ জন স্বেচ্ছাসেবী এখানে বিনাপয়সায় কাজ করেন। গরিব-দুঃখী ছাড়াও অসহায় মানুষের জন্যই প্রতিবছর এ আয়োজন করা হয়। মূলত মাজার কমিটিই এসব কিছু আয়োজন করে। সুপ্রিম কোর্ট মসজিদ ও মাজার পরিচালনা করতে ৯ সদস্যের একটি কমিটি আছে।

কমিটির প্রধান উপদেষ্টা হলেন দেশের প্রধান বিচারপতি। এছাড়া কমিটিতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের ছয়জন বিচারপতি রয়েছেন। পাশাপাশি আছেন অ্যাটর্নি জেনারেলসহ সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী। সেই সঙ্গে একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল দায়িত্ব পালন করছেন।

বর্তমান কমিটির প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে আছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। আর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান।

সুপ্রিম কোর্ট মাজার ও মসজিদ প্রশাসন কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী, বিচারপতি মো. হাবিবুল গনি, বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান, বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের, অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এ এম) আমিন উদ্দিন, জগলুল হায়দার আফরিক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) নাসির উদ্দিন আহমেদ। এ ছাড়া সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মো. আব্দুর রহমান।

এফএইচ/এমএএইচ/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।